গুচ্ছ কবিতাঃ সুবোধ দে
২৩ রূপলাল দাস লেন ঢাকা থেকে হৃদয়ের মাঝে
আলোটি উসকে দিয়ে শ্রীশ্রী চৈতন্যচরিতামৃত -এর দিকে ঝুকে আসে মুখ —
গুনগুন করে একটির একটি পদ ও তার ভাবার্থ পড়ে চলেন রাসমোহন,
সন্ধ্যারাত কিছুটা গড়িয়ে এলে কপালে ঠেকিয়ে গুছিয়ে ঠাকুরের সিংহাসনে রেখে দেন —
ঢাকায় থাকাকালীন স্ত্রীকে দেওয়া উপহার এই ধর্মগ্রন্থটি তাঁর খুব প্রিয়
নিদারুন দুঃখের দিনে ছেড়ে যায়নি সে, আমিও ছাড়িনি হাত —
অতঃপর সর্বস্ব দিয়ে একটুকরো জমিতে সংসার গড়ে ওঠে
কালক্রমে ঘরবাড়ি ভাগাভাগি হলে পড়ে থাকে ঠাকুরের সিংহাসন ও শ্রীশ্রী চৈতন্যচরিতামৃত —
শরীরে ধূপের গন্ধ নিয়ে দুলে দুলে আজও কে যেন পড়ে —
” জয় জয় মহাপ্রভু শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য।
জয় জয় নিত্যানন্দ জয়াদ্বৈত ধন্য।। “
তসবি
উপাস্তি-অর্ঘ্যে মুরশিদ প্রসন্ন হয়, অনুভবে আসে পরম লক্ষ্যের হরফ
পূর্ব জন্মের আখর আত্মসমর্পণে জ্বেলেছিল শরীর
গরল সুধা রসে পূর্ণ আধার, গড়িয়ে নামে কৃষ্ণপক্ষ চাঁদের আলো, বন্ধন দ্বার পরিভ্রমণ করে ফেরে তাপস মন
কাঁচা দেহের আলো ঘুরে মরা ভ্রমণ-খ্যাপা -ভ্রমর
তোমার আলো পাখিরূপী পরমাত্মা, মোহনায় অধঃপথের গতি নিয়ে আসে আখেরে
কৃতকর্মের আয়ু দুয়ার এঁটে দিলেও, সাধন-ভজনে খুলে যায় শ্রীরূপ ঘাট ।
চরণ দারী
দেহ নৌকায় আরোহী। স্রষ্টার হাত ধরে তুমি আমি সচল। কথিত মায়াপ্রেম রূপ সরোবরে স্নান সারে —
প্রবাহমান মরণ সুখ,জীবনের মন্দ গান সহজ পথের স্বভাব। বিন্দু পতনে ফেরেশতার কথা মনে আসে,
দরজা চিনে স্বজ্ঞানী হও, নগর সংকীর্তন আত্মপ্রকাশ স্বরূপ, বেদনার-নূর–,
গুরু কৃপায় জন্মের ধেনু-গান, কৃষ্ণধন হরফ জুড়ে, পারা খুলে এলে এপার ওপার, অধর মানুষ ধরা দেয় দীক্ষা তরিকায় ।
অদ্বয়
বোধিচিত্ত বা বিন্দুই সিদ্ধির মূল, বজ্রপথে আলোর রূপ জেনে নিয়ে স্থির হয় সিদ্ধলাভ,
প্রকৃতি পুরুষ আলিঙ্গন ভিন্ন শূন্যপথ খোলে না, মধ্যাবস্থায় পূর্ণ বিকাশ বাউলের সহস্রদ্বার —
বিন্দু-স্থৈর্য সাধনায় অচঞ্চল মন ছুঁয়ে গেলে, সিদ্ধদেহে মহামিলনের দ্বার খুলে যায় ।
বিমিশ্রণ
পেছন ফিরে দেখতে হয়নি দীক্ষার পর, অনুসারী এসে হাত ধরে,
গায়ে গায়ে জড়িয়ে যায় শব্দের স্বরূপ,তুমি স্বভাব দ্রবণে মিশে যায় গীতিমুখ
আত্মময় আহবান দূর থেকে সাঁই ডাকে সাড়া দেয়,
দরদি পুঁথি থেকে চোখ সরে না, জীবনের শরিক হয়ে আসে সাধনার গান, গানের সাধন ।