গল্পঃ তুমি রবে নীরবে – রুদ্রাণী মিশ্র

তুমি রবে নীরবে
রুদ্রাণী মিশ্র

অফিস থেকে বাড়ি ফেরার পথে অগ্নিভ যে বাসটি রোজ ধরতে চেষ্টা করে, সেটি আজ তাকে কাঁচকলা দেখিয়ে তার নাকের ডগার সামনে দিয়ে শিঙা বাজিয়ে চলে গেছে। তাই বেচারা রাগে, দুঃখে, অভিমানে পরে-আগত অন্য বাস ধরে বাড়ির অভিমুখে রওনা হয়। অন্য দিন এই বাসে খুব ভিড় থাকে। তা ছাড়া এই বাসটি আগের বাসটির মত তার বাড়ির সামনে দিয়ে যায় না। তাই সে পারতপক্ষে এই বাসে ওঠে না। কিন্তু আজ গত‍্যন্তর নেই।
অন‍্য দিনের মত আজ যখন সে বাসে উঠেছিল, তখন বাসটিতে ভিড় সেরকম না থাকলেও পার্ক সার্কাস থেকে এক দঙ্গল লোকজন উঠে অগ্নিভর আনন্দে এক বালতি জল ঢেলে দিয়েছিল। তবে তার দুই সিটের সঙ্গী হল, এক মহিলা। অবশ্য তাকে মহিলা না বলে রবীন্দ্রনাথের কোনও এক গল্পের স্নিগ্ধ সুদর্শনা নায়িকা বলা যেতেই পারে।
মেয়েটির বয়স মেরে-কেটে সাতাশ থেকে আঠাশ বছর। তার এত স্নিগ্ধ রূপ, আর এক ঢাল কালো চুল, যা আজকাল একেবারেই দেখা যায় না। মেয়েটিকে বেশ আকর্ষণীয় করে তুলেছে। সেই চুল খোলা অবস্থায় মেয়েটি চুলের একপাশে ফুলের মালা ক্লিপ দিয়ে আটকে রেখেছে। তাই সে যখন বেলি ফুলের সুবাস ছড়িয়ে অগ্নিভর পাশে এসে বসলো, অগ্নিভর মন এক অজানা ভালোলাগায় যেন ভরে গেল। মেয়েটিকে দেখে মনে হচ্ছিল, সে অনুষ্ঠান বাড়ি থেকে ফিরছে। তার চোখের পলকে বাসটিতে পুরো মুড়ির টিনের মত ভর্তি হয়ে গেল। তবে এই সুন্দরীর জন্য সে এই ভীড় বাসের কষ্টও সহ‍্য করতে রাজি ছিল।
বৈশাখের শুরুতে সারাদিন সূর্য মামার চোখরাঙানি সহ্য করে অফিসের নানা ঝামেলা, বসের গর্জন, কলিগের কাঠিবাজিকে ডজ করে এগিয়ে যেতে যেতে দিনের শেষে ক্লান্ত মনে সে যখন সন্ধ্যেবেলার ফুরফুরে হাওয়া খেতে খেতে, প্রায় খালি বাসটিতে বসেছিল তখন সে বেশ রিল্যাক্সিং মুডেই ছিল। কিন্তু পার্ক সার্কাসে যখন সে দেখল এক দঙ্গল লোক বাসটিতে উঠছে, তা দেখেই মনটা খিঁচড়ে গেলেও, মিষ্টি বেলি ফুলের গন্ধে সে যেন আবার তরতাজা হয়ে উঠল।
মেয়েটি নিজের শাড়ি গুছিয়ে ব্যাগ কোলে রেখে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বসল। তবু মনে হল মেয়েটি মনে মনে যেন চিন্তিত আর উৎকণ্ঠা তার চোখে মুখে উঁকি দিচ্ছিল। অগ্নিভ আড়চোখে মেয়েটিকে দেখছিল। তবে কিছুক্ষণ আড়চোখে দেখলেও সে নিজেকে চোরা অনুভূতি থেকে বাঁচানোর জন্য সে এবার সোজাসুজি মেয়েটির দিকে তাকাল। মেয়েটির সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মেয়েটিও স্মিত হাসল। অগ্নিভ বেশ একটু অপ্রস্তুত হয়ে একটু হাসির চেষ্টা করলেও, নিজেকে মনে হচ্ছিল যেন চুরির দায়ে ধরা পড়েছে। সে দেখল মেয়েটি দেখতে রবিবার গল্পের বিভা বা শেষের কবিতা উপন্যাসের লাবণ্যের মত হলেও, এই চিন্তিত মুখেও সে বেশ উচ্ছল ও প্রাণচঞ্চল। অগ্নিভ নিজে একটু সহজ হয়ে, উৎকণ্ঠা ও চিন্তার ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল “কী হয়েছে বলুন তো? আজ বাসে এত ভীড় হল কেন? এতটা ভীড় তো হয়না।”
“শুনলাম কিছুক্ষণ আগে নাকি ট্রেন লাইনে নাকি কিছু ঘটেছে! তাই এই বাস ফাঁকা পেতেই দুড়দাড় করে উঠলাম। তাই কম সে কম বসতে পারলাম। না হলে তো সেই গড়িয়া অবধি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হত।”
অগ্নিভ মনে মনে বেশ খুশি হল। কারণ কোন সুন্দরী যদি একই জায়গার বাসিন্দা হয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে পুরুষটির মন পুলকিত হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু একথা মনে আসবার সঙ্গে, এর নেগেটিভ দিকটাও তার মনে বিদ‍্যুতের মত ঝটকা দিয়ে গেল। তার মনে হল, মেয়েটি যখন এত সুন্দরী, তখন অদৃশ্যে বোধহয় ‘নো ভেকেন্সি’ ঝোলানো আছে।
এসব কথা ভাবতে ভাবতেই সে বলে উঠল “ এব‍্যাপারে কিছু জানিনা তো। আমি তো আমার অফিস মৌলালি থেকে উঠলাম। তখন তো বিশেষ কিছু টের পাইনি। অন‍্য দিনের মতই মনে হয়েছে।” বাসের পিছন থেকে গুঁতো আর ঠেলা-ধাক্কা সামলে যে ভদ্রলোকটি মেয়েটির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন, তিনি জানালেন “ট্রেন লাইনে একটা গাছ পড়েছে। তার জন্য সাউথের ট্রেন লাইন বন্ধ। তাই বাস রুটে এত ভিড়, এখানে বেশিরভাগ ট্রেন লাইনের নিত্য যাত্রীদের দেখা যাচ্ছে। কারণ দক্ষিণের ট্রেন যাত্রীদের এখন বাসই ভরসা।”
এই কথা শুনে অগ্নিভ বলে উঠল “এই সমস্যাটা মাঝে মাঝেই হচ্ছে। কেন জানি না!”
তখন মেয়েটিও বলল “ এসব খবর অবশ্য আমার বিশেষ জানা হয় না। এর কারণ, লোকাল ট্রেনে বিশেষ যাতায়াত করতে হয় না। যদিও আমার বাড়ির কাছেই গড়িয়া স্টেশন। তাও ট্রেন ধরি না।”
মেয়েটির জবাব দেওয়ার ধরণ দেখে, অগ্নিভ বুঝল মেয়েটি বেশ বহির্মুখী চরিত্রের। তবুও তার খারাপ লাগল না। মনে হল মেয়েটির মধ্যে একটা স্বচ্ছতা আছে। সে এইসব ভাবতে ভাবতেই বলল “হ্যাঁ ট্রেনে বেশ গাদাগাদি ভিড় হয়। আসলে অফিসের নিত‍্য যাত্রীরা থাকেন তো, তাছাড়া সবস্তরের লোকজন থাকে। আর মেট্রোতে লোকজন উঠলেও, তাদের পকেট মোটামুটি একদিকের ভাড়ার জন্য দশ থেকে কুড়ি টাকা খরচ করার সামর্থ্য রাখে। আর ট্রেনের তো … (অগ্নিভ কথাটা অর্ধসমাপ্ত রাখলেও বাকিটা বুঝতে কারও অসুবিধা হল না।)
মেয়েটি একটু ভেবে বলল “হ্যাঁ কথাটা বোধহয় ঠিকই বলেছেন– ট্রেনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে লোকজন তো টিকিট না কেটেই চলাফেরা করেন। এমনকি টিকিট কাটার মত অর্থনৈতিক অবস্থা থাকলেও, উপরন্তু অনেক নিম্নবিত্ত মানুষও তাদের কাজে শহরে আসেন। তাদের পক্ষেও অত সবকিছু মেইনটেন করে চলা বোধহয় সম্ভব নয়। তাই…”
কথাটা পুরো না হতেই অগ্নিভ মাথা নেড়ে বলল “হুম ঠিকই বলেছেন।” গল্প না থামানোর অভিপ্রায়ে সে বলে উঠল “আপনি বোধহয় এখানে কোন অনুষ্ঠান বাড়িতে এসেছিলেন?”
মেয়েটি হেসে জানাল “ঠিকই ধরেছেন –আমি আমার এক খ্রিস্টান বান্ধবীর বিয়েতে এসেছিলাম। এই পার্ক সার্কাসের কাছে চার্চের ওখানে খাওয়া- দাওয়া ছিল। তাই খাওয়া-দাওয়া সেরেই তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চেষ্টা করছি।”
অগ্নিভ “চিন্তা করবেন না, বাস তো পুরো ভর্তি; ওরা আর রাস্তায় ডেকে ডেকে লোকজন তুলে সময় নষ্ট করবে না ।”
মেয়েটি বিষন্ন মুখে বলল “হ্যাঁ, তা করবে না। তবে রাস্তায় দেখছেন তো অন্যদিনের তুলনায় কিন্তু বেশ একটু বেশি পরিমাণে ভিড়, তাই বোধহয় একটু পরপরই গাড়ি জ্যামে আটকে যাচ্ছে। কখন যে পৌঁছাব জানি না। তার মধ্যে বিয়ে বাড়িতে মোবাইলটাও হারিয়ে ফেলেছি। কোথায় যে রাখলাম। না, হাত থেকে পড়ে গেল। কিছুই বুঝতে পারছি না। ভাবছিলাম মাকে একবার জানিয়ে দেব। আর এই মোবাইলের যুগে তো আগেকার মত এসটিডি বুথ গুলোর সেই রমরমাও নেই—প্রায় উঠে গেছে বললেই হয় …তাই কী যে করি!”
একনাগাড়ে কথাগুলো বলে যাওয়ার পর মেয়েটির ব্যথাতুর মুখ দেখে অগ্নিভর বড় মনে একটু দুঃখের উদ্রেক হল। সে বলে উঠল “আপনি আমার মোবাইল থেকে মাকে ফোন করে দিতে পারেন। অবশ্য আপনার যদি না কোনও অসুবিধা থাকে।”
মেয়েটি সলজ্জ ভঙ্গিতে বলল “না না, আমার কোনও অসুবিধা নেই। আর অসুবিধার কী আছে? আপনি আপনার মোবাইল দিয়ে সাহায্য করলে, সত্যি আমার বড় উপকার হয়।”
মেয়েটি অগ্নিভর মোবাইল থেকে ফোন নাম্বার ডায়াল করে বলছিল “হ্যালো মা, ভুচু বলছি। হ্যাঁ শোনো, দিশার বিয়ের ওখানে আমি মোবাইল হারিয়ে ফেলেছি। …হ্যাঁ, বাসে উঠেছি। …হ্যাঁ হ্যাঁ, বাড়ি এসে বলছি সবকিছু। চিন্তা করোনা। …আরে বাবা, ঠিক আছে। হ্যাঁ হ্যাঁ, দিশা বলেছে পেলে জানাবে। তুমি ফোন রাখো। আমি এখন যাদবপুর থানা ক্রস করছি। আচ্ছা ঠিক আছে …বাই।”
“থ্যাংক ইউ” বলে মেয়েটি মোবাইলটা ফেরত দেওয়ার সময় অগ্নিভ বলে উঠল “কী হল, মা চিন্তায় পড়ে গেছেন তো?”
মেয়েটি স্মিত হেসে বলল “মায়েরা এরকমই হয়ে থাকেন। সন্তান বুড়ি হয়ে গেলেও তারা চিন্তা করেন।”
“আপনার নামটা বেশ লাগল– ভুচু।”
মেয়েটি বেশ হেসে উঠে বলল “ছোটবেলায় আদরে বড় হওয়া বাচ্চাদের ওই রকম অজস্র ভুল-ভাল নাম থাকে। আর তার মধ্যে যদি একমাত্র সন্তান হন তো হয়ে গেল। কম-সে-কম শ্রীকৃষ্ণের অষ্টোত্তর শতনাম জুটবে। আপনাকে অষ্টোত্তর শতনাম শুনতে হবে না। …আমার ভাল নাম কৃষ্ণকলি।”
অগ্নিভ উত্তরে নিজের নাম বলল। তার সঙ্গে এও সে জানাতে ভুলল না যে তার কোনও ডাক নাম নেই। তবে ছোট করে সবাই অগ্নি ডাকে। নিজের নামপর্ব শেষ করে সে বলে উঠল “আপনার বাড়িতে কৃষ্ণকলির ওই বিখ্যাত কবিতা বা গান থেকে কেউ নাম রেখেছেন, আপনার?”
কৃষ্ণকলি বলল “হ্যাঁ ওই রকমই, নামটা, আমার মায়ের জ্যেঠিমার দেওয়া।”
এভাবে ওদের কথোপকথন যখন হচ্ছিল, তখন রাস্তার জ্যামকে ডজ করে করে এগুতে থাকা বাসটি গাঙ্গুলি বাগানের জ্যামে গোঁত্তা খেয়ে আটকাল। এরপর তারা লোকমুখে জানতে পারল– জ্যামটি গড়িয়া থেকে শুরু হয়েছে, এখন সেই জ্যামের ‘ল‍্যাজে’ তাদের অবস্থান হয়েছে। এরপর শুনতে পেল, পাশ থেকে একজন ভদ্রলোক বলছেন “এ তো পুরো হাইব্রিড জ‍্যাম!” কথাটা কানে আসতেই বাসের প্রায় সবাই হেসে ফেলে ছিলেন। তারাও হাসল। কিন্তু কৃষ্ণকলি খুব উতলা হয়ে পড়ছিল। অগ্নিভ তাকে হালকা করার জন্য বলে উঠল “মা কী ভাবছেন– মেয়েটি মোবাইল থেকে কল করতে দেওয়া ছেলেটির সঙ্গে পার্কে বসে গল্প করছে?”
কৃষ্ণকলি হেসে বলল “আরে না না, সে বয়েস নেই। তবে ঐ চিন্তা করবেন, আর-কী। তাই খারাপ লাগছে। তার মধ্যে মোবাইলটাও হারিয়ে ফেললাম; তাই চিন্তাও হচ্ছে।”
“আরে এত চিন্তা করছেন কেন? আপনার আমার মত পুরো বাস ভর্তি লোকজন, কারোর কিছু করার উপায় নেই। সবাই সহযোদ্ধা বলতে পারেন। আপনি যদি চান, তা হলে মাকে আরেকবার আমার ফোন থেকে ফোন করে জানাতে পারেন।”
কৃষ্ণকলি বলল “না না, একবার বলেছি তো, ঠিক আছে। …কোনও ব‍্যাপার নয়।”
“তবে ম‍্যাডাম, আপনার যদি মনে হয়, এখানে নেমে হেঁটে যাবেন, সেক্ষেত্রে ভুল ভাবছেন। এখানে নেমে অতটা হেঁটে যাওয়াও সম্ভব নয়। যদিও গড়িয়া খুব কাছে, তাও হেঁটে যাওয়ার কথা ভাবাটা কিন্তু বোকামি।”
কথাটা উচ্চারিত হতেই কৃষ্ণকলি বলে উঠল “হ্যাঁ বুঝেছি, তবে আপনি তো দেখছি থট রিডার। আসলে, দরকারি কাজ থেকে ফিরতে এত রাত হলে, এত চিন্তা করতাম না। কিন্তু বিয়ে বাড়ি থেকে ফিরছি তো, তাই কে কীভাবে নেবেন। ওই আর কী।”
“ম্যাডাম, বিয়ে বাড়িতে যাওয়াটাও কিন্তু দরকারি ছিল, একদিক থেকে, — সে কর্তব্যের খাতিরে বা ভালোবাসার তাগিদে যাই হোক। সেখানে একটা দায় ছিল আপনার। সেটা শুধু আনন্দ করতে যাওয়া নয়। ব্যাপারটাকে এইভাবে দেখুন। তাহলে আর গিল্টি ফিলিংস হবে না।”
কৃষ্ণকলি হেসে বলল “থ্যাংক ইউ, আমাকে এভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য।”
“কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলব?”
“হ্যাঁ হ্যাঁ, বলুন। আমি কোন কিছুতেই কিছু মনে করি না।”
“আপনি খুব সুন্দর হাসেন। এরকম হাসি আজকাল বিশেষ দেখা যায় না।”
কৃষ্ণকলি বেশ হেসে বলল “থ্যাঙ্ক ইউ, মোবাইল হারিয়ে জ‍্যামে আটকে বেশ একটা কমপ্লিমেন্ট পাওয়া গেল।”
“না না, আপনাকে স্তাবকতা করার জন্য বলিনি। …এটা সম্পূর্ণ মন থেকে বললাম।”
“হুম বুঝেছি। দেখুন– বাসটা চলছেই না। অর্ধেকের বেশি লোক, বাস থেকে নেমে গেল। আমি যেতে পারলাম না।”
“আরে ম্যাডাম, এত উতলা হবেন না। কেউ যায়নি। বাস আটকে গেছে বলে নীচে নেমে সব প্রাকৃতিক হাওয়া খাচ্ছে। বাস চললে আবার সব উঠে আসবে। আর এখান থেকে হেঁটে গড়িয়া যাওয়া রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার। বললাম যে, ও কথা আর মাথায় আনবেন না।”
“হুম, তা মানচি। … তা, আপনি গেলেন না যে হাওয়া খেতে?”
“ভাবলাম আপনাকে একটু সঙ্গ দিই। বন্ধুর বিয়ে খেয়ে মোবাইল হারিয়ে যেভাবে দুঃখে-কষ্টে কাতর হয়েছেন, সেখানে একজন পুরুষ হিসেবে আপনার মন ভালো করার এবং সঙ্গ দেওয়া আমার একান্ত কর্তব্য। আর যেটুকু হাওয়া এই বাসের জানালা দিয়ে আসে, সেটুকু উপভোগ করেই আমি খুশি ও সুখী।”
“বাসে বসে ফ্ল্যার্ট করছেন! আপনার বউ জানতে পারলে আপনাকে পেটন দেবে। এমনও হতে পারে, আজ বাড়ির দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হল। …তখন কী করবেন?”
“ম্যাডাম, এই ৫ ফুট সাড়ে ১০ ইঞ্চি উচ্চতার দীর্ঘদেহী ফর্সা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারকে এখনও কেউ না মন দান করেছে, না লিজে দিয়েছে। তাই এখনও আমি সুখী মানুষ। …দেখছেন না, এতক্ষণ ধরে আপনার পাশে বসে আছি। কেউ একটা ফোন করেছে? করেনি তো না ! কারণ মা-বাবার একমাত্র ছেলের খোঁজ ওই এক বউ-ই রাখে…..আর কেউ রাখে না। এমনকী, একটা বয়সের পর, মা-বাবাও রাখেন না। ওঁরা জেনে যান, যাবে কোথায়? …ঠিক গোয়ালে এসে জুটবে।”
অগ্নিভর কথা শেষ না হতে হতেই, তার মোবাইল ফোনটা বেজে ওঠে। সে ফোন ধরে বলে “হ্যাঁ মা, না না, অনেক আগেই অফিস থেকে বেরিয়েছি। তারপর ওই বাসস্ট্যান্ডে যাওয়ার বাসটা পেলাম। হ‍্যাঁ, বাড়ির সামনে নামার বাস তো আমার নাকের ডগা দিয়ে বেরিয়ে গেল। তাই ওই বাস করেই আসছি। আচ্ছা… আরে না না, বাস গাঙ্গুলী বাগানে এসে আটকে আছে, কিছু করার নেই। …এখানে শুনছি– এই জ্যাম নাকি গড়িয়া পর্যন্ত গেছে। আমি কী করব?… হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি আসছি। তুমি চিন্তা করো না। … আচ্ছা রাখো।”
অগ্নিভ ফোনটা রাখতে কৃষ্ণকলি হেসে বলে উঠল “এটাকে বলে ‘ধর্মের কল বাতাসে নড়ে’।”

অগ্নিভ একটু হেসে বলল “হ্যাঁ মায়েরা ছোট থেকেই সবসময় প্রেস্টিজ পাংচার করতে পারদর্শিনী হয়ে থাকে।”

“না না, এটাকে ওই আমি যা বললাম, তাই বলে। ‘ধর্মের কল …

“বুঝেছি, এবার আপনাকে বেশ খুশি মনে হচ্ছে। আমাকে জব্দ করতে পেরে… মোবাইল হারানোর দুঃখটাও বোধহয় কম হয়েছে।”

“আরে না না, তা নয়। আপনি আমার চিন্তা করা নিয়ে হাসলেন। তাই আমিও একটু ছোট্ট প্রতিশোধ তুললাম।”

“বেশ, তাহলে কিছু বলার নেই। তবে আপনি এই ফর্সা গোলগাল নিষ্পাপ পুরুষটিকে দয়া ধর্ম না করে, প্রতিখোঁচা মারা থেকে বিরত থাকতে পারলেন না। সেটাই কষ্টকর। আমি জানতাম মহিলা বা নারী মানেই দয়ার শরীর। সেখানে একজন নারী হয়ে আপনি প্রতিখোঁচা মারলেন! …দুঃখ পেলাম।”

কৃষ্ণকলি কথাগুলো শুনে বেশ হেসে যাচ্ছিল। সে হাসতে-হাসতেই বলল “বাহ্‌! বেশ ভাল বললেন তো। ‘প্রতিখোঁচা’! এক্কেবারে নতুন কয়েনেজ!!”

“হ্যাঁ, নিজেকে মলম বা পেস্টের টিউব মনে হচ্ছে। আপনি খোঁচা দিচ্ছেন আর আমি আমার উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে নতুন শব্দ বার করছি। …তবে ‘প্রতিশোধ’, ‘প্রতিঘাত’, ‘প্রতিধ্বনি’ যদি থাকতে পারে, তাহলে হোয়াই নট ‘প্রতিখোঁচা’?”

“আপনাকে বাংলাতে বেশ দক্ষ মনে হচ্ছে।”

“ছিল ম্যাডাম, ছিল– সবকিছুই ছিল। মিস্ত্রিগিরি করে করে ওগুলো উঠে গেছে। এই জ্যামের দুঃখে রাগে চারদিকে যখন সবাই যখন গজরাচ্ছে, তখন আপনার সান্নিধ্যে বসে আমিও পুরনো স্মৃতিতে থাকা শব্দগুলোকে টঙ থেকে নামিয়ে এই দুই সিটের আবহাওয়াকে শান্ত, শীতল করতে চেষ্টা করলাম। …তবে আপনাকে দেখে মনে হয় না, আপনি রাগ করতে পারেন।”

কৃষ্ণকলি একটু হেসে বলে উঠল “তাই! তবে প্রথমেই একটা কথা বলতে চাই, তা হল আপনি মিস্ত্রি হলেও এ ক্লাস মিস্ত্রি। কিন্তু…”

“কিন্তু?”

“আপনার ‘প্রতিখোঁচা’ খুবই উপভোগ্য…কিন্তু ওটা ‘গুরুচণ্ডালী’ দোষে দুষ্ট।”

“কী রকম—কী রকম?”

“আপনার দেওয়া উদাহরণ ‘প্রতিশোধ’, ‘প্রতিঘাত’, ‘প্রতিধ্বনি’—এই সবকটা শব্দে তৎসম শব্দ ‘প্রতি’-র সঙ্গে তৎসম শব্দ ‘শোধ’, ‘ঘাত’ আর ‘ধ্বনি’-র সমাস হলেও এখানে আপনি করেছেন অতৎসম দেশি শব্দ ‘খোঁচা’-র সমাস। তাই একটু গুরুচণ্ডালী ও গুরুপাক হয়ে গেল। আপনি ‘বদলা-খোঁচা’ বা ‘ফিরতি-খোঁচা’ বললে অবশ্য এই ত্রুটি থাকত না। …তবে অবশ্যই উপভোগ্য হয়েছে। …আর আপনার এই শংসাপত্রের জন্য ধন্যবাদ জানাই।”

“না না, তা নয়– তবে এইটুকু রাস্তায়, মানে এই বাসযাত্রায়, সঙ্গী হিসেবে আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে, আপনার রাগ নেই। কারণ আপনি ছাড়া দেখুন সবাই বেশ উত্তেজিত হয়ে আছেন। আর আপনি নিজেকে বেশ শান্ত রেখেছেন। এক কথায় বলতে গেলে, ঝড়ো আবহাওয়ার সময় আপনাকে মনে হচ্ছে, শান্ত শীতল বয়ে যাওয়া নদীর মত–যা সত্যি প্রশংসনীয়।”

“হয়তো পুরোটা সত্য বলেননি। আমিও হয়তো অশান্ত বা উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। কিন্তু সমস্যাটা কী বলুন তো, আমাদের, মানে মেয়েদের, অনেক বিষ হাসিমুখে গিলে নিতে হয়। সে বিষ তেতো বা ঝাল যে স্বাদেরই হোক, অভিব‍্যক্তিতে প্রকাশ করা যায় না। কী কষ্টের জীবন, তাই না? …তবে আমরা জন্ম থেকে এসবে অভ‍্যস্ত হয়ে যাওয়ার জন্য ওই কষ্টকে জীবনের অংশ বলে আমরা মেনে নেই। আর তা না হলে, সেগুলো ঝেড়ে ফেলতে হয়। এখানে বাধ্যতাবশত আমাকে মেনে নিতেই হবে। আর এসব গুণের জন্য আলাদা করে মেয়েদের কোনও কোর্স করার দরকার পড়ে না– আমরা জেনে যাই। তাই এই কষ্ট গুলোকে আর কষ্ট বলে তাই ভাবি না। মুখ বুজে সব মেনে নেওয়া আমাদের পার্ট অফ লাইফ বা মেয়েদের আর্ট অফ লাইফও বলতে পারেন।”

“বাবা, আপনি তো দেখছি নারীবাদী মহিলা…”

“উঁহু, মোটেও তা নই। আমি নারীবাদী হলে অনেক আগেই আপনার কথার প্রতিবাদ করতাম। কিন্তু কিছুই বলিনি।”

“কোন কথার?”

“ওই যে আপনি তখন বললেন না যে পুরুষ হিসেবে আপনার কর্তব্য নারীদের প্রোটেক্ট করা…”

“কই না তো? …কখন বললাম?”

“ওই তো বললেন বন্ধুর বিয়ে খেতে গিয়ে মোবাইল হারানো একটি কাতর মহিলাকে পুরুষ হিসেবে সান্ত্বনা দেবেন। ওই কথাতেই আমি আপনার সঙ্গে ঝগড়া করতাম, যদি নারীবাদী হতাম। …আমি নারীবাদী নই,তাই কিছুই বললাম না। চুপ করে গেলাম।”

“এই যে কৃষ্ণকলি ম্যাডাম, নামের সঙ্গে মিল রেখে বেশ তো পলিটিক্যাল স্টেটমেন্টকে আপনি নিজের মতো করে মনের মাধুরী মিশিয়ে অন্য শব্দযুক্ত করে বলে দিলেন, যা আমি মোটেও বলিনি।”

“আরে বাবা, মুখে না বললে কী হল! ভাবটা তো ওই ছিল। মোদ্দা কথা হল– ‘পুরুষ হিসেবে আমাকে সান্ত্বনা দেওয়ার দায়িত্ব আপনার উপর বর্তায়’।”

“আপনি তো বেশ ঝগড়া করতে পারেন! উরিব্বাবা, আপনাকে দেখে তো মনে হয় না যে আপনি এমন ঝগড়ুটে!”

কৃষ্ণকলি হেসে বলল “দেখে যদি সব বোঝা যেত তা হলে তো নচিকেতা গানই করতেন না ‘চেনা-চেনা মুখের সারি আদতে চেনা নয়, সবটুকু চিনতে লাগেই জীবনের সঞ্চয়…’”

“বাহ্‌! বোঝা গেল গান আপনার খুব প্রিয় বিষয়। নচিকেতার এই গানটা তো গেয়ে শোনাতে পারতেন। তাহলে বেশ জমত ভালো।”

“আমি গাইতে পারি না, শুনতে ভালোবাসি। গানের কথাগুলো মন দিয়ে শুনে বুঝতে চেষ্টা করি। …ব‍্যস, ওইটুকুই। এর থেকে বেশি চেষ্টা করলে বাসের লোকজন গত পঁয়তাল্লিশ মিনিট জ্যামে বসে আটকে থাকার সব রাগ আমার উপর ঝেড়ে দেবে।”

“আমি তো বোকার মত সাহিত্যের প্রদর্শন করছিলাম। আসল সাহিত্যের গুণাগুণ তো আপনার কথায়, ভাবে ও প্রকাশে প্রবলভাবে বিদ্যমান। …আচ্ছা আপনি কী করেন তা তো জানা হল না।”

“আমি?”

“হ্যাঁ, আপনি। মানে বাসে আর তো কারও সঙ্গে কথা বলছি বলে আমার মনে হয় না।”

(হেসে) “আমি বলতে পারেন জ‍্যাক অফ অল ট্রেডস … ওই একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে কাজ করি। আর তার সঙ্গে ইতিহাস নিয়ে এম.এ. করার চেষ্টা করছি।”

“আপনাকে বন্ধু বলে ভাবতে ইচ্ছে করছে। আপনি খুব গুণী মহিলা। …আমরা কি তা হলে বন্ধু হতে পারি?”

“এতে আর এত কিন্তু-কিন্তু করার কী আছে? …তা হলে আমার ফোন নম্বর নিয়ে নিন। বেশ কথা বলা যাবে।”

“মায়ের কাছে ফোন করেছেন তো; ওখান থেকেই নাম্বার পেয়ে যাব।… আপনি তাহলে বিয়ের আগেই মা হয়ে যাচ্ছেন?”

“মানে??”

একটু হেসে “যদিও একটু লেম জোক, তাও বলি–ওই যে বললেন না এম. এ. করছেন– তাই বললাম।”

কৃষ্ণকলি গম্ভীর হয়ে বলল “আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আর একটি পুত্র সন্তানের মা আমি।”
অগ্নিভর মুখ-চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছিল সে বেশ শকড।
ইতিমধ্যে জ্যাম কিছুটা খুলে যাওয়ার জন্য গাড়ি চলতে শুরু করেছে। কন্ডাক্টর তো চিৎকার করে সবাইকে ডেকে ডেকে তুলছে। সব যাত্রী উঠে পড়লে বাসে আবার ভিড় হয়ে গেল। এত লোকের সমাগম দেখে কৃষ্ণকলি আর অগ্নিভ নিজেদের সামলে নেওয়ার চেষ্টা করছিল। কৃষ্ণকলির পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকটি আবার উঠে ওদের সামনে সিটে বসলেন। তিনি তারপর পিছন দিকে মুখ ঘুরিয়ে বললেন “বা বা, আপনারা তো বেশ এত ঝামেলার মধ্যেও গল্পে ডুবে আছেন যে আপনাদের সময় বেশ ভালোই কেটে গেল।”
কৃষ্ণকলি বেশ সপ্রতিভ সুরে বলল “কী করব, দাদা, বলুন। …দেখলাম আমাদের হয়ে আপনারা চেঁচামেচি করে দিলেন। তাই আপনাদের উপর পুরো আস্হা রেখে, আমরা আর নড়লাম না। এই যে আপনি সিটটা সুযোগ মতন দখল করে নিলেন। সেটা কী পারতেন এখানে যিনি বসেছিলেন, তিনি উঠে না গেলে? তাই কেউ যাতে প্রতিবাদ করে-টরে এসে আমাদের সিট দখল না করে ফেলে, সেই ভয়ে আমরা আর উঠে আপনাকে সঙ্গ দিতে পারলাম না।”
কথাগুলো বলে সে একটু হেসে ফেলে। …ভদ্রলোক অপ্রস্তুত হয়ে সামনে মুখ করে চুপচাপ বসে রইলেন।
বাসে গুঁতোগুঁতি আবার শুরু হল।
অগ্নিভ তাই আস্তে নিচু স্বরে তাকে জিজ্ঞেস করল “যদি অনুমতি দেন একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি?”
“হ্যাঁ, বলুন…”
“আপনার স্বামী এখন কোথায়?”
“জানি না।”
অগ্নিভ অবাক হয়ে কৃষ্ণকলির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
কৃষ্ণকলি বলে যায় “আমি ডিভোর্সি।”
“আপনার স্বামী সন্তানের খোঁজ করেন না?”
“না, সে একটি বিয়ে করে বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।”
“আপনাদের কি অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ ছিল?”
“না, কলেজের প্রেম। ও জি. এস. ছিল। আর আমিও পার্টি করতাম। তারপর যা হয়।”
“আপনার ছেলে কত বড়?”
“ওর নাম ঋক্, ওর মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়স।”
‘এই বিষয়গুলো বলতে আপনার কষ্ট হচ্ছে, মনে হয়। থাক, এসব নিয়ে আমি আর কিছু জিজ্ঞেস করব না।”
“জানেন তো একটা কথা আছে– সুখ বা দুঃখ সবকিছু অনুভূত হতে-হতে একটা সময় আর তার ধার থাকে না। ভোঁতা হয়ে যায়। তাই তখন সেগুলোর আর কোনও দাম থাকে না। তাই এ নিয়ে কেউ কিছু বললেও আমার কাছে কোনও বিশেষ ফারাক পড়ে না। তাই আপনি আপনার যা ইচ্ছা হয়, জিজ্ঞেস করতে পারেন। এখন শুধু আমরা মা-ছেলে , দেখা যাক ভবিষ্যৎ আমাদের জন্য কী রেখেছে?”
“আপনাদের কতদিন হল ডিভোর্স হয়েছে ?”
“তিন বছর হতে চলল…”
“তার মানে ছেলে জন্মের পরেই…”
“হুম।”
“তা হলে এভাবেই জীবন কাটাবেন? না নতুন ভাবে জীবন শুরু করবেন, ভেবেছেন?”
“বাব্বা, আপনাকে তো বিরোধীপক্ষের উকিল মনে হচ্ছে। যেন আলিপুর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে আছি।” একথা বলেই কৃষ্ণকলি হেসে ফেলে।
“দুঃখিত, আমার এতটা কৌতূহল দেখানো উচিত হয়নি।”
“আরে না না, ঠিক আছে।…আমার জীবন এখন বেশ সবার কাছে গল্প হয়ে উঠেছে –আত্মীয়-স্বজন বন্ধুবান্ধব সবাই গল্প শুনতে চায়। …ওরা শুনতে চায়, আমিও ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় না করে সব বলে দিই।… কী দরকার কৌতূহলের গাছের বেশি যত্ন ক‍রার? …তবে আমি এটাও জানি– আমি যতই সত‍্যিটা বলি না কেন, যে যার নিজের মত কল্পনার আশ্রয় নিয়ে নিজেদের মত আরও সুন্দর করে সাজিয়ে-গুছিয়ে অন্যদের গল্প পরিবেশন করবে। ..ওদের কিছুটা সময় তো কেটে যায় আমার নাম করে। … যাই, গড়িয়া মোড় এসে গেল। …ভাল থাকবেন।”
এ কথা বলেই কৃষ্ণকলি বাস থেকে নেমে যায়।
অগ্নিভ হতবাক হয়ে কৃষ্ণকলির যাওয়া দেখতে থাকে। সে যেন কিছু বুঝে পায় না। কৃষ্ণকলি পলকে হারিয়ে যায় তার চোখের সামনে। বাস ইতিমধ্যে বাসস্ট্যান্ডে ঢুকে যায়। অগ্নিভর ঘোর ভাঙে কন্ডাক্টরের কর্কশ গলার সুরে বাস থেকে নেমে যেতে বলায়।
অগ্নিভ বাস থেকে নামে দিশাহীন হয়ে।

One thought on “গল্পঃ তুমি রবে নীরবে – রুদ্রাণী মিশ্র

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *