মীনা কুমারীর শায়েরী
অনুবাদ : সুধাংশুরঞ্জন সাহা
মীনা কুমারী ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতের এক কিংবদন্তি অভিনেত্রী। তাঁর আসল নাম মাহজবীন বানো । সিনেমা জগতে ট্রাজেডি কুইন হিসেবে তিনি বিশেষ পরিচিত ছিলেন। দাম্পত্যের ব্যর্থতার কারণে তাঁর মনে ছিল গভীর ক্ষত ও যন্ত্রণা, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাঁর কলমে। তিনি হয়ে উঠেছিলেন এক সত্যিকারের কবি। তাঁর জন্ম ১৯৩৩ সালে মুম্বাইয়ের দাদারে। মৃত্যু ১৯৭২ সালে। রচনা করেছেন অজস্র উর্দু শায়েরী। এখানে রইলো মাত্র দশটির অনুবাদ।

(৩১)
তোমার হাতের ছোঁয়ায় জেগে উঠছি।
এই বসন্ত, রিক্ত এ-জীবনে আমার
শিরায় শিরায় বুনে দিচ্ছে বিদ্যুৎ প্রবাহ!
(৩২)
তোমার নাম আমার ঠোঁটে
লেপ্টে আছে একটা কিছুর মতো।
আর আমার হারানো জীবনের সুবাস
স্মৃতির পাত্রকে করে তুলছে পূর্ণ।
(৩৩)
আমার পাওয়ার আকাঙ্খা
দিশেহারা এক সুগন্ধ।
কখনো প্রাসাদে,
কখনো ভ্রমণের তোড়জোড়ে মগ্ন।
(৩৪)
ক্ষণিকের জন্যেও ব্যথার সঙ্গে
যদি আমার কোনোরকম বিচ্ছিন্নতা হয়,
আমার হৃদয়
তখন সেই ব্যথাকে তন্ন তন্ন করে খোঁজে।
যদিও ব্যথাই আমার পরম শত্রু!
(৩৫)
জানি না, ঠিক কবে উঠেছিল চাঁদ!
দেখ, জোছনার স্নিগ্ধ রাত
সমুদ্রের ‘পর কেমন বিছিয়ে দিয়েছে পথ!
যেখানে কোনো পথিক নেই,
অথচ ক্ষণে ক্ষণে পায়ের শব্দ শোনা যাচ্ছে,
শোনা যাচ্ছে
অদৃশ্য অগনিত পায়ের শব্দ!
(৩৬)
তুমি তো মেঘ!
হাওয়ার ডানায় ডানায় ভেসে আসো,
মুহূর্তে ছেয়ে ফেলো আকাশ!
তারপর অঝর ধারায় ঝরে
ফিরে যাও বহু দূরে।
আর আমি এক কঠিন পাথর,
একই স্থানে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি।
জানি, যে চলে যায়, সে আর ফেরে না কখনো।
(৩৭)
আহা! রাত্রি এসেছে। এসেছে চুপিচুপি।
রাত্রির নীরবতায় লুকিয়েছি,
লুকিয়েছি আমি নিজেকেই।
কী সুন্দর! শ্যামলবরণ
রাত্রির শান্ত মুখাবয়ব!
স্তব্ধ রাত্রির চোখ টলমল জলে,
চোখের জলে ভেজা কোল,
রাতের নির্বাক কোল!
কী যে ভালো হয়েছে, রাত্রি এসেছে!
(৩৮)
ভালোবাসা।
ভালোবাসা এক ইন্দ্রধনু!
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে
অন্য প্রান্ত অব্দি প্রসারিত।
অবশ্য তার দুই প্রান্তই
গভীর দুঃখের প্রবল সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছে।
(৩৯)
আমার হৃদয়ে ফের জেগেছে বেদনা।
হারানো স্মৃতিরা আবার তুলেছে মাথা।
পুরনো কথারা আবার গুনগুন করছে।
ফেলে আসা নির্দয় রাতেরা
আমার হৃদয় কুরে কুরে খাচ্ছে।
হৃদকমলে জেগে ওঠছে ব্যথা!
হারানো স্মৃতিগুলো আমার
গাঢ় ক্ষতের মতো হয়ে উঠছে…
শিরায় শিরায় তার জ্বালা।
তীব্র দহন তারই।
মৃত্যু যেন বারবার আমারই নাম ধরে ডাকে!
(৪০)
প্রতিটা খুশিই হল এক বিধ্বস্ত বেদনা।
আবার প্রতিটা দুঃখই এক বিভৎস আনন্দ।
সব অন্ধকারই আসলে এক ম্লান আলো।
সব আলোই আবার এক অবসৃত অন্ধকার।
প্রতিটা বর্তমানই এক নিহিত অতীত।
আর প্রতিটা অতীত এক মৃত বর্তমান।
এই গভীর জীবনবোধ ! মুগ্ধ হয়ে গেলাম। মিনাকুমারীর এই প্রতিভা অজানা ছিল । নমস্কার জানাই। আপনাকে অজস্র ধন্যবাদ – এইগুলি আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য। অভিনন্দন।