রম্য রচনাঃ লিফ্টের মজা – কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়

লিফ্টের মজা
কৌস্তভ বন্দ্যোপাধ্যায়

অফিসের কাজের সূত্রে চার্চ লেনের এই অফিসটাতে মাঝে মাঝেই যেতে হয় আমাকে। সামনের লিফ্টটাতে ভিড় দেখলে পেছনের নতুন লিফ্টটাতেই যাই। পেছনের লিফ্টটা বেশ ফাঁকা থাকে। সেদিনও ফাঁকাই ছিল; মানে আমি আর সেই কলেজ পড়ুয়া মেয়েটি। কাঁধের ব্যাগ আর বয়স দেখে তো তাকে কলেজ পড়ুয়াই মনে হল। ভদ্রতা করে আমার জন্য কয়েক সেকেন্ড লিফ্টটাকে সে দাঁড় করিয়েও রেখেছিল। মেয়েটি 4th Floor- এর সুইচে আঙুল ছোঁয়াতেই, আমি বললাম, “আমি থার্ডে নামবো।” বলতেই সে 3 টিপে দিলো। 2nd Floor-এ লিফ্ট থামল কিন্তু দরজা খুলল না, 3rd Floor-এ-এ লিফ্ট থামল কিন্তু দরজা খুলল না 4th Floor-এও তাই হল। এবার সে 2 টিপল। লিফ্ট নেমে এল, 2nd Floor-এ লিফ্ট থামল বটে কিন্তু দরজা খুলল না। আমি একটু অবাক হলাম, খুব একটা যে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম তা নয়। কিন্তু লিফ্টের মধ্যে এক সুন্দরী যুবতীর সঙ্গে আর কতক্ষণ বন্দী থাকা যায়। তবে এটাও সত্যি, ও থাকাতে আমি একটু সাহসও পাচ্ছিলাম। আমার মনে হয়েছিল, মেয়েটি এই বিল্ডিংয়েই টপ ফ্লোরে থাকে।কলকাতার অনেক অফিসের টপ ফ্লোরেই কিছু পরিবার থাকে। আমি বললাম, “গ্রাউন্ড ফ্লোর দিয়ে দিন, আমি নেমে যাবো।” সে একটু হেসে বলল,”দাদা টেনশান করবেন না, সব ঠিক হয়ে যাবে।” এবারে সে আবার 3rd Floor-এর সুইচ টিপল, 3rd Floor আসতেই সে হেসে বলল, “দরজা তো আপনার পেছনে। আমি পেছনে ঘুরে দেখলাম সত্যিই তাই। মনে পড়ে গেল আমি আগে প্রতিবারই পেছন দিকে ঘুরেই নেমেছি। লিফ্টের দরজা একতলায় যে দিকে খোলে, অন্য তলায় খোলে তার উল্টো দিকে। আসলে বয়স হচ্ছে তো, অফিস থেকে অবসরের সময়ও এসে গেছে। আমি যখন লিফ্ট থেকে নামছি, মেয়েটি হেসে বলল, “আপনার সঙ্গে আমি একটু মজা করছিলাম, কিছু মনে করলেন না তো।” আমার তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্হা, তবে আমিও হেসে বললাম, “না। মনে করার কি আছে?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *