অপেক্ষা
অপূর্ব পাল
প্রিয় অপেক্ষা,
এসো তোমার নাকে নোলক পরিয়ে দিই ,কানে দুল। এতো মধুর কেন তুমি..এতো!সাদা প্রমিলা ফুলে হাসির বাহার।প্রিয় অপেক্ষা, শৈশব থেকে কৈশোর পেতে এভাবেই পাশে ছিলে তুমি। দুইবেনী নীল ফ্রক পরা পরীটির জন্য আকাশে তাকিয়ে থেকেছি বহুদিন। মেজদির বইতে আঁকা সেই ছবি দেখেছি তার। ঠাকুমার বুকের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ার সময় কি অদ্ভুত পরী পরী গন্ধ আর ওম্। অবশেষে মাটির পৃথিবীতে সে নেমে এলো যেদিন তখন আমার মাত্র দশ। ক্লাস ফাইভ। আলতা পায়ে হেঁটে যাওয়া কিশোরীর পথের ধুলো কুড়িয়ে বুকপকেটে রেখে দিয়েছি।সবার অলক্ষ্যে ।ভালো ছেলে আমি ! আজো কাউকে বলিনি সে কথা। ভালো ছেলে হয়ে আছি তো আজোও। বুক পকেট ভরা বেদানা রংয়ের নিঃসঙ্গতা নিয়ে এতোটুকু অভিযোগ করিনি কারো কাছে কোনদিন । ঈশ্বর সাক্ষী।
প্রিয় অপেক্ষা, কতটুকু সয়েছি তুমি তা জানো। তবুও দেখো চোখের জল নিরন্তর..। চোখদুটি আজও… ওরা বড় ছেলেমানুষ। ওদের একটু বোঝাবে তুমি ? এমন চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হয় কেন আকাশের দিকে তাকিয়ে ; হারিয়ে যাওয়া বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে একদিন মাকে হারিয়ে ফেলেছি। যাই বলো.. ভালো হয়েছে ! প্রিয় মানুষটি… সেও একদিন এই জমিন পতিত রেখে চলে গেছে ভিনগ্রহে। একসঙ্গে দেখা পাবো তাঁদের।
অপেক্ষা, ভিনগ্রহে তুমিও আজ সাতান্ন। কি আশ্চর্য!তোমার শরীর ছুঁয়ে দিতেই উড়ে যায় ধুলোবালি অতীত।বেরিয়ে আসে ঝকঝকে শৈশব তোমার!কচি কলাপাতা দুটি হাত ! কিশোরীর আকাশি নীল ফ্রক! নব যৌবনার লাল শাড়ি টিপ্! ধুলো সরিয়ে সরিয়ে এইসব পুরনো গন্ধে বসে থাকি। আমার খিদে পায় না আর। হেরে গেছে… হারিয়েও গেছে বালিঘড়ির শশব্যস্ত সময়।
অপেক্ষা, এতো মধুর তুমি ! দেখো এ পতিত জমিনে স্মৃতি বীজ অঙ্কুরিত আজ … লতা গুল্ম ঢেঁকি শাক… ঘাস। এ দেহ না আসা চিঠির অলৌকিক ডাকঘর।
অপেক্ষা, আর হয়তো বেশি দিন নেই তুমিও। সেই ভালো। আমিও এ পতিত জমিন রেখে পৌঁছে যাব প্রকৃতির মর্মর থেকে অন্য কোন মর্মরে। অপ্রকাশিত হবে প্রকটিত শরীর আমার। এ জমিন জুড়ে আগাছা লতা পল্লব। সবুজ ডাকঘরে কেবল চিঠি আসে না আর! তবুও জীবনভর ‘অপেক্ষা’ শুধু তুমি, তুমিই আমার।
এসো তোমার নাকে নোলক পরিয়ে দিই। চুলের গহীনে হু হু বাতাস আর বাতাবি লেবুর ফুল।
সত্যিই। অপেক্ষার জন্য অপেক্ষা করি আমরা কতোদিন, কত্তোদিন। ধন্যবাদ।