ছোটগল্প ও রবীন্দ্রনাথ
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

ছোটগল্প নিয়ে কিছু কথা মাঝেমধ্যে বলার ইচ্ছে হয়। ব্যস্। ঐ পর্যন্ত। লেখা আর হয়ে ওঠেনি। কয়েক দিন আগে একটা আলোচনা আসরে কেউ একজন গল্পের কথা বলতে গিয়ে বললেন – মিনি গল্প আর গল্পাণু প্রায় একই। তবে কোন গল্পকে কেটে ছেঁটে ছোট করে পরিবেশন করে দিলেই ছোটগল্প হয়ে ওঠে না। ছোট আকারের গল্প হয়তোবা হয়ে ওঠে। অতি আধুনিকতম যন্ত্রের যুগে সবকিছুকে সংক্ষিপ্ত বা আকারে ছোট করার প্রয়োজন দেখা দেয়।
আসলে ছোটগল্প একটা শিল্পরীতি যার জন্ম অধুনাতম কালে। তবে অনাদিকাল থেকেই গল্প বা কাহিনীর বীজ ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষের আশেপাশে। যখন ধনতান্ত্রিক সমাজে মূল্যবোধের পরিবর্তন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার পরিমণ্ডলে যেমন উপন্যাস এল , তেমনই জীবনের ছোট ছোট কাহিনীর ঘটল আবির্ভাব। তাতে ধরা পড়ল যুগের প্রতিবাদ, জীবনের অসংখ্য চ্যালেঞ্জ – সৃষ্টি হল ছোটগল্প।
ছোটগল্পে বর্তমানে অতি আধুনিক রচনায় আখ্যানভাগের গুরুত্ব ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবুও, ছোটগল্পকে ব্যাক্তিত্বের বিকাশ বলা যায়। আরো সূক্ষ্ম ভাবে বলেন পণ্ডিতরা – ছোটগল্প লেখকের ব্যক্তিত্বের পরিস্রুত রূপ বা একটি প্রতীতির সমগ্ৰতা। আবার কবিতাও কবির ব্যক্তিত্বের স্বয়ং প্রকাশ। দুইই ঈঙ্গিতধর্মী ও একমুখীন।
রবীন্দ্রনাথ কবি। মহান কবি। তাঁর রচিত সকল শ্রেণীর সাহিত্য সৃষ্টিতে তিনি তাঁর সরল অথচ বিস্তীর্ণ হৃদয়াকাশ নিয়ে উপস্থিত আছেন। আছে তাঁর শিল্পীত মননের উপস্থিতি। ছোটগল্পের আবহে, ভাষায়, চরিত্রের আত্মবিশ্লেষণে, প্রকৃতি ও মানুষের লীলাত্মতায়, রচনার পরিণামে সব জায়গায় কবিত্বশক্তির বিভূতি উপচীয়মান। সাংকেতিকতা, ইঙ্গিতধর্মিতা ও ব্যঞ্জনা দ্বারা কোন জীবনবাণীকে প্রকাশ করা ছোটগল্পের অন্যতম লক্ষণ।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর হৃদয় উৎসারিত ছোট ছোট অনুভূতি নিয়ে লেখা ছোটগল্প গুলোকেই স্মরণীয় করে তুলেছেন।
তাঁর রচনায় অতিথির তারাপদ বিশ্বকবির ব্যক্তিজীবনের কল্পাদর্শ, প্রিয় কিশোর চরিত্রের মতনই। তারাপদআজন্ম গৃহহীন। প্রাকৃত। নৈসর্গিক সত্তার প্রতি আকৃষ্ট। সে যখনই দেখত পাশের নদীতে বিদেশী নৌকা গুণ টেনে চলেছে বা গ্রামের বিশাল অশ্বথ্থতলে দূর দেশের অচেনা সন্ন্যাসী এসে আশ্রয় নিয়েছে বা বেদেরা নদীর তীরে পোড়ো জমিতে তাঁবু টানিয়ে বাসা বেঁধেছে, তখনই অজ্ঞাত বহিঃপৃথিবীর স্নেহহীন স্বাধীনতার জন্য তাহার চিত্ত অশান্ত হয়ে উঠতো।
গল্পের মধ্যে কোথাও কোন অভাবনীয় চমকের উপস্থিতি নেই। প্রথম থেকেই উদাসী হবার সূত্র সর্বত্র ছড়িয়ে রয়েছে। কাঁঠালিয়ার জমিদার মতিলাল বাবু , তাঁর স্ত্রী অন্নপূর্ণা তারাপদকে সামান্য দুই বৎসর সংসারে পেয়ে আত্মীয়বৎ করে তুলেছিলেন আর নিজ কন্যা চারুশীলাকে তার সঙ্গে বিয়ে দিয়ে তারাপদকে চিরবন্দী করার মতলব করেছিলেন। কিন্তু এই স্নেহ-প্রেম বা বন্ধুত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হবার আগেই যাত্রা গান বাঁশি বাজানো গৃহকর্মে পটুতা এসব দিয়ে সমস্ত গ্রামের হৃদয় হরণ করে এক বর্ষার মেঘভরা রাত্রে এই ব্রাহ্মণ বালক তারাপদ আসক্তিহীন উদাসীন হয়ে বিশ্ব প্রকৃতির তথা জননীর কাছে চলে গিয়েছে। প্রাকৃত তারাপদ প্রকৃতিতে মিলিয়ে গেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর কিশোর মনের আন্তরিকতা মাখানো ছোট আকারের গল্পগুলোকে, বিশেষ করে চরিত্রের প্রতি একটি স্বাভাবিক এবং ব্যক্তিগত দুর্বলতার পরিচয় দিয়ে রেখেছেন।
কিশোর ফটিক শেষ পর্যন্ত – এবাঁও মেলেনা / ওবাঁও মেলে না – প্রলাপ বকতে বকতে ছুটি পেলো কবিগুরুর ছুটি গল্প থেকে।
ফটিক অতি সাধারণ এক গ্রাম্য বালক। গ্রামের গাছপালা বিস্তীর্ণ উদার মাঠ পাখিদের কলকাকলি ও জলকাদায় ধীরে ধীরে প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে ওঠা ফটিককে তাঁর মাতুল হঠাৎ করেই ভালোকরে মানুষ করার জন্য একদিন নিয়ে এলেন কাঠ কংক্রিটের ট্রাম বাসের নির্দিষ্ট জীবন যাত্রার কলকাতায়। পড়ে থাকলো তার মা দূরে মফস্বলে আর ফটিক চলে এল কঠোর নিষ্করুণ হৃদয়হীনা মামীর কাছে। নিয়মের আগলে বাঁধা জীবনে, শহরের স্কুলে। মুক্ত জীবনের পরিবেশ থেকে অনুদার কঠোর শৃঙ্খলার জীবনে। অথচ তার ইচ্ছে হলেই ছুটে চলে যাওয়ার জন্য ছুটি হয় না। খাঁচার পাখি ফিরে যাবার বাসনায় ছটফট করে খাঁচায়। ফটিকের দশা তা-ই। সে জ্বরে ভুগে প্রলাপ বকে যেন সে দূর পাল্লার নৌকার আরোহী, মাঝিমাল্লারা জল মেপে মেপে ঘোষণা করছে। গ্রাম বাংলা আর কতদূর !
রবীন্দ্রনাথ ১৮৯১ সাল নাগাদ ছোটগল্প রচনায় প্রবৃত্ত হন। হিতবাদী, সাধনা, বঙ্গদর্শন এবং সবুজ পত্র এই চারটি পর্যায়ে ছোটগল্প লেখেন। পদ্মাতীর বাস তাঁর চিত্রা, চৈতালি, সোনার তরী আর গল্পগুচ্ছের রচনা সমূহের উপলব্ধির উৎস বলা যায়। এই সব গ্রন্থের এক একটি কবিতা প্রেম, সৌন্দর্য বিকাশ, প্রকৃতি চেতনা ও সীমার মধ্যে অসীমের উপলব্ধি আর সেসবের বাঙ্ময় প্রকাশ ঘটেছে গল্পগুচ্ছের অনেকগুলি গল্পে। পোস্টমাস্টার, একরাত্রি, জয় পরাজয়, ছুটি, সুভা, মহামায়া, সমাপ্তি, নিশীথে, আপদ, ক্ষুধিত পাষাণ, অতিথি – এই ছোটগল্প গুলি ভাবধর্মী, ব্যঞ্জনাগর্ভ ও সূক্ষ্ম আবেদন সম্পন্ন। ভাবুক কবির কল্পনার ফল রূপ পেয়েছে। প্রকৃতির ভূমিকা, বিশেষ করে পদ্মার ভূমিকা তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে। নিশীথরাত্রির নিস্তব্ধতা, জ্যোৎস্নাস্নাত ফাল্গুনী রাত, দিগন্ত বিস্তৃত বালুচর, বর্ষণমুখর শ্রাবণের দিন বা নিতান্তই সাধারণ মুহূর্ত, সাধারণ মানুষ, তুচ্ছ অনাদৃত কাহিনী বা শুধুমাত্র একবিন্দু অশ্রু কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ছোটগল্পে পড়ে অমরত্ব লাভ করেছে।
তাঁর বিভিন্ন পরিবেশ ও অবস্থা বর্ণনার সাঙ্কেতিক ব্যবহার সব যেন অমর হবার বাসনায় উন্মুখ হয়ে আছে।
কলমে সাঙ্কেতিক দৃশ্য, দু এক টানে বিভিন্ন দৃশ্য বা পরিপ্রেক্ষিত বোঝাতে বিশ্বকবি অনন্য :-
অতিথি ছোটগল্পে – ‘ বারিপতন মুখরিত নদীবক্ষে সারি সারি নৌকাযাত্রার সমারোহ ‘ বা ‘ দেখিতে দেখিতে পূর্ব দিগন্ত হ ইতে ঘন মেঘরাশি প্রকাণ্ড কালো পাল তুলিয়া দিয়া আকাশের মাঝখানে উঠিয়া পড়িল ‘।
‘সুভার’ সুভা যেন নিজেই নিজের সামগ্রিক পরিচয়। সুভা, অতিথির তারাপদ, আপদের নীলকন্ঠ, ছুটির ফটিক সবাই যেন প্রকৃতির প্রাণরসে সঞ্জীবিত। এমনকি সমাপ্তির মৃন্ময়ী তারাপদের মত প্রাণরসে যুক্ত না হলেও কবি লিখেছেন – ঐ বালিকার মুখেচোখে একটি দুরন্ত অবাধ্য নারীপ্রকৃতি উন্মুক্ত বেগবান অরণ্য মৃগের মত সর্বদা দেখা দেয়, খেলা করে।”
রবীন্দ্রনাথ গল্পগুচ্ছ সম্পর্কে বলেছেন – অল্পবয়সে বাঙলা দেশের পল্লী প্রকৃতির সঙ্গে যখন আমার চোখে চোখে পরিচয় হয়েছিল তখন প্রতিদিন আমার মনে যে আনন্দ ধারা উদ্বারিত হয়েছিল, তা-ই ,সহজে প্রবাহিত হয়েছিল ঐ নিরলংকৃত সরল গল্পগুলির ভিতর দিয়ে।”
তিনি আরও লিখেছিলেন – আমার বিশ্বাস এই আনন্দ বিস্মিত দৃষ্টির ভিতর দিয়ে বাঙলা দেশকে দেখা আমাদের সাহিত্যে কোথাও নেই।”
রবীন্দ্রনাথ বাঙলা দেশের সনাতন গ্রামীণ জীবন চিত্র অকৃত্রিম স্বাভাবিকতায় অঙ্কন করেছেন। তাঁর সময় রাস্ট্রীয় বিপর্যয় বা ইতিহাসের ভাঙাগড়ায় দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে বা সমগ্র দেশে তেমন কোনো প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। আর তার ফলে যার যা স্বাতন্ত্র্য তা ক্ষুন্ন হতে পারেনি। দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক সুনামীপূর্ব জীবন ধারায় লভ্য সম্পর্ক নিয়ে রবীন্দ্রনাথ মগ্ন থাকতে অভ্যস্ত ছিলেন। ফলে, পারিবারিক সম্পর্কের জটিলতা, সাধারণ মানুষের জটিল মনস্তাত্ত্বিক আচরণ এসব নিয়েই ছোটগল্পের বা বড় গল্পের উপাদান উপস্থিত।
‘ রামকানাইয়ের নির্বুদ্ধিতা ‘, ‘ ব্যবধান ‘, ‘ দিদি ‘, ‘ রাসমণির ছেলে ‘, ‘ পণরক্ষা’, ‘ দান প্রতিদান ‘ এমনকি ভূমিহীন কৃষি শ্রমজীবি জীবনের অভিজ্ঞতা অঙ্কিত হয়েছে ‘ শাস্তি ‘ ছোটগল্পে। এছাড়া গ্রাম্য জমিদারির অবস্থা, জমিদার-প্রজার সম্পর্ক, গ্রাম কেন্দ্রিক আদালত ও বিচার ব্যবস্থা, ইংরেজ শাসকদের বিচার প্রহসন ও দুর্নীতি এসব তাঁর লেখায় স্থান পেয়েছে। এসব কল্পনা প্রসূত নয়, অভিজ্ঞতা প্রসূত ঘটনা তাঁর রচনায় স্থান পেয়েছে।
গল্পগুচ্ছের প্রথম খণ্ডে ‘ সম্পত্তি সমর্পণ ‘, ‘ কঙ্কাল ‘, ‘ ত্যাগ ‘, ‘একরাত্রি’ (বন্যার রাত), ‘ জীবিত ও মৃত ‘, ‘ স্বর্ণ মৃগ ‘, ‘ কাবুলিওয়ালা’, ‘ছুটি’, ‘সুভা’, ‘ মহামায়া ‘, ‘ দান – প্রতিদান ‘, ‘ মধ্যবর্তিনী ‘, ‘ শাস্তি ‘, ‘ সমাপ্তি ‘, ‘ ‘ সমস্যা পুরাণ ‘ প্রভৃতি গল্পগুলির অধিকাংশই করুণ রসের হাহাকারে সমাপ্ত। ‘ যেতে নাহি দিব ‘ কবিতায় সংসারের প্রাণলীলার যে নিষ্ঠুর নিরাসক্তি ও করুণ স্নেহ প্রেম ভালোবাসার অবিরাম সংঘাত প্রবাহিত তার ই গদ্যরূপ যেন ‘ কাবুলিওয়ালা ‘।
‘ চিত্রা’র ‘ এবার ফিরাও মোরে ‘ কবিতায় বড় দুঃখ বড় ব্যথা ‘সন্মুখেতে কষ্টের সংসার ‘ বলে কবি যে দুঃখ দৈন্য পীড়িত অভাব অভিযোগ ক্লিষ্ট জীবনের নৈরাশ্যজনক চিত্র অঙ্কন করেছেন, তাঁর লেখাগুলি সেসবের বাস্তব আলেখ্য।
গল্পগুচ্ছের দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে ‘ প্রায়শ্চিত্ত ‘ , ‘ বিচারক’, ‘নিশীথে , ‘ আপদ’, ‘দিদি’, ‘মানভঞ্জন’, ‘ঠাকুরদা’, ‘প্রতিহিংসা’, ‘ক্ষুধিত পাষাণ ‘, ‘অতিথি’, ‘দুরাশা’, ‘পুত্রযজ্ঞ’, ‘রাজটিকা’, ‘মণিহারা ‘, ‘দৃষ্টিদান’, ‘দুর্বুদ্ধি’, ‘নষ্টনীড়’, ‘মাল্যদান’ প্রভৃতি গল্পেও পল্লী প্রকৃতি, পল্লী জীবনের সুখদুঃখ, অন্তরলোকের বেদনা ; এছাড়া রোমান্স ও রোমান্টিকতা এসে মিশেছে।
এ প্রসঙ্গে ডঃ শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন :-
” তিনি কল্পনার অন্তরাল হ ইতে, কবিদৃষ্টির রোমান্টিক অনুরঞ্জনের মাধ্যমে, পল্লবঘন প্রগাঢ় শান্তির পটভূমিকায়, নদীর অন্তহীন বিস্তার ও অসীমের অভিমুখী প্রাণচাঞ্চল্যের সহিত মিশাইয়া এই সঙ্কীর্ণ জীবনযাত্রার নিগূঢ় সত্তাটিকে অনুভব করিয়াছেন ও ইহার তুচ্ছ বস্তু পরিবেশের অন্তর্নিহিত জীবন রসটি তাঁহার সুমিত কারুকার্য খচিত ছোটগল্পের পেয়ালায় আমাদের নিকট পরিবেশন করিয়াছেন।”
উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্পের মধ্য দিয়েইবাঙলা দেশের সনাতন অকৃত্রিম ও স্বাভাবিক জীবন উদ্ভাসিত হয়েছে। “ব্যবধান” গল্পে দুই পরিবারের জমির সীমানায় একটি সামান্য পাতি লেবুর গাছকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী জ্ঞাতি বনমালী ও হিমাংশু মালীর মামলা মোকদ্দমায় মানবিক হৃদয় দুরপনেয় বিচ্ছেদে যেন ভীষণ ভাবে আহত হয়েছে। ” স্বর্ণমৃগ” গল্পে, সংসারের বৈষয়িক কাজে অনভিজ্ঞ ও অক্ষম বৈদ্যনাথ স্বর্ণমৃগের বৃথা সন্ধানে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত গৃহ ত্যাগ করে সংসার থেকে হারিয়ে গেছে। কোন অস্বাভাবিকতা নেই তাঁর কাহিনীতে । সমাজের স্বাভাবিক অবস্থার চিত্র ফুটে উঠেছে।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছের প্রথম ও দ্বিতীয় খণ্ডের গল্পগুলির মধ্যে ঈঙ্গিতধর্মিতা, সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আর তাঁর ভাষার কবিত্ব স্থান করে নিয়েছে।
‘নষ্টনীড়’ সুদীর্ঘ পরিসরে হয়ে উঠেছে উপন্যাস ধর্মী। নিষিদ্ধ প্রেমের বিশ্লেষণ, সূক্ষ্ম মনস্তাত্ত্বিক রূপায়ণে একটি পরিণত নৈপুণ্য প্রকাশ পেয়েছে। ‘চোখের বালি’র কথা মনে করিয়ে দেয়, সেটির প্রকাশ যেন আসন্ন।
তবে সোনার তরীর ‘ বর্ষাযাপন’ কবিতায় কবি ছোটগল্প রচনার সাধটির কথা জানিয়েছিলেন, তার প্রেরণা ছিল –
“ছোট প্রাণ ছোট ব্যথা ছোট ছোট দুঃখ কথা
নিতান্তই সহজ সরল;
সহস্র বিস্মৃতিরাশি প্রত্যহ যেতেছে ভাসি
তারই দু’চারিটি অশ্রুজল – ‘ ।”
ছোটগল্প সম্পর্কে কবির এই ভাবনাটিই আমাদেরও অনেকের অনুসরণীয়। তাই নয়কি ?