জয় বজরঙবলী
অমর চক্রবর্তী
নীরেশ কুমার খুব ভীতু। সেই ছোট্টবেলা থেকেই । ইস্কুলে ভয়ের জন্যই ফার্স্ট বেঞ্চে বসতে পারেনি।গাধা মধু ক্যাপটেন হয়েছে সে ইচ্ছে মতো বেত চালাত। স্যারেরা কিছ্ছু বলতনা। দাঁড়া আমি আর একটু বড় হই তোর ঠ্যাং ভাঙবো। কিন্তু বড় হয়েও সেই ভয় রয়ে গেলো!এইচ এস পাশ হল। কিন্তু শরীরে বল এলো না, মনে সাহস এলো না! দু’একদিন জিমে গিয়ে হাত ব্যথা হলে ভয়েই জিম বন্ধ করে দিলো।
ফার্স্ট ইয়ার ইংরেজি অনার্স ক্লাস।পাশে এসে বসলো সবচে সুন্দরী মেয়েটি, ভাবনা জৈন। নীরেশের ভালো লাগছে কিন্তু তখনি এলো রাজেন্দ্র আগরওয়াল । প্রায় ধাক্কা মেরে সরিয়ে পাশে বসলো। ভাবনা উঠে অন্য বেঞ্চে বসলো। নীরেশের ইচ্ছে হল রাজেনের মুখে একটা ঘুষি মারে। পারেনা সাহসের অভাবে।
নীরেশরা চারপুরুষ এই বাংলায়।পুরোনো বাড়ি। ছাদের আলসে ভেঙে গেছে। টাকার অভাবে সারানো হয়নি। মাঝরাতে সে ছাদে উঠে এলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে খুব কাঁদলো আর বলতে থাকলো, হে ভগবান আমাকে শক্তি দাও আমাকে সাহস দাও। চোখ বন্ধ করে ভাবলো ‘কৈ মিল গয়া’ হয় যদি। চোখ খুলতেই দেখে সামনে একটা ছোট্ট বানর। সে ভয় পেলো। বানরটি বললো, ডরো মত বেটে ম্যায় আ গয়া।
নীরেশ অপ্রস্তুত, সে বলে আমি তো তোমাকে ডাকিনি! বেটা তুনে বোলা হে ভগবান। তো ম্যায় আগয়া। ম্যায় কলযুগ মে এক হি ভগবান। সীতা মাঈকি আশীর্বাদ সে চারযুগ মে ম্যায় হি হুঁ। তো বেটা আজ সে তেরা ডর খতম। কোই তুঝে হারা নেহি সকতা।এই বলে সে একটু করে বড় হতে থাকে।
আর বড় হতে হবেনা বাবা। আমি বুঝেছি আমার ডাকে আপনি এসেছেন। সে মাথা পাতে। শুনতে পায় মিস্টি মধুর কন্ঠ,জয় সিয়ারাম।অনুভব করে মাথায় কে যেন হাত রাখে।
চল, ঘর চল বেটে। ইতনা মায়ুস মত হো। ঘরে আয়। খানা খাবি।
সেকি ! কোথায় গেলেন বজরঙবলী! মাথায় যে হাত রেখেছেন তার পিতাজী, বাবা। বাবাই তবে সব । বাবাই সাহস জোগান। নীরেশ বুঝতে পারে বজরঙবলী কল্পনায় কি বোঝাতে চাইলেন। সে ধীরে সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকে আর চোখে পড়ে পাশের বাড়ির ছাদে পতপত করে উড়ছে হনুমানজীর পতাকা। সে অস্ফুটে বলে ওঠে জয় বজরঙবলী,জয় হনুমান।