এক সুন্দরী আর ওয়াটারলু যুদ্ধ জয়
পার্থ রায়
সুন্দরীর গুণাবলি সম্মন্ধে আমি অবগত ছিলাম না, এমনটা ভাবিবার কারণ কিছু নাই। বিশেষ করিয়া উদরের অপরাধীদের নির্মম ভাবে নিধন করিয়া গর্দান ধরিয়া ধাক্কা দিয়া বাহিরে নির্গত করিবার ব্যাপারে ভদ্রমহিলার প্রভূত ক্ষমতার প্রতি এই অধমের অগাধ শ্রদ্ধা। কিন্তু চমকিত হইবার আরও বুঝি কিছু বাকি ছিল। মাস কয়েক পূর্বে মুখবইতে এই অপরূপার বহুবিধ অজানা জনহিতকারী গুণাবলীর বিজ্ঞাপন দেখিয়া চমৎকৃত ও শিহরিত হইয়া উঠিলাম। রূপ বিশারদ এই সুন্দরী মহিলা নাকি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করিয়া বয়েসকে আটকাইয়া রাখিতে পারদর্শী। ভার্যা এবং বিবাহযোগ্যা কন্যার মাধুর্য বৃদ্ধি ঘটাইবার অভিপ্রায়ে উহাকে প্রাত্যাহিক জীবনের সহিত যুক্ত করিতে মনস্থ করিলাম। জনান্তিকে বলিয়া রাখি, আমি প্রবল ভাবে সুন্দরীর প্রেমে পড়িলাম। যেহেতু আমি বিবাহিত এবং দুইটি সন্তানের পিতা, অন্তঃপুরের এই সকল কেচ্ছা বাহিরে প্রকাশ করা সমীচীন নহে। তথাপি অন্তরের ভাবনা বাহিরে প্রকাশ করিতে পারিলে অন্তর হালকা হয় এবং নিজেকে নির্ভার লাগে। বান্ধবগন কিঞ্চিৎ অধৈর্য হইয়া পড়িতেছেন। উপায় কী? সকল কাহিনীর একটি ভূমিকা থাকে। যাহা হউক, প্রেমিকাকে স্বীকৃতি দিবার মহতী উদ্দেশে উহাকে গৃহে আনয়ন শুরু করিবা মাত্র গৃহ শান্তি বিঘ্নিত হইল। উহাকে বক্ষে ধারণ করিয়া গৃহে প্রবেশ করিতেই গৃহিণীর বদনে অকাল ঘন বারিদ ঘনঘোর হইয়া উঠিল। সুন্দরীকে সম্মুখে আগাইয়া দিতেই হাবেভাবে স্পষ্ট ইঙ্গিত “আমাকে উহার সামান্যতম অংশ গ্রহণ করা হইতে অব্যহতি দিলে সন্তুষ্ট হইব”। গৃহের দুই কনিষ্ঠ সদস্যকে খুঁজিয়া পাওয়া গেল না। অবশেষে যখন পাওয়া গেল, উহাদের মুখের অভিব্যাক্তিও তাহাদের মাতার সদৃশ পরিলক্ষিত হইল। আত্মজ হঠাৎ বিদ্যা চর্চায় প্রবল মনযোগী হইয়া বার্তা দিল “এই সময় কোন প্রকার ব্যাঘাত কাম্য নয়”। আর আত্মজার ভ্রু যুগল ইতিমধ্যে একে অন্যের সখ্য হইয়াছে। দুই মূর্তিমানের মুখের প্রাকৃতিক মানচিত্র দেখিয়া প্রতীয়মান হইল যেন এই ভদ্রমহিলাকে গৃহে প্রতিষ্ঠিত করিয়া আমি উহাদের অদ্য হইতে মাতৃ সম্বোধন করিবার আদেশ করিয়াছি। আভাষ ছিল তাই রক্তচক্ষুর সহিত দীর্ঘ সমরে অবতীর্ণ হইলাম। থরথর মেদিনী কম্পন, বারিদের গর্জন, অকাল বরিষণের নাটকীয় ছলনা শেষে যখন পক্ক পেঁপে সুন্দরীকে উহারা গ্রহণ করিল, আমার মুখমণ্ডল জুড়িয়া ওয়াটারলু যুদ্ধ জয়ের হাসি।