খেলার সাথী
পিন্টু ভট্টাচার্য্য
মহিলাটিকে দেখেই চমকে উঠল অজয়। কতবছর পর মিনুকে দেখছে সে? পঁচিশ বছর? মনে মনে হিসেব করে দেখল খাঁটি সাতাশ বছর। ওরা যখন চলে যায় অজয় তখন ক্লাস সেভেনে পড়ে,বারো বছর বয়স। এখন তার বয়স উনচল্লিশ। হিসেব করলে সাতাশ বছরই দাঁড়ায়। এত বছর পরে দেখলেও মিনুকে চিনতে বিশেষ অসুবিধা হল না অজয়ের।তার প্রথম কারণ এই সাতাশ বছরে মিনুর চেহারা একটু ভারিক্কি হয়েছে বটে, বয়সের ছাপ পড়েছে চোখে-মুখে কিন্তু মুখের আদলটি পাল্টায়নি।খুব সামান্য আয়াসেই সেই কিশোরী মেয়েটিকে খুঁজে পাওয়া যায় এই মহিলার মধ্যে। দ্বিতীয় কারণটা একান্তই ব্যক্তিগত।সেদিনের সেই মেয়েটি এমন একটা ঘটনা ঘটিয়েছিল যে,কৈশোর,যৌবন পেরিয়ে প্রায় প্রৌঢ়ত্বে উপনীত হয়েও,ঘটনাটি সে ভুলতে পারেনি।
মিনুও যে তাকে চিনতে পেরেছে,তা তার তাকানো দেখেই বুঝতে পারল অজয়। দুজনেই কয়েক মুহুর্ত পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইল্ পরস্পরের দিকে। তারপর অজয়ই প্রথম কথা বলল— “মিনু না?”
মিনুকে উত্তর দেওয়ার কোনো সুযোগ না দিয়েই তনু বলে উঠল— “তুমি চেনো একে?”
অজয় একটু ইতস্তত করে বলল —”চিনতাম,খুব ছোটোবেলায়। আমি তখন ফাইভ সিক্সে পড়ি। আমাদের পাশের বাড়িতে ছিল কিছুদিন। একসঙ্গে খেলা করেছি কত। “
খেলা কথাটার ওপর একটু অনাবশ্যক জোর দিল অজয়। তারপর মিনুর দিকে ফিরে জানতে চাইল—”তুই চিনতে পেরেছিস আমায়?”
মিনু কুন্ঠিতকন্ঠে বলল —”তোমাকে দেখে চিনতে পারতাম না। চেহারা তো একেবারে পালটে গিয়েছে। চিনতে পারলাম ওই ছবিটা দেখে।” বলে দেওয়ালে টাঙানো একটা ফটোর দিকে ঈঙ্গিত করল মিনু। মায়ের সঙ্গে অজয়ের ছোটোবেলায় তোলা একমাত্র ছবি। বছর দুয়েক আগে মা মারা যাবার পর ছবিটা এনলার্জ করে বাঁধিয়ে টাঙানো হয়।
ফটোটার দিকে একবার তাকিয়ে মৃদু হেসে অজয় বলল—”তুই কিন্তু একেবারে একই আছিস, একটুও বদলাসনি।” তারপর প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে জানতে চাইল—”তুই এখানে থাকিস কোথায়? আমার খোঁজ পেলি কি করে?”
উত্তর দিল তনু —”আয়া সেন্টার থেকে পাঠিয়েছে। কাল তুমি অফিসে বেরিয়ে যাওয়ার পর এসেছিল। আমি তখন স্কুলে বেরোবো, হাতে সময় ছিল না,তাই আজ আসতে বলেছিলাম।”
এতক্ষণে ব্যাপারটা পরিস্কার হল অজয়ের কাছে। কয়েকদিন আগে অজয়ের বাবার স্ট্রোক হয়ে বাঁ দিকটা অচল হয়ে গিয়েছে। তার কাছে সর্বক্ষণ থাকার জন্য একজন আয়ার দরকার।সেইজন্য আয়া সেন্টারে যোগাযোগ করা হয়েছিল,তারাই পাঠিয়েছে মিনুকে।মিনু আয়ার কাজ করে জেনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল অজয়ের।কিন্তু ভেবে দেখল তার বেশি আর কিই বা হওয়ার ছিল।
মিনুর সঙ্গে কথা পাকা হয়ে গেল।অজয়রা দিনে-রাতে দুজন আলাদা আলাদা আয়া রাখবে ভেবেছিল,কিন্তু মিনুকে পেয়ে সিদ্ধান্ত বদল করল। হাজার হোক মিনু পূর্ব-পরিচিত,একেবারে অচেনা কারুর থেকে তাকে অনেক বেশি বিশ্বাস করা যায়।তাই দিনে রাতে দুজন আলাদা আয়া রাখার বদলে ঠিক হল মিনু চব্বিশ ঘন্টাই তাদের বাড়ি থেকে বাবার দেখাশোনা করবে।মিনুরও তাতে অসুবিধা নেই। সংসারে তার কেউ নেই।তিন মেয়ের অল্প বয়সেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে।বছর দুয়েক আগে বর মারা যায় তিনদিনের জ্বরে।তারপরেই পেটের দায়ে আয়ার কাজ শুরু করে মিনু।
মিনুকে পেয়ে অজয় এবং তনু – দুজনেই স্বস্তি পেল।তারা দুজনেই চাকরি করে।মিনু কাছেই একটা গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা। অজয়ের অফিস একটু দূরে। বাড়ি ফিরতে তার প্রায়ই সন্ধ্যে পেরিয়ে যায়। অজয় আর তনুর একটাই মেয়ে,সে মায়ের স্কুলেই পড়ে,মায়ের সঙ্গেই স্কুলে যাতায়াত করে। বাবাই বাড়িটা সারাদিন আগলে রাখেন।কিন্তু এখন তিনি শয্যাশায়ী,বিছানা থেকে ওঠার ক্ষমতা নেই।এই অবস্থায় একজন অজানা-অচেনা আয়া বাড়িতে রেখে অফিসে গেলে সারাদিন দুশ্চিন্তার অবধি থাকত না। মিনুকে পেয়ে সেই চিন্তা অনেকটাই দূর হল তাদের। পূর্ব-পরিচিতের প্রতি একটা আলাদা বিশ্বাস তো থাকেই।
পরের দিন সকালেই একটা ব্যাগে প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে মিনু চলে এলো অজয়দের বাড়ি। বাবার ঘরের পাশেই একটা ছোটো ঘর দেওয়া হল মিনুকে।সেই ঘরে সে তার জিনিসপত্র রাখবে, রাতে শোবে বাবার ঘরের মেঝেয়।তাতে রাতে বাবার সুবিধে-অসুবিধে দেখা সহজ হবে। বাবার সব কাজের দায়িত্ব বুঝে নিল মিনু।
সেদিন রাতে ভালো ঘুম হল না অজয়ের। বারবার তার চোখের সামনে ভেসে উঠতে লাগল ছোটোবেলার কথা, গ্রামের বাড়ির কথা।তাদের গ্রামের বাড়ির পাশেই ছিল একটা ফাঁকা দোতলা বাড়ি।বাড়ির মালিকরা থাকত শহরে । বাড়িটা পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল। একদিন সেই বাড়িতে এসে উঠল একটা পরিবার।বাড়ির মালিকরাই তাদের থাকার অনুমতি দিয়েছিল— একটা পরিবার আশ্রয় পাবে, বাড়িটারও দেখভাল হবে। বাড়ির উঠোনে গজিয়ে ওঠা জঙ্গল পরিস্কার করে নীচতলার দুটো ঘর নিয়ে তারা বসবাস শুরু করল।
মিনু ওই পরিবারেরই মেয়ে। মিনুরা পাঁচ বোন, এক ভাই। মিনু ছিল চার নম্বর। মিনুর বাবা গ্রামে গ্রামে মেয়েদের নানারকম সাজের জিনিস ফেরি করত।বাড়ি থেকে বের হত ভোরবেলা, ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে পেরিয়ে যেত। মিনুরা ছয় ভাইবোন, বাবা-মা আর ঠাকমাকে নিয়ে ছিল বিরাট পরিবার।সংসারে অর্থকষ্ট লেগেই থাকত।কিছুদিনের মধ্যেই মিনুর মা দুটো বাড়িতে বাসন মাজার কাজ নিল।
অজয়ের মা নরম মনের মানুষ ছিলেন।লোকের কষ্ট দেখলে তার কষ্ট হত।বিশেষ করে ছোটো ছেলেমেয়েদের কষ্ট তিনি একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না।মিনু আর তার ভাইবোনেদের ডেকে প্রায়ই তিনি এটাসেটা খেতে দিতেন।ক্রমে ক্রমে পাড়ার ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিনুদের বেশ ভাব হয়ে গেল।তারাও হয়ে গেল অজয়দের খেলার সঙ্গী।
মিনু অজয়ের থেকে বছরখানেকের বড় ছিল।প্রায় সমবয়সী বলে দু’জনের ভাব হয়ে গেল খুব।মিনু প্রায় সারাদিন তাদের বাড়িই পড়ে থাকত।অজয়ের সঙ্গে খেলা করত,হাতে হাতে মায়ের কাজ করে দিত,এমনকি অজয়ের সঙ্গে লেখাপড়াও করত।মা মিনুকে পড়াও দেখিয়ে দিতেন। মিনুর দিদিরা ইস্কুলে ভর্তি না হলেও মিনু আর তার ছোটো দুই ভাইবোন ভর্তি হয়েছিল। লেখাপড়ায় মিনুর খানিকটা উৎসাহও ছিল।
মিনুর মেজদি ছিল যেমন সুন্দরী তেমনি মিশুকে।বাড়িতে একটুও মন বসত না তার।দিনরাত পাড়াময় টোটো করে ঘুরে বেড়াত আর পাড়ার উঠতি বয়সের ছেলেদের সঙ্গে হাহা হিহি করে গল্প করত।তাকে সবচেয়ে বেশি দেখা যেত সুজনকাকার ছেলে তন্ময়ের সঙ্গে।মিনুর সেই মেজদিকে নিয়েই পাড়ায় একদিন গোলমাল পাকিয়ে উঠল।গোলমালটা যে ঠিক কি নিয়ে হয়েছিল অজয় ভালো বুঝতে পারেনি তখন,কিন্তু সন্ধ্যেবেলায় মিনুর বাবা বাড়ি ফেরার পর যখন পাড়ার বয়স্ক লোকেরা এসে মিনুর বাবা-মাকে খুব শাসিয়েছিল আর পাড়াছাড়া করার হুমকি দিয়েছিল,তখন অজয়ের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে মিনুরা আর বেশিদিন এ পাড়ায় থাকতে পারবে না।সেদিন সবচেয়ে বেশি চেঁচামেচি করেছিল সুজনকাকাই।তার কিছুদিন পরেই মিনুরা পাড়া ছেড়ে চলে গিয়েছিল আর যাবার ঠিক আগের দিন দুপুরে সেই অদ্ভূত কান্ডটা ঘটিয়েছিল মিনু।
কয়েকদিনের মধ্যেই তনুর সঙ্গে খুব ভাব হয়ে গেল মিনুর।বাবাকে দেখাশোনার পাশাপাশি সংসারের অন্যান্য কাজেও তনুকে সাহায্য করতে লাগল ,ঠিক যেভাবে মাকে সাহায্য করত।অল্প কয়েকদিনের মধ্যেই পরিবারের একজন হয়ে উঠল মিনু।তার অক্লান্ত সেবাযত্নে বাবাও ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিল।একটা আকস্মিক বিপর্যয়ে সংসারের যে সুর-তাল-ছন্দ কেটে গিয়েছিল,আবার তা ফিরে আসতে লাগল ধীরে ধীরে।ঠিক এই সময়েই ঘটল দ্বিতীয় বিপর্যয়।বাথরুমে পা পিছলে পড়ে গিয়ে তনুর মায়ের ডান পাটা গেল ভেঙে।অজয় তনু আর মেয়েকে নিয়ে ছুটল শ্বশুর বাড়ি।চিকিৎসার যাবতীয় ব্যবস্থা করা হল।তনুর ভাই সবে চাকরি পেয়েছে,এখনও বিয়ে-থা করেনি।মাকে দেখাশোনা করার জন্য তনু থেকে থেকে গেল মায়ের কাছে।অজয় বাড়ি ফিরে আসল,তার থাকার উপায় নেই।অসুস্থ বাবাকে শুধুমাত্র মিনুর ওপর ছেড়ে রাখা যায় না।দু’কুলই রক্ষা করা প্রয়োজন।
বাড়িতে তনু নেই,মেয়ে নেই।অসুস্থ,বৃদ্ধ বাবা শয্যাশায়ী।প্রায় অচৈতন্য অবস্থা।তার দরজার সামনে শুয়ে আছে মিনু।নিজের বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছিল অজয়,কিছুতেই ঘুম আসছিল না তার।বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল সাতাশ বছর আগে তাদের গ্রামের বাড়ির চিলেকোঠার ঘরে মিনুর ঘটানো সেই অদ্ভূত ঘটনাটা।এই সাতাশ বছরে অলস অবসরের মুহুর্তে যে ঘটনা বারবার তাকে বিব্রত করেছে।আজও চোখ বুঁজে সে স্পষ্ট দেখতে পেল সেই দুপুরটাকে।
কোনো একটা কারণে সেদিন স্কুল ছুটি ছিল।দুপুরে খেয়ে উঠে বই নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল অজয়।মা শুয়েছিল পাশের ঘরের খাটে।দুপুরে একটু গড়িয়ে নেওয়াটা ছিল মায়ের অভ্যেস।জানলায় ঠকঠক শব্দ করল মিনু।অজয় দরজা খুলে দিতেই সে ঘরে ঢুকে বলল—আমরা কাল চলে যাচ্ছি, জানিস?
অজয় জানত মিনুরা পাড়া ছেড়ে চলে যাবে,কিন্তু সেটা যে এত তাড়াতাড়ি তা তার জানা ছিল না।সে শুধু অস্ফুটে বলল—কালই?
মিনু অন্যমনস্কভাবে উত্তর দিল –হ্যাঁ।বাবা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে।আমরা রানাঘাটে উঠে যাবো।তারপর অজয়ের কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করল—আমি এখান থেকে চলে গেলে আমার কথা মনে পড়বে তোর?
অজয় এ প্রশ্নের কোনো উত্তর দিল না,শুধু চোখদুটো ছলছল করে উঠল তার।মিনু তার ছলছল চোখদুটোর দিকে কয়েক মুহুর্ত একদৃষ্টে তাকিয়ে থেকে কেমন একটা রহস্যময় গলায় বলল—একটা খেলা খেলবি?
–“কি খেলা? দু’জনে খেলা যাবে?”
–“নাম জানিনা।তবে এই খেলাটা দু’জনেরই।”
সেই অজানা খেলাটা খেলবার জন্য মনের মধ্যে একটা তীব্র আকুতি অনুভব করল অজয়। সে ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালো।
চল,তাহলে ওপরে যাই,চিলেকোঠার ঘরে।বলেই সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল মিনু।অজয় তাকে অনুসরণ করল।চিলেকোঠার ঘরে ঢুকেই দরজাটা আবজে দিয়ে দ্রুত নিজের জামাটা খুলে ফেলল মিনু।মিনুর কান্ড দেখে একেবারে হতবাক হয়ে গেল অজয়।তার বয়স তখন মাত্র বারো বছর।নারী-পুরুষের সম্পর্কের গোপন রহস্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা না থাকলেও মেয়েদের প্রতি আলাদা আকর্ষণ তৈরি হতে শুরু করেছিল।মিনুর এই অদ্ভূত আচরণে সারা শরীরে একটা বিচিত্র শিরশিরানি টের পেল অজয়,হাত-পা কাঁপতে লাগল থরথর করে। শুধুমাত্র সাদা রঙের একটা টেপজামা পরে থাকা মিনুর দিকে সরাসরি তাকাতে ভীষণ অস্বস্তি হল তার। মেঝের দিকে তাকিয়ে অতি ক্ষীণ কন্ঠে জিজ্ঞেস করল—জামা খুললি কেন?
মিনুর ব্যবহারে কিন্তু তেমন বিকার দেখা গেল না।গলার স্বরে সামান্য লজ্জা মিশল শুধু —”এই খেলাটা জামা খুলেই খেলতে হয়। আমি মেজদিকে তন্ময়দার সঙ্গে খেলতে দেখেছি। তুইও জামা খুলে ফেল।” বলেই নিজের টেপজামাটা খুলতে উদ্যত হল।
আতঙ্কে হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল অজয়ের। সে কোনরকমে দরজাটা খুলে দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে মায়ের পাশে গিয়ে উপুর হয়ে শুয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল। মা তখন অঘোরে ঘুমাচ্ছে।
সাতাশ বছর পরেও সেদিনের কথা মনে করে গলা শুকিয়ে গেল অজয়ের। বিছানা থেকে উঠে ঢকঢক করে জল খেল খানিকটা। কিন্তু শরীর ও মন শান্ত হল না কিছুতেই। বাবার ঘরের সামনে শুয়ে থাকা ঘুমন্ত মিনুকে শুধু একবার দেখার জন্য কেমন একটা অমোঘ আকর্ষণ অনুভব করতে লাগল অজয়। অন্যায় বুঝেও সেই আকর্ষণকে উপেক্ষা করার ক্ষমতা হল না তার।নিঃশব্দে দরজা খুলে পা টিপে টিপে মিনুর মাথার কাছে এসে দাঁড়াল। মিনু কিন্তু সজাগই ছিল। অজয়ের উপস্থিতি টের পেয়েই সে উঠে বসে বলল—”তুমি ঘুমাও নি এখনও? কিছু বলবে?”
একটু থতমত খেলেও অজয় স্বাভাবিক স্বরেই বলল —”আমার ঘরে আসবি একবার? একটা কথা বলতাম।”
–“না, তোমার বাবার দরকার হতে পারে। যা বলার এখানেই বল।”
— “এখানে? কথাটা একটু—-” বলে বাবার ঘরের দিকে ঈঙ্গিত করল অজয়।
–“ঘুমাচ্ছে,শুনতে পাবে না। নিশ্চিন্তে বল।”
আশ্বাস পেয়ে অজয় বসে পড়ল মিনুর পাশে। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে খু্ব নিচুস্বরে জানতে চাইল —”সেই চিলেকোঠার ঘটনাটার কথা মনে আছে তোর?”
–“আছে।” যন্ত্রচালিতের মত শব্দটা উচ্চারণ করে অজয়ের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মাটিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করল মিনু।
— “সেই খেলাটা আজ করা যায় না?” ঠিক এই কথাগুলোই যে বলবে একটু আগেও ভাবেনি অজয়, কিন্তু কিভাবে যেন মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল।
মিনু ঘুণাক্ষরেও ভাবতে পারেনি অজয় এমন কথা বলতে পারে। কথাগুলো আকস্মিক একটা বড় ঢেউয়ের মত আঘাত করল তার হৃদয়ে। চকিতে একবার অজয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে,কয়েক মুহুর্ত চুপ করে থেকে, দৃঢ়স্বরে বলল—”না,তা আর সম্ভব নয়। সেই বয়সে যেটা খেলা ছিল, এই বয়সে সেটা মানসিক বিকার। সেই বিকারের ফলাফল বড় ভয়ঙ্কর।”
অজয়ের মুখে কোনো কথা জোগালো না। ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল মিনুর মুখের দিকে। জিরো পাওয়ারের আবছা আলোয় বড় রহস্যময়ী লাগছিল তাকে।
অজয়ের মুখের দিকে অন্তর্ভেদী দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে মিনু হঠাৎই তার মাথাটা নিজের কোলের মধ্যে টেনে নিয়ে পরম যত্নে হাত বুলাতে বুলাতে বলল –”অনেক অভিজ্ঞতা,অনেকগুলো বছর পেরিয়ে এসেছি। পিছনে ফিরে আর লাভ কি?যাও,ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়।”
অজয় এবারও কোনো কথা বলল না। নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
দুঃশাসন নয় সুশাসন। এই সুশাসনের কাহিনী মানুষকে সচেতন থাকতে উৎসাহিত করবে বলে মনে হয়। ধন্যবাদ লেখক, গল্পকার।
ধন্যবাদ আপনাকে।
বেশ ভালো লাগলো স্যার। সহজ-সরল ভাষায় খুব যত্নে লিখেছেন।
আমার দৃঢ় বিশ্বাস গল্পের মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় থাকা বার্তাটি নিঃসন্দেহে সমাজের অগ্রগতিতে সহায়ক হবে।
বাঃ উত্তরণের গল্প।