অণুগল্পঃ স্বপ্ন – ভূমিকা গোস্বামী

স্বপ্ন
ভূমিকা গোস্বামী

এই তো সেদিন , দিন পনেরো আগের কথা। ভোর বেলায় স্বপ্ন দেখে ধরমরিয়ে উঠে বসেছিলেন জগদীশবাবু। চায়ের ট্রে বিছানার পাশের টুলটায় রাখতে রাখতে উদ্বেগের স্বরে মুখ তুলে বলেছিলেন জপমালাদেবী – কী হয়েছে ? খারাপ স্বপ্ন টপ্ন দেখেছ নাকি ?
― হু। চোখ ডলতে ডলতে বলেছিলেন জগদীশ বাবু।
― কী দেখলে ? আচ্ছা বেশ , মুখ ধুয়ে এসো। চা খেতে খেতে শুনি।
আজ মনে মনে ভাবলেন জগদীশ― স্বপ্নটা আর বলে ওঠা হয় নি মালাকে। যতবারই বলতে চেষ্টা করেছি কোন না কোন বাধা এসে দাঁড়িয়েছে।
কি ভীষণ প্রাণ শক্তি মালার। ভোর থেকে রাত দুপুর পর্যন্ত ছুটে ছুটে সংসারের কাজ করে বেড়াতো। প্রেসারে ভাত বসিয়ে , ডাল বসিয়ে ছুটে যেত ছাদে । গাছের পরিচর্যা করতে। সিটি পড়লে ছুটে ছুটে তিলতলা থেকে একতলায় নেমে আসতো।
ঠিকে কাজের লোক দুপুরে বিশ্রামের সময় ঘর মুছতে আসে, ও সাবান স্কচবাইটের বাটি নিয়ে দৌড়ে দৌড়ে মেঝেতে কোথায় কালি পড়েছে ঘষে যাচ্ছে। কত বলেছি ― মালা , একটু বিশ্রাম নাও। কোন প্রাইম মিনিস্টার আসবে শুনি ? সবসময় এত চকচকে করে ঘর পরিস্কার করতে হবে ? ও যা পারে করুক না।― বা রে আমরা কি ফ্যালনা নাকি ! আমাদের কি পরিস্কার ঘরে থাকতে নেই ? তুমি চুপ করে বসে আছো, থাকো না। নিজে তো নড়ে বসে না। আমাকেও ওর মতো বসে বসে শিকড় গজিয়ে গাছ হতে হবে। গজগজ করতে করতে এক ঘর থেকে অন্য ঘরে চলে যেত।
স্নান সেরে ঘরে ঢুকতেই বাবানের বৌ পিউ বলল― বাবা, তোমার খাবার আর ওষুধের বাক্সটা এখানে রেখে যাই ? পারবে তো ঠিক করে ওষুধ খেতে ?
তোয়ালেতে মাথা মুছতে মুছতে বললেন জগদীশ বাবু ―হুঁ।
মনে মনে বললেন –
মালা প্রতিদিন তিনবেলা ওর ওষুধ প্লেটে সাজিয়ে দিত।
বলতো,– দরকার নেই বাবা, তোমার নিজে নিয়ে । শেষে একটা অঘটন ঘটিয়ে বসবে। তারপর বাবানের শুধু শুধু হয়রানি …. দূরে আছে। আমাদের জন্য এমনিতেই চিন্তা করে পাগল হয় ছেলেটা।
আমি প্রতিবাদ করি নি। তোমাকে একথাও বলা হয় নি । আমার জন্য তোমার প্রতিটি কাজ আমি এনজয় করতাম। আমার খুব ভাল লাগতো।
তুমি পুজো সেরে সেদিন দুপুরে আমার ভাত বাড়ছিলে। লাল ভেলভেট পাড় সাদা খোলের শাড়ি , ঠাকুরের সিঁদুর তোমার ফর্সা কপালে জ্বলজ্বল করছিল। নিজের খাবার বেড়ে, বাড়তি খাবার ফ্রিজে তুলে রাখছিলে। ততক্ষণে আমার খাওয়া প্রায় শেষ। দ ই এর বাটি আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে , তুমি খেতে বসলে। মুখধুয়ে এসে দেখি , খাওয়া শেষ করতে পারোনি । ডান হাত ভাতের থালায় । টেবিলে ছড়ানো বাঁহাতের ওপর তোমার মাথা।
সেদিনের ভোরে তো এমনই স্বপ্ন দেখেছিলাম। একসাথে চলতে চলতে তোমাকে আর কোথাও খুঁজে পাচ্ছি না।
অতিথি কুটুম বাড়ি ভর্তি । তবু যেন বড় ফাঁকা আজ বাড়িটা। পুরোহিতের মন্ত্র ছাদ থেকে সারা বাড়িতে গমগম করছে….
মধু বাতা ঋতায়তে , মধু দ্যৌ, মধু ক্ষরন্তি সিন্ধবঃ…..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *