এখন বর্ষাকাল। বৃষ্টির সময়। প্রতি বছরে, প্রাকৃতিক কারণে বৃষ্টিপাতের মাধ্যমে আমরা পরিষ্কার এবং স্বচ্ছ জল পেয়ে থাকি। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিমাণের। আবহাওয়াজনিত কারণে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটে। ভারতবর্ষে প্রতি বছরে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৮০০ মিলিয়ন হেক্টমিটার। এই বৃষ্টিপাত ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠস্থ উৎস থেকে যথাক্রমে ৪৩ মিলিয়ন হেক্টমিটার এবং ১৮৭ মিলিয়ন হেক্টমিটার হিসাবে স্থাপিত হয়। ভারতবর্ষে বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সর্ব্বোচ্চ ১১০০০ মিমি। এবং সর্বনিম্ন ১০০ মিমি। ফলে রাজস্থানের বেশ কিছু অঞ্চলে জনপিছু বার্ষিক জলের পরিমাণ ৫০০ ঘনমিটারের কম এবং সে কারণে জলসমস্যা অত্যন্ত জটিল।
আমাদের দেশে মাথাপিছু বরাদ্দ জলের শতকরা ৮.৫ ভাগ কৃষিকার্যে ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন কলকারখানায় এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শতকরা ১০ ভাগ জল যোগান দিতে হয়। অবশিষ্ট শতকরা ৫ ভাগ জল আমাদের গার্হস্থ কাজে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি ক্ষেত্রে জলের প্রয়োজন বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলের সমস্যা সমাধানের জন্য সরকারী স্তরে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বলা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ আইনের মাধ্যমে ভূগর্ভের জলের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা যায়। পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্য বেশ কয়েকটি রাজ্যে এ ধরনের আইন রয়েছে। এই আইনের মূল কথা হল ভূগর্ভের জল যত্রতত্র তোলা যাবে না। এর ফলে মাটির নীচে জলশূন্যতা তৈরি হতে পারে যা থেকে মাটিতে বালির পরিমাণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিতে পারে। এ সব ক্ষেত্রে শহরাঞ্চলে বাড়িতে ফাটল ধরা বা বাড়ি ধসে পড়ার সম্ভাবনা প্রবল। গ্রামাঞ্চলে সেচের প্রয়োজনে অনেকেই শালো টিউবওয়েল ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের জন্য সেচের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। কিন্তু তার জন্য ভূগর্ভস্থ জলের ভরাসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে বিপদ বাড়তে পারে। ভূগর্ভস্থ জল সংরক্ষণ আইনে মূলত শ্যালো টিউবওয়েল ব্যবহারের উপরই গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। দুর্ভাগ্যের বিষয় কৃষকদের প্রয়োজনে অনেক সময় আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে সরকার অনেক নমনীয় ভূমিকা পালন করে। শহরাঞ্চলে বিভিন্ন করপোরেশনের এ ব্যাপারে আলাদা আইন বা বিধি রয়েছে। কিন্তু ভারতের অধিকাংশ মেট্রোপলিটন শহরে এই বিধি মানার ব্যাপারে বাধ্যবাধকতা নেই। যে কারণে বড় বড় শহরগুলিতে বহুতলে আলাদা করে ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকে।
বৃষ্টির জল সংরক্ষণ করার যে কোনও ব্যবস্থার তিনটি দিক রয়েছে। জল ধরা, জল বহন করা ও জল সঞ্চয় করা। বৃষ্টির জল সংরক্ষণের দু’ধরনের ব্যবস্থা আছে। সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করা যেতে পারে।
বাড়ির কাজের প্রয়োজনে ছাদ থেকে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করার ব্যবস্থা করতে হবে এবং কৃষিতে বাড়তি সেচের জন্য মাঠে বা কাছাকাছি জায়গায় জল ধরে রাখার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
এছাড়া যে জায়গায় সম্ভব হতে পারে পুকুর কাটিয়ে বৃষ্টির জল সংগ্রহ করে রাখা যেতে পারে। বহু পুকুর, খাল, বিল সংস্কারের অভাবে ব্যবহার যোগ্য নেই, এমন জলাশয়কে সংস্কার করে ব্যবহার যোগ্য করে তুলতে হবে।
রাস্তার কলে জল পড়ে যেতে দেওয়া চলবে না আর। কাপড় কাচা, বাসন মাজা, স্নানের সময় সমানে যথেচ্ছ বয়ে যেতে দেওয়া যাবে না আর জলকে। দাঁত মাজা, দাড়ি কাটার সময়েও কল বন্ধ রেখে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই কল খুলতে হবে। আর. ও মেশিনে আট লিটার বিশুদ্ধ জল পাওয়ার জন্য বারো লিটার জলের অপচয় হয়। সেই জল নষ্ট না করে সংগ্রহ করে বাড়ির গাছে দেওয়া, ঘর মোছার কাজে, পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করাই যায়। মোট কথা সবাইকে সব সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন একবিন্দু জলেরও অপচয় না হয়। সমস্ত মানুষ সচেতন হয় এবং নিজের সঙ্গে সঙ্গে অন্যদেরও সচেতন করতে পারে।
আমাদের দেশের বেশ কিছু রাজ্যে জলের অভাব যথেষ্ট রয়েছে। শুনতে পাই ওইসব অঞ্চলের বাসিন্দাদের করুণ কাহিনী। ইতিমধ্যে চেন্নাই, মহারাষ্ট, রাজস্থান, গুজরাট ও কেরালাসহ বিভিন্ন রাজ্যে অস্বাভাবিক জলসংকটে নাজেহাল বিপুল সংখ্যক মানুষ৷ চেন্নাইতে জলের অভাবে বন্ধ রাখতে হয় স্কুল কলেজ, রেস্তোরাঁ আর মেট্রোরেলের শীততাপনিয়ন্ত্রক যন্ত্র। অভিজ্ঞ পরিবেশবিদ এবং বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সারা ভারতে একদিন এভাবেই জল সংকট দেখা দিতে পারে এবং সেইদিন খুব বেশি দূরে নয়।
জলে থাকে হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন। প্রশ্ন হতেই পারে, আমরা কৃত্রিম জল তৈরি করে ব্যবহার করতে পারি কিনা! হ্যাঁ, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন সমন্বিত অনু বিক্রিয়ার পর অবশ্যই কিছু জল উৎপন্ন করবে। কিন্তু, তা অনেক খরচ সাপেক্ষ এবং সেই জলের শুদ্ধতা পরীক্ষার পরই ব্যবহার করা যেতে পারে। যেখানে সহজে বৃষ্টির জল পাওয়া যায় এবং সংরক্ষণ করা অনেক বেশি সহজ কৃত্রিম জল তৈরির তুলনায়।
সৃষ্টির শুরু থেকে সমস্ত জীব টিঁকে থাকার লড়াই করে চলে। মানুষ তো সবথেকে উন্নত প্রাণী। মানুষ নিশ্চয়ই পারবে এই লড়াই জিতে যেতে। ভরসা রইল মানুষের প্রতি। ভরসা থাকুক নিজের প্রতি।
অবেক্ষণ পত্রিকার শ্রাবণ সংখ্যা ১৪২৯ প্রকাশিত হল। ঋষি অরবিন্দের আগত জন্ম দিবস স্মরণে এই সংখ্যা ঋষি অরবিন্দ সংখ্যা নামে পরিচিত করা হল। সমস্ত লেখক, কবি এবং শিল্পীকে পত্রিকার পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। পরবর্তী সংখ্যা অবেক্ষণ পত্রিকার শারদ সংখ্যা। আশাকরি গত কয়েক বছরের মতোই এবারের শারদ সংখ্যাও সমস্ত পাঠকের মন জয় করতে পারবে।
সকলে ভালো থাকুন, ভালোবেসে লিখুন ভালোবেসে পড়ুন। নমস্কার।
( তথ্য সূত্রঃ ইন্টারনেট)