এগারো বছরের ছোট শ্রীঅরবিন্দকে প্রণাম জানিয়েছেন বিশ্বকবির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
রবীন্দ্রনাথ নোবেলজয়ী হলেও শ্রীঅরবিন্দকে প্রণাম জানিয়েছেন তাঁর নমস্কার কবিতায়। কেননা, রবীন্দ্রনাথ শ্রীঅরবিন্দ সম্পাদিত ‘ বন্দে মাতরম্ ‘ পত্রিকার একজন একনিষ্ঠ পাঠক ছিলেন। ঐ পত্রিকায় বৃহ ১২ আষাঢ় (27 Jun) শ্রীঅরবিন্দ লিখিত ‘ India for Indians ‘ তৎকালীন ইংরেজ সরকারের দৃষ্টিতে রাজদ্রোহাত্মক রচনা বলে বিবেচিত হয় এবং তাঁরা 2nd August শ্রীঅরবিন্দের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা বার করলেন। আর কৌশল হিসেবে শ্রীঅরবিন্দ সেদিনই আত্মসমর্পণ করে আড়াই হাজার টাকা জামিনে মুক্ত হন। ২রা ভাদ্র কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় গিয়ে জগদীশ চন্দ্রের সঙ্গে দেশব্যাপী উত্তেজনার সম্ভাবনার সঙ্গে পরিচিত হন। আবার ৫ই ভাদ্র বোলপুর শান্তিনিকেতনে ফিরে আসেন। তার দুদিন পর অর্থাৎ ৭ই ভাদ্র শনিবার বা 24 th August 1907 তারিখে লিখলেন ‘ নমস্কার ‘ কবিতা – যাতে দেশের নিরুদ্ধ আবেগ ও আশার বাণীমূর্তি প্রকাশ পেল। কবিতাটি ভাদ্র সংখ্যা বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
এই কবিতার কয়েকটি ছত্র :-
নমস্কার
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
অরবিন্দ, রবীন্দ্রের লহ নমস্কার।
হে বন্ধু, হে দেশবন্ধু, স্বদেশ আত্মার
বাণীমূর্তি তুমি। তোমা লাগি নহে মান,
নহে ধন, নহে সুখ, কোন ক্ষুদ্র দান
চাহ নাই কোন ক্ষুদ্র কৃপা, ভিক্ষা লাগি
বাড়াও নি আতুর অঞ্জলি। আছ জাগি
পরিপূর্ণতার তরে সর্ববাধাহীন –
…. …. …. ….
দেবতার দীপ হস্তে যে আসিল ভবে
সেই রুদ্রদূতে , বলো, কোন রাজা কবে
পারে শাস্তি দিতে ? বন্ধনশৃঙ্খল তাঁর
চরণবন্দনা করি করে নমস্কার –
….. …. …. ….
ক্ষত মিথ্যা রাজা, ক্ষতি মিথ্যা, মিথ্যা সর্বভয়।
কোথা মৃত্যু, অন্যায়ের কোথা অত্যাচার।
ওরে ভীরু ওরে মূঢ়, তোল তোল শির,
আমি আছি, তুমি আছ, সত্য আছে স্থির।
এই ‘ নমস্কার ‘ প্রথমে ‘ সুপ্রভাত ‘, বঙ্গদর্শন ও পরে ‘ বন্দেমাতরম্ ‘ ইংরেজি পত্রিকায় ‘ A Letter in verse from Rabindra Nath Tagore to Arabinda Ghosh ‘ শিরোনামে বাংলা অক্ষরে প্রকাশিত হয়।
এরপর ১৯২৮ সালে সিংহল যাবার পথে ‘শান্তিনি’ জাহাজ থেকে পিপেয় করে পণ্ডিচেরী নেমে রবীন্দ্রনাথ শ্রীঅরবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে নামেন। সঙ্গে ছিলেন নির্মলকুমারী মহলানবীশ। শ্রীঅরবিন্দ তখন গভীর ধ্যানে নিমগ্ন। কারোর সঙ্গে দেখা করেন না। একাই রবীন্দ্রনাথের তাঁর কাছে যাবার অনুমতি ছিল। রবীন্দ্রনাথ জাহাজে ফিরে লিখেছিলেন – ……খৃষ্টান শাস্ত্রে বলে বাণীই আদ্যা শক্তি। সেই শক্তিই সৃষ্টিরূপে প্রকাশ পায়। নব …..আমাদের শাস্ত্রে মন্ত্রের আদিতে ওঁ, অন্তে ওঁ। এই শব্দটিকেই পূর্ণের বাণী বলি। এই বাণী সত্যের অয়মহং ভো, কালের শঙ্খকুহরে অসীমের নিঃশ্বাস। …….”