কবিতাঃ একটি কালো কাক – অনিরুদ্ধ সুব্রত

একটি কালো কাক
অনিরুদ্ধ সুব্রত

নিপাট ধূ ধূ শুধু, জমে জমে ধূসর দেখাচ্ছে দূরত্ব
বাতাসকে আঙুলের নির্দেশে ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে মুখ
যে কারণে ঘোলাটে কুয়াশার বুকের ভেতর থেকে সোজা
সন্ধেটাও টানা দাগে দাগে— দু’ভাগ হয়ে গেছে চুপচাপ
আর একটি কালো কাক, বসেছে কাঁটাতার বেড়াটির উপর ।

চিমনির ধোঁয়া অথবা সমুদ্র বাতাস হয়তো জানত বলেই
বহুকাল, ভুল করতে ভুলে গেছে হুটহাট, ঘন বৃষ্টির মেঘও
অনুভব বলে বলে নাম রাখা হয়েছে তার যতবার— বিস্তৃত
ততবারই দ্বিখণ্ডিত হয়ে, মাথা তুলে প্রমাণ করে ছেড়েছে সে
উচ্ছ্বাস অহংকারের হৃদি-রূপকের আড়াল, ব্যর্থ উপমহাদেশ।

আকাশও কি তবে মধ্যরাতে তারাদের পাড়া ভাগ করে দিয়ে
জোছনার মাঝামাঝি দেবে টেনে নিষেধ— স্তব্ধ রাত্রি-সেতুর
ভাবে বিদগ্ধ কাক কাঁটাতারে বসে, খোঁজে ধ্রুবতারাটি কোথায়
নিঃশব্দ সাদামাটা রাতে প্রকৃতই সে কোন পাশে ওঠে ঠিক
যদি হঠাৎ দুঃখিত উল্কা একা একা
মহাশূন্য ছেড়ে নামে জীবনের দিকে।

যদিও ধূ ধূ জমে জমে বড্ড ধূসর দেখাচ্ছে দূরত্ব আজ
কখনও যা নিকট-বোধে চারণের সুখ ছিল পাখি-পরিযায়ী মনে
বেড়ার দু’পারে সব নিচু নিচু জলাভূমি ভরাট আজ, বালি ফেলে
বুকে আর কে পোষে ছোটো ছোটো মাছ, শুকিয়েছে জলজ ঘাস
চকচকে নগরে খসখসে সুন্দরের প্রথাগত রাষ্ট্রের অভ্যাস।

এত শান্ত হয়েছে কাক, এই চুপচাপ সীমান্ত যেন দেখেনি কখনও
ধাঁরাল কাঁটা মোড়া কালো কালো তার, যেন শীতল ও শক্ত আরও
বেঁকে যাওয়া সমুদ্র বাতাসে নেই আজ বাষ্প-জলের নরম ভার
শিশিরের আশ্চর্য সংযম, কী বিশুষ্ক রেখেছে এ বালির অন্তঃপ্রান্তর
কা কা ভুলে গেছে সেই কাক, যে ঠোঁটে নিয়ে বসে আছে নির্বাক
অন্ধকার ভেদী সুদূর একটি রেখার উপর।

5 thoughts on “কবিতাঃ একটি কালো কাক – অনিরুদ্ধ সুব্রত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *