সুধাংশুরঞ্জন সাহা-র পাঁচটি কবিতা

সুধাংশুরঞ্জন সাহা-র পাঁচটি কবিতা

পথনির্দেশিকা

এখন অবিশ্বাস আর বিভ্রমের গুমোটে
টলমল সময়, অসহ্য হয়ে উঠছে ক্রমশ।
অন্ধকার গ্রাস করে ফেলছে চরাচর।
ধূর্ত শেয়ালের মতো আততায়ী
ঘাপটি মেরে বসে আছে সর্বত্র …

এই সময় পথনির্দেশিকা হারিয়ে গেলে,
আমি পরিযায়ী পাখিদের অনুসরণ করি।
কারণ,পরিযায়ী পাখিদের উড়ানে
দিগন্ত পর্যটনের অকপট খোঁজ লেগে থাকে।

উত্তীর্ণ

গাছের ডালে রামধনুর রঙ।
সবুজ ছায়াপথের গানে
চুঁইয়ে চুঁইয়ে নামে ভালোবাসা।
অর্ধেক আকাশে ফুটে ওঠে স্বপ্ন।
সারারাত জেগে থাকা ঘড়ি
যোগফল গুণফলে তুলে ধরে
গল্পের মায়াকানন।
বান্ধবীর ঠোঁটে মেঘরঙ, টপ
ভুরুর অরণ্যে গোপন হেমন্ত,
শীতের পিয়ানোয় বেজে ওঠে
টুসু গানের হারানো সুর।
সুবর্ণরেখায় গড়িয়ে নামে কার্তিক…
মেঠোপথ পাখিময় নদীতে উত্তীর্ণ হয়ে যায়।

গুমোটকথা

বুকের নিচে চাপা পড়া স্বপ্নবাগিচা নিয়ে
আর কোনো কথা নয়।
মেঘে ঢাকা আকাশ নিয়েও
শুনতে চাই না কোনো কৈফিয়ৎ।

বরং যে পাখিরা রোজ
অন্ধকার সাঁতরাতে সাঁতরাতে
ঠোঁটে করে নিয়ে আসে ভোর,
শুনিয়ে যায় জেগে ওঠার গান।
তাদের কথা এবার হোক।

একত্রিত হোক তাদের গুমোট কথা…
সশব্দে বেজে উঠুক
তাদের দীর্ঘ ব্যাকুলতা।

যে জীবনে

যে জীবনে কোথাও নদীর গল্প নেই,
সেখানে মিথ্যের বহুতল ঝমঝম করে।
যেখানে অরণ্যের আবছা অন্ধকার নেই,
সেখানে চাঁদের আলোও বিভ্রান্তিকর।

রঙ

বসন্ত মানে ফাল্গুন একা নয়,
সঙ্গে আছে চৈত্র।
এই দুই মাস রূপে ও গুণে একদম আলাদা।
ফাল্গুন যেমন প্রেমে মগ্ন শিমুলের, পলাশের।
চৈত্র ঠিক বিপরীত, উদাসীন উদভ্রান্ত।
কোথাও যেন পিছুটান নেই,
দাঁড়াবার আছে ঢের অবকাশ।
খরার তীব্রতায় পুড়িয়ে
ছারখার করে দেয় মনের যাবতীয় সবুজ।

তারপর, বৈশাখ এসে বিদায় ঘোষণা করে চৈত্রের।
কচি কচি পাতায় ভরে যায় সমস্ত গাছ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *