প্রবন্ধঃ অত্যাশ্চর্য বঙ্কিমচন্দ্র – রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

অত্যাশ্চর্য বঙ্কিমচন্দ্র !
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

এই একই শিরোনাম দিয়ে আগে কোন লেখা দেখেছি বলে মনে পড়ছে না। থাকলেও থাকতে পারে। তবু বাংলা সাহিত্যে তাঁর নানান দিকের চিন্তার ফসল দেখে বিস্মিত না হয়ে পারি না। সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আবির্ভাব বাংলা সাহিত্যের জগতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এমনকি, তৎকালীন ভারতীয় বিভিন্ন ভাষার লেখক পাঠকদের কাছেও তাঁর বিশাল কর্মকাণ্ড অনেক উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে একথা অস্বীকার করার কথা আজকের মানুষ ভাবতেও পারেন না।
তাঁর নিরলস প্রয়াস, শিক্ষা, যুক্তিবাদ, মোহহীন নিরাসক্ত দৃষ্টি, ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবিকতা, দেশের পরাধীনতার যন্ত্রণা, সচেতনতা, নারীর প্রতি সম্ভ্রমবোধ , সর্বোপরি তাঁর অসাধারণ প্রতিভা তাঁকে এক বিস্ময় ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।
এসবের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মুদ্রণ যন্ত্রের প্রতিষ্ঠা, সব রকম ভাব প্রকাশে বাংলা গদ্যের ব্যবহার, সংবাদপত্রিকার প্রচলন যা বাংলা সাহিত্যকে পরিণত হতে সাহায্য করেছে আর তাকে শক্ত হাতে ধরে রেখছিলেন বঙ্কিমচন্দ্র ।

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্ম হয়েছিল ১৩ই আষাঢ় ১২৪৫ বঙ্গাব্দে বা ২৬ শে জুন ১৮৩৮ ইং আর তিনি দেহত্যাগ করেছিলেন ২৬ শে চৈত্র ১৩০০ বঙ্গাব্দে বা ৮ই এপ্রিল ১৮৯৪ ইং সালে। অর্থাৎ, সাহিত্য সম্রাট জীবৎকাল খুব কম, ছাপ্পান্ন বছরও পাননি।
এত অল্প সময়ে তিনি স্কুল কলজ ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা করার পর সরকারি চাকুরী সংসার জীবন চালানোর পাশাপাশি মাঝে মাঝেই বদলি হবার কারণে অস্থায়ী বাসা পরিবর্তন করে আবার কর্মজীবন শুরু করা ও একটার পর আর একটা উপন্যাস এবং অন্যান্য লেখা যেগুলো বাংলা ভাষার ও সাহিত্যের শক্ত ভিত তৈরী করেছে ভাবলে অবাক না হয়ে পারি না।

বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা উপন্যাস

১৮৬৫ ইং সালে প্রথমে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের শিল্প রূপ নিয়ে আধুনিক ও সার্থক সচেতন ভাবে ‘ দুর্গেশ নন্দিনী ‘ আত্মপ্রকাশ করে। এর রচনা শুরু করেন ১৮৬২ সালে।
‘ দুর্গেশ নন্দিনী ‘-তে জায়গীরদার বীরেন্দ্র সিংহের গড়-মান্দারন, পাঠান সেনাপতি কতলু খাঁ ও ওসমান অধিকার করার চেষ্টা করলেও মোগল সম্রাটের পক্ষে জগৎসিংহ বীরত্বের সঙ্গে দুর্গরক্ষার জন্য ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এখানে রচনাকার দেশাত্মবোধকে কোন গুরুত্ব আরোপ করার প্রয়াস পান নি। এখানে তিলোত্তমা – জগৎসিংহের প্রণয় কাহিনীই, ইতিহাসের পটভূমিকায়, মুখ্য স্থান অধিকার করেছে।

‘ দুর্গেশ নন্দিনী ‘ প্রকাশিত হবার পর তখনকার ‘ সংবাদ প্রভাকর ‘, ‘ রহস্য সন্দর্ভ ‘, ‘ সোমপ্রকাশ ‘, ‘ হিন্দু প্যাট্রিয়ট ‘ প্রভৃতি পত্র পত্রিকায় ভূয়সী প্রশংসাবাক্য উচ্চারিত হয়েছিল। একটা মাত্র বাক্য – ” বাংলা সাহিত্যে সম্পূর্ণ নূতনের অভ্যুদয় হইয়াছে ” আর আলোচনান্তে যোগেশ চন্দ্র বাগল মহাশয় মন্তব্য করেছেন – ” …উপন্যাস হিসাবে এ পুস্তক খানি যে বাংলা সাহিত্যে নব যুগের সূচনা করিয়াছিল তাহাতে সন্দেহমাত্র নাই ।”

১৮৬৬ সালে দ্বিতীয় উপন্যাস ‘ কপালকুন্ডলা ‘ প্রকাশিত হয়। এই উপন্যাস কাব্য ধর্মী, বরং বলা চলে গদ্যকাব্য। এখানে বঙ্কিমচন্দ্র এক কাপালিক প্রতিপালিত ষোল বৎসর বয়েসী অপূর্ব সুন্দর কন্যার চিত্র অঙ্কন করেছেন। অভিনব এই কন্যার নাম কপালকুণ্ডলা , সে কখনও ঐ কাপালিক ছাড়া কাউকে দেখে নি। সে সমাজ সংসারও কী বস্তু তা’ জানে না । সে সারাদিন সমুদ্রতট বিহারিণী, কখনও বনচারিণী, সৃষ্টি ছাড়া এক অপূর্ব মধুর প্রকৃতির মোহিনী মূর্তি। এই বর্ণনায় অঙ্কিত করে বঙ্কিমচন্দ্র সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেছিলেন। আমরাও আজও বনের মধ্যে পথহারানো নব কুমারের মত যেন – ” পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছ ?” বনান্তরাল থেকে রমণী কন্ঠের এই মধুর ধ্বনি যখন নবকুমারের হৃদয় তন্ত্রীতে এক অপূর্ব সুর লহরীর ঝঙ্কার জাগাল, তখন বঙ্কিমচন্দ্রের ভাষাও সঙ্গীত হয়ে উঠলো।

১৮৬৯ সালে প্রকাশিত হয় ‘ মৃণালিনী ‘ । এবং এখান থেকেই বঙ্কিমচন্দ্রের জাতীয়তা, স্বাদেশিকতা ভাবের প্রকাশ হতে লাগলো। লেখক বঙ্কিমচন্দ্র বিশ্বাস করতে পারতেন না যে মাত্র আঠারোজন অশ্বারোহী সহ বখতিয়ার খিলজী সমগ্ৰ (অবিভক্ত) বাংলাদেশ বিনা যুদ্ধে জয় করেন। প্রচলিত গল্পকথাই তাঁকে মৃণালিনী রচনা করতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই উপন্যাসে বাংলার লোকসঙ্গীত, ছড়া এবং বৈষ্ণব পদাবলীর ব্যবহার পাঠকও সে সময়কার শিক্ষিত জনদের
মুগ্ধ ও আনন্দে আহ্লাদিত করেছিল।

১৮৭৩ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের ট্রাজেডি ‘ বিষবৃক্ষ ‘ পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। হ্যাঁ, যদিও ১৮৫৬ সালে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরদের দাবী মেনে বিধবাদের পুনর্বিবাহ আইন সম্মত ঘোষণা হয়ে গেছে তবুও ‌পুরুষদের বহু বিবাহ ও ফলস্বরূপ ঘরে ঘরে বাল বিধবাদের আধিক্যে বাংলার সমাজ, সংস্কৃতি তছনছ হয়ে যাচ্ছিল। কুন্দনন্দিনীর স্বামী নব্যশিক্ষিত নগেন্দ্র আর ট্রাজেডির দাহে দগ্ধ সূর্যমুখী এবং ন গেন্দ্রেরঞঝ পদস্খলন বিষবৃক্ষ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তু। বিষবৃক্ষে বিবাহিত ও ঘটনার আগে পর্যন্ত অনিন্দিত চরিত্র পত্নীবৎসল নগেন্দ্রের প্রতি বালবিধবা কুন্দর জৈবিক আকর্ষণ চিত্র অঙ্কিত করে তৎকালীন বিখ্যাত রক্ষণশীল বঙ্কিমচন্দ্র নব্য যুগের মানুষের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও মনুষ্যবোধকে নতুন করে আবিষ্কার করার প্রয়াস পেয়েছেন। সূর্যমুখীর যে গভীর প্রেম তা মৌন ও অনাবিস্কৃতই রয়ে গেল।
তৎকালীন বিশিষ্ট সমালোচক মোহিতলাল মজুমদার এই বিষবৃক্ষ প্রসঙ্গে বলেছেন – “এই আখ্যানের পরিকল্পনার যে একটি সর্বাঙ্গীণ সামঞ্জস্য আছে – ঘটনার গ্রন্থি পরম্পরায় চরিত্রের স্বতন্ত্র ও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় এবং ঐ রহস্যময় নিয়তির লীলায় – এমন আর বঙ্কিমচন্দ্রের অন্য কোন উপন্যাসে নেই। ইহাতে একটি বাক্য, একটি চরিত্র; একটি বাক্য ও কম বা বেশি নাই, এই ইকোনোমি অব মিন্স বঙ্কিমের সকল উপন্যাসের গুণ হ ইলেও বিষবৃক্ষে ইহার চূড়ান্ত রহিয়াছে।”

ইন্দিরা ১৮৭৩ সালে পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয়। বঙ্গদর্শনে মাত্র ৪৫ পৃষ্ঠার গল্পের মত গ্রন্থটি তিনি ১৭৭ পৃষ্ঠার সম্পূর্ণ উপন্যাসের রূপ দিয়ে যেন নতুন করে তৈরি করলেন। নানান ঘটনার পর ইন্দিরার দীর্ঘ অপেক্ষা ও পরে মিলনের এই রোমান্স ধর্মী উপন্যাসটি মধুর সমাপ্তির দিকে পৌঁছে যায়।

যুগলাঙ্গুরীয় বঙ্গদর্শনে ১২৮০ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। একই ছাঁচের দু’টি আংটি নিয়ে নায়ক নায়িকার শেষ পর্যন্ত মিলনের ঘটনা বর্ণিত। তমলুক বা তখনকার তাম্রলিপ্ত সমুদ্রের ধারে রাজার উদ্যান বাটীর সৌন্দর্যে মুগ্ধ বঙ্কিমচন্দ্র, তার চিত্র এই উপন্যাসে সন্নিবেশিত করেন। হিরণ্ময়ীর নিষ্ঠা ও সততার পরিসমাপ্তি ঘটলো বাঙ্ছিত পুরন্দরকে পেয়ে।

১৮৭৫ সালে প্রকাশিত হয় “চন্দ্রশেখর”। প্রতাপ ও শৈবলিনীর আবাল্য প্রেম, জ্ঞাতি ভাই ও বোন হওয়ায় তাদের মিলনের সম্ভাবনা ছিল না। তাই , তারা একসময় বর্ষার ভরা গঙ্গায় ঝাঁপিয়ে পড়ল। উভয়েই সাঁতার জানতো শৈবলিনীর একটু পর থেকেই সাঁতারে পাড়ে উঠলো। প্রতাপ ক্লান্ত হয়ে ডুবতে লগলো। দৈবক্রমে পণ্ডিত চন্দ্রশেখর সেই পথে পানসি করে যাবার পথেই ডুবন্ত প্রতাপকে তুলে প্রাণ বাঁচিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। অন্যদিকে, শৈবলিনী ঐ বাড়ির নিকটস্থ কোন আত্মীয় বাড়িতে আশ্রয় নেয়। আর অকৃতদার বত্রিশ বছরের পূর্ণ হয়ে ওঠা যুবক নিজের সবসময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও শৈবলিনীকে দেখে আকৃষ্ট হয়ে নিজেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বিয়ে করলেন। প্রায় আট বছর চন্দ্রশেখর নিজের বইপত্তর আর শৈবলিনীর ঘরগেরস্থালি নিয়ে সময় কাটান। এদিকে, এক সন্ধ্যায় ভীমা পুস্করিণীর ধারে নব্য ইংরেজ লরেন্স ফষ্টর শৈবলিনীর রূপের খোঁজ পায়। আর চন্দ্রশেখর বেদগ্রাম থেকে সরকারি গণনার কাজে আহূত হয়ে কাছাকাছির মুর্শিদাবাদ কয়েক দিন থাকার জন্য চলে যান। এর মধ্যে সত্বর বদলীর নির্দেশ পেয়ে ফষ্টর সাহেব অনেক লোকজন,লাঠি, মশাল, সড়কি নিয়ে চন্দ্রশেখরের অনুপস্থিতিতে তাঁর বাড়িতে ডাকাতি করে শৈবলিনীকে শিবিকায় তুলে নিয়ে যায় এবং গঙ্গায় নোঙর করা বজরায় তোলা হয়। তাড়াতাড়ি যাবার জন্য ফষ্টর স্থলপথে এগোতে থাকে।
এপ্রসঙ্গে বঙ্কিমচন্দ্র তখনকার বাঙালী মধ্যবিত্তদের ভয়ঙ্কর অবস্থার কথা বলার সুযোগ নিতে ভুল করেন না। ইংরেজ রাজ কর্মচারী ও ‘নামকেওয়াস্তে’ মুসলমান নবাব তথা শাসকদের চাপে সম্ভ্রান্ত অসম্ভ্রান্ত নির্বিশেষে মানুষদের শোচনীয় অবস্থার বর্ণনা করেছেন। । মানতেই হবে, তিনি ছিলেন ইতিহাস সচেতন কথাশিল্পীও।

“রাধারাণী” ১৮৭৭ ও ১৮৮১ সালে ” উপন্যাস-অর্থাৎ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপন্যাস সংগ্রহ ” নামক পুস্তকে সন্নিবিষ্ট হয়। রথের মেলায় একটি ছোট মেয়ে হারিয়ে যায়। তাকে খুঁজতে স্বয়ং বঙ্কিমচন্দ্র ও অন্যদের মত সচেষ্ট হয়েছিলেন। সেই ঘটনা থেকেই কাহিনীর সূত্রপাত।

১৮৭৭ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের ” রজনী ” প্রকাশিত হয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্কিম সাহিত্য সংকলনের সম্পাদকীয় ভূমিকায় ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সজনীকান্ত দাস মত ব্যক্ত করেন যে ‘ রজনী ‘ বাংলা ভাষার সর্বপ্রথম মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ মূলক উপন্যাস। …….নায়ক নায়িকার মানসিক দ্বন্দ্ব এবং ঘাত-প্রতিঘাতকে রজনীতে দেওয়া হ ইয়াছে। সে যুগের বর্ণনা বহুল রোমান্টিক উপন্যাসের ক্ষেত্রে ইহা অভিনব সন্দেহ নাই।”

১৮৭৮ সালে ” কৃষ্ণকান্তের উইল ” প্রকাশিত হয়। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ সংস্করণের সম্পাদকদ্বয় কৃষ্ণকান্তের উইলের দুটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেন – “বর্ণনা বাহুল্যের অভাব এবং আড়ম্বরহীনতা। এমন অপরূপ লিপিচাতুর্য, এমন সংযত ভাবপ্রকাশ, বৈজ্ঞানিক ঘটনা বিন্যাস এবং সুষ্ঠু সামঞ্জস্যবোধ বাংলা সাহিত্যের অন্য কোনও উপন্যাসে দৃষ্ট হয় না। মনে হয়, বঙ্কিমচন্দ্রের লিপিচাতুর্য কৃষ্ণকান্তের উইলে চরমে পৌঁছিয়াছে।”

১৮৮২ সালের “রাজসিংহ” উপন্যাস ৪র্থ সংস্করণ আমূল পরিবর্তন ও আয়তনে চার গুণ কলেবর বৃদ্ধি করে সম্পূর্ণ উপন্যাসের মর্যাদা লাভ করে।

১৮৮২ সালেই ” আনন্দমঠ ” প্রকাশিত হয়। ছিয়াত্তরের (১১৭৬) মন্বন্তরের পটভূমিকায় বাংলার সন্ন্যাসী বিদ্রোহের ঘটনা নিয়ে এই উপন্যাস। এই গ্রন্থে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা “বন্দেমাতরম্” মন্ত্র যা নাকি পরবর্তীতে দেশমাতৃকার শৃঙ্খল মোচনের জন্য লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী জাতি ধর্ম বর্ণ ধনী নির্ধন মূর্খ পণ্ডিত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ ও সংহত হতে জানলো। বঙ্কিমচন্দ্রের এই মহামন্ত্রের দীক্ষায় আসমুদ্রহিমালয় সকলের যেন দীক্ষিত হয়ে জীবন পণ করে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে সবাই একত্রিত ও সংহত হয়েছিল। তাই তাঁকে ঋষি শ্রীঅরবিন্দ এবং ভারতের সকলে ঋষি আখ্যায় ভূষিত করলেন।

১৮৮৪ সালে প্রকাশিত হয় “দেবী চৌধুরাণী “। পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন – “দেবী চৌধুরানী যেন বৈষ্ণবের হাতে তৈরী এক শক্তিমূর্তি — কমলা নহে,ভৈরবী নহে, কালীও নহে, অথচ তিনের সমন্বয়ে এক অপূর্ব বৈষ্ণব ঠাকুরানী। “

১৮৮৭ সালে প্রকাশিত হয় ” সীতারাম” উপন্যাস। ব্যক্তি সীতারাম ঐতিহাসিক হলেও অনেক পণ্ডিত মানতে চান নি।তবে আচার্য যদু নাথ সরকারের মন্তব্য – ” বঙ্কিমচন্দ্র সীতারাম নামক রাজার জীবনের ঘটনা গুলির ও সেই যুগের বাঙ্গালার অবস্থার যে বিবরণ দিয়াছেন, তাহা অধিকাংশ একেবারে সত্য ; ইহার কোন স্থানেই ঐতিহাসিক সত্যের অপলাপ করেন নাই ; ……এর উপর, সেই যুগে প্রজা ও শাসকের সম্বন্ধ, দেশের দশা, যুদ্ধ বিগ্রহ প্রণালী বঙ্কিম অক্ষরে অক্ষরে সত্য করিয়া আঁকিয়াছেন, অর্থাৎ এই উপন্যাসখানির দৃশ্যপট একেবারে সত্য। “

ইচ্ছে ছিল উপন্যাস ছাড়াও অন্যান্য রচনা ও সম্পাদিত ” বঙ্গদর্শন ” দুচার ছত্র লেখার। এ যাত্রায় বাকী থাকলো। তাই, এখানে ইতি – রাধাকৃষ্ণ (রাধু ) গোস্বামী।

2 thoughts on “প্রবন্ধঃ অত্যাশ্চর্য বঙ্কিমচন্দ্র – রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

  1. অসাধারণ সম্পদ। অনেককিছু জানতে পারলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *