কবিতাঃ উত্তরা সিরিজের ২টি কবিতা – অমিত চক্রবর্তী ( ক্যানসাস, উত্তর আমেরিকা)

উত্তরা সিরিজের ২টি কবিতা
অমিত চক্রবর্তী

১)
উত্তরা, নৃত্যশিক্ষায়

কস্তুরীমুখ, তাম্রচূড়া মুদ্রা শেখাতে তাঁর বাহু ছুঁয়ে গেল
পার্শ্বস্তনে, অপরিকল্পনায় –
সে তো নারী, নর্তকী বৃহন্নলা, হয়তো বা ষণ্ঢতিল, তবু তার স্পর্শে
দামিনী কেন নেচে নেচে শিরদাঁড়া বেয়ে
কেন কম্পমান পায়ের তলা, শিরশিরানি আমার
কিণাঙ্কিত বাহুর ছোঁয়ায়
কেন, কেন আমার মনোরঞ্জন নারী স্পর্শে
কী আমার প্রকৃতি, জ্যোতির্ময় ভাই উত্তর,
কী আমার অভিযোজন?
একটি বার স্পর্শ, একটি বিদ্যুৎ
ওই মেদহীন কাকযব, শঙ্খসাদা বালা তার
লম্বা বেণী, সোনার অঙ্গদ
ওলটপালট জীবন আমার, ওলটপালট সত্ত্বা
প্রশ্ন, প্রশ্ন শুধু দেহভাবে, স্বভাবসূত্রে
এ কী দ্বিধায় আমায় রেখে গেলে, আচার্য্যা,
ষোড়শীর সহজ স্বল্প জীবনে, এ কী দ্বিধা, নৃত্যশেষে !

২)
উত্তরা, বৃহন্নলাকে

ঠিক ভয় নয়, সংকোচ হয়তো, লুকোনো একটা ভাললাগা আমার
শরীরে, কাছে গিয়ে দাঁড়ালে, সে চোখ তুললে। নিশ্চয় সৈরিন্ধ্রীর
ছলনা, অথবা কৌতুক সবই, কিন্তু আমিও তো জিততে চাই,
তাই সহজে বিশ্বাস ছড়ায়, আমি ছাড়া কেউ নেই আর
বৃহন্নলাকে পেতে উত্তরের সারথি সাজে। না বোলো না আচার্য্যা,
এই দেখো আমার দু’ চোখে জল, গলা ধরে আসে অজান্তে,
বক্ষ নিতম্ব কেঁপে ওঠে কি জানি কী আশঙ্কায়।

তুমি অর্জুনের সারথি ছিলে,
বীরশ্রেষ্ঠ অর্জুন, যূথপতি হস্তিনায়ক, আমাকে ফিরিয়ে দেবে?
উত্তরের সারথি না হয়ে? আমি সামনে দাঁড়িয়ে প্রিয়শিষ্যা,
ষোড়শী উত্তরা, স্বপ্নে আমি নাগবধূ, গুরু নিতম্বিনী, তুমি ধনুর্ধর
আমার স্বপ্নে, এই দ্যাখো পা টলে যায়, ঘূর্ণিরোগে কড়িকাঠ দোলে,
আমাকে ফিরিয়ে দেবে? আমি জয় খুঁজতে এসেছি,
সামান্য জয়, আসলেই সামান্য এ জয়, ফিরিয়ে দেবে আমায় –

রাজকন্যা আমি, মুখে যদি নাও বলি ভালবাসা,
নারী বৃহন্নলাকে ভালবাসার কথা, আমাকে ফিরিয়ে দেবে?

2 thoughts on “কবিতাঃ উত্তরা সিরিজের ২টি কবিতা – অমিত চক্রবর্তী ( ক্যানসাস, উত্তর আমেরিকা)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *