মুক্তগদ্যঃ কবিতার বিষয়ে দু চারটে কথা – অরিন্দম মুখোপাধ্যায়

কবিতার বিষয়ে দু চারটে কথা
অরিন্দম মুখোপাধ্যায়

কবিতায় স্পেস(space) কি? কেনই বা স্পেস দেবো? কবিতায় কি স্পেসের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে? কবিতার ক্ষেত্রে এটা সত্যি ভীষণ ভাবে জরুরী একটা মৌলিক প্রশ্ন। ফিজিক্সের ভাষায় স্পেস হল মহাশূন্য। অভিধানও তাই বলে, স্পেস মানে ফাঁকা বা শূন্য। কিন্তু সাহিত্যের এতে কিছু যায় আসে না আর কবিতার ক্ষেত্রে তো নয়ই। মুদ্রন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মুদ্রনের বিন্যাস অনুযায়ী স্পেস মূলত দুই প্রকার, এক White space আর দুই Black space এই ভাগেই ভাগ করা হয়েছে। White space অর্থাৎ পৃষ্ঠার উপর, নীচ, ও দুই ধার। আর কবিতার ক্ষেত্রে না-লেখা অংশটি। এছাড়া কবিতার ক্ষেত্রে দুটো stanza বা স্তবকের মাঝে যে ফাঁক বা স্পেস। এই বিষয়ে বিবিধ আলোচনা হয়েছে, অনেকেই তাঁদের লেখা-লিখিতে, প্রবন্ধ, অনেক কবি বা কবিতা লেখক এবং কবিতা বিষয়ক সমালোচক ও প্রাবন্ধিকরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন। তাঁদের মতে আধুনিক কবিতার মুদ্রন প্রকাশে দৃষ্টিগ্রাহ্যতা, সৃষ্টি বা নতুন বিন্যাসের উপর স্পেসের বিষয় বা গুরুত্ব নির্ভর করে। মার্লামে, অ্যাপলিনার, মায়াকোভসকি, কমিংস, অমিয় চক্রবর্তী প্রভৃতি কৃতকর্মা কবির আলোচনা ও প্রয়াস স্মরণীয়। এছাড়া কবিতা ও মুদ্রণকে প্রাধান্য দিয়ে Augusto de Campos,  Haroldo de Campos & Decio Pignatari তাঁর প্রবন্ধ ‘Pilot Plan for Concrete Poetry’ যেটা নেওয়া হয়েছে ‘Concrete Poetry’ নামক বইটি থেকে। এছাড়া Peter Stockwell, তাঁর বইতে ‘Cognitive Poetics’ এ কবিতায় স্পেসের ব্যবহার সম্পর্কে আলোচনা করেন। এঁরা কম বেশি মোটামুটি সকলেই এক মত যে মূলত শ্বাস নেওয়ার প্রয়োজনে এই স্পেস ব্যবহৃত হয় বা করা উচিত। এছাড়া তাঁদের আরও বক্তব্য যে কবিতার ক্ষেত্রে লাইন শেষ বোঝাতে ও স্পেস ব্যবহার করা যেতে পারে। অর্থাৎ তিনটে বা চারটে বা পাঁচটা শব্দে একটা লাইন বা বলার শেষ বা বক্তব্যের শেষ এই বোঝাতে স্পেসের ব্যবহার করা বিধিসম্মত।

এঁদের আরও বক্তব্য হল, যে পৃষ্ঠায় কবিতা লেখা হয় সেটা white space. মানে পুরো পাতা কেই ওঁরা স্পেস হিসেবে দেখছেন। এখানে স্পেস মানে কিন্তু দুটো স্তবকের মধ্যে অন্তর্বর্তী থামা বিশ্রাম নয়। যেহেতু পুরো পৃষ্ঠাটা কে ওঁরা স্পেস ধরছেন ফলে ওঁদের বক্তব্য হল কবিতা যে কোন ভাবেই বা পৃষ্ঠার যে কোন জায়গা থেকে কবিতা লেখা শুরু হতে পারে। কবির কবিতাকে বলার বা পড়ার উপর স্পেস বা ফাঁক কে ব্যবহার করার প্রশ্ন উঠছে না। আমি কোনোভাবেই এবং কোনোমতেই এই ভাবনার সঙ্গে একমত নই। এছাড়া হারল্ড ক্যাম্পসদের মতে ব্ল্যাক স্পেস (Black space) কালি দিয়ে লেখা অংশের যে ফাঁক বা অন্তর্বর্তী থামা বিশ্রাম তাকে বুঝিয়েছেন। কিন্তু তা হোয়াইট স্পেস এর মতো নয়। তাঁরা আরো মানে করেন যে ওনারা যেটা বলতে চাইলেন সেটা হল এই রকম, ধরে নেওয়া যাক, যদি এমন করে লেখা হতো ‘কালিদিয়েলেখাঅংশের’ (কালি দিয়ে লেখা অংশের); এতে কোন স্পেস নেই। লেখাটা হল বটে কিন্তু বুঝতেও বেশ অসুবিধা হল বা সহজ ভাবে বোঝা ও পড়া গেলো না। একটা বাক্য বা বাক্যাংশ বা পাশাপাশি বসে থাকা শব্দমন্ডলী তখনই অর্থ পূর্ণ হয়ে উঠবে যখন দুটি শব্দ বা শব্দমন্ডলীর মধ্যে স্পেস থাকবে। এই ভাবনার সঙ্গে কিছুটা হলেও মনে নিতে হয় তাই সেই অর্থে এক মত। এই স্পেসকে Jane Stabler, Martin H. Fischer, Andrew Michael Roberts এবং হ্যারল্ড সাহেবরা ব্ল্যাক স্পেস (Black Space) বলে চিহ্নিত করেছেন। ওনারা আরও বলেছেন কবিতায় হোয়াইট স্পেস কবিতার লাইন বা কবিতার পঙক্তির শেষকে নির্ধারণ করে ব্ল্যাক স্পেস এর দ্বারা বা সাহায্যে।

এ ছাড়াও আরও একদলের বক্তব্য হল (বিশেষ করে কবিতার ক্ষেত্রে), দুটো স্তবকের মধ্যে যে ফাঁক সেটাই কবিতার ক্ষেত্রে মূল স্পেস বা ফাঁক। এই স্পেস ব্যবহারে কবি অনেক কিছু কে বুঝাতে পারেন। এটা একটা বক্তব্যের শেষ আর একটা বক্তব্যের শুরুর অন্তর্বর্তী জায়গা। এই স্পেস দুটি স্তবকের মধ্যে সেতু স্থাপন করে বলেই তাঁদের অভিমত। আমি এই সব মান্য ব্যেক্তিদের কোন রকম অশ্রদ্ধা না করেই বলছি যে কবিতায় স্পেস ব্যবহার কবিরা মনে হয় দুটো স্তবক কে আলাদা বা ভিন্ন ভাব-বক্তব্যকে আলাদা আলাদা করে উপস্থাপন বা বোঝানোর জন্য নয়। ব্যাকারণ গত ভাবে হতে পারে। ধরে নিলাম বাচিক শিল্পীরা বা পাঠকরা পড়ার রীতি হিসেবে মানতেও পারেন। কিন্তু একজন কবিতা প্রয়াসী হিসেবে এই বক্তব্য কে মানতে আমি একদমই নারাজ। আমার কাছে স্পেস একটা অন্য বিষয়, যা এই সব তথাকথিত ব্যকারণ গত বিষয় একেবারেই নয়। যদিও আমি বিশ্বাস করি শিল্পীর তাঁর প্রিয় শিল্পের ব্যাকরণ বা ক্রাফট অবশ্যই জানবেন মানে ব্যাকারণ জানাটা তাঁর ভীষণ ভাবেই জরুরী। কিন্তু তাই বলে ব্যাকারণ তাঁর শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করবে এটাও আবার হতে পারে না, অন্তত আমিতো তেমনটাই বিশ্বাস করি।

এতক্ষণ যে কথাগুলো বললাম বা বলা ভালো লিখলাম, এগুলো একটাও আমার বক্তব্য না। এগুলো ব্যাকরণ হতে পারে, সুচিন্তিত বক্তব্যও হতে পারে। এঁরা প্রত্যেকেই খুব সম্মানীয় মানুষ। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার কবিও; গুণী ব্যক্তি। এই সব কথা বহু চর্চিত। তবু নিজস্ব বক্তব্য তুলে ধরার আগে পূর্বসূরিদের কাজের উল্লেখ করে নেওয়াটা একান্ত ভাবেই উচিত। তা না হলে আমি যে বিষয়টা নিয়ে বলবো সেটা কেন আলাদা সেটা বুঝতে অসুবিধে হবে সকলের। পূর্বসূরিদের কথা বা লেখাকে আমি অশ্রদ্ধা করছি না কিন্তু কবিতায় স্পেস নিয়ে তাঁরা যা বলে গেছেন তা নিতান্তই গতানুগতিক। আমার মনে যিনি লিখছেন তিনি স্পেসকে ওই ভাবে ব্যাবহার করেন না এমন কি যিনি বাচিক শিল্পের কাজ করছেন তিনিও না। তাই আমি সকলকেই সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে দুচার কথা বলতে চাই। আমার মনে হয় একজন কবি বোধহয় মস্তিষ্ক দিয়ে বা এতো ভেবে কবিতায় স্পেস ব্যবহার করেন না। উনি স্পেসের ব্যবহার করেন হৃদয় দিয়ে। ধরা যাক কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের “জরাসন্ধ” কবিতাটি। এই কবিতাটি গদ্য আকারে লেখা অর্থাৎ কবিতার গঠন বা আকৃতি গদ্যের আকার। তাহলে গল্প বা গদ্য যে ভাবে আমরা পড়ি সেই ভাবে পড়লেই হতো। কিন্তু সেই ভাবে কবিতাটিকে পড়লে কবিতাটি শুনতে বা পড়তে ভালো লাগবে না। যিনি কোনোদিনও ওই কবিতাটি পড়েন নি বা শোনেন নি তিনি যদি গদ্য আকারে পড়েন বা পড়তে গিয়ে থামেন বা স্পেসের ব্যাবহার করেন ( কবিতাতে স্পেস না থাকা সত্ত্বেও) তাহলে তাঁর মনে এই কবিতাটি কোনরকম দাগ কাটবে না। “জরাসন্ধ” যে এক অমোঘ সৃষ্টি এই ধারনাটাই মনে গড়ে উঠবে না যদি কোন এক পাঠক আমাদের স্পেস সংক্রান্ত যে সকল নির্দেশিকা দেওয়া আছে সেই মতো নিয়ম মেনে পড়েন। কিন্তু বাস্তবিক “জরাসন্ধ” তো এক অনবদ্য কবিতা, এবং এই প্রসঙ্গে বলে রাখি যে স্পেসের ব্যাবহার ছাড়া বা ঠিক ঠাক না প্রয়োগ করলে কবিতার যে আসল আত্মা বা নির্যাস তাকে পাওয়া এক কোথায় প্রায় অসম্ভব। কবি যখন কবিতা লেখেন তখন তিনি মনে মনে সেই কবিতাটিকে বারংবার পাঠ করেন। আমার মনে হয় তখনই কবি তাঁর নিজেরই অজান্তে স্পেসকে ব্যবহার করে ফেলেন। আবার ওই রকম একই বা অন্য কোনো মনলোগ ধর্মী কবিতা “কেউ কথা রাখেনি”তে – বাবা আমার কাঁধ ছুঁয়ে বলেছিলেন, দেখিস, একদিন, আমরাও… / বাবা এখন অন্ধ, আমাদের দেখা হয়নি কিছুই” এখানে আমরাও বলার পর একটা দীর্ঘ থামা অনেকটা দুটো স্তবকের মতো থামা। এই থামাটা না থাকলে কবিতাটি তাঁর অর্থ সম্পূর্ণ রূপে হারায় কারণ ভাবের অর্থ অনেকখানি মার খেয়ে যায় বা বলার ভালো মার খেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে (অন্তত অন্য কবিতার ক্ষেত্রে তো বটেই)। এই স্পেসকে চোখে দেখা যায় না অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হয়। কবিরও হয়তো লেখার ধরণের বাধ্যবাধকতায় এই স্পেস দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই এই স্পেস সম্পূর্ণ রূপে অনুভুতির স্পেস। এই স্পেসে কবির অনেক না বলা উচ্চারণ থেকে যায়। আর আমার মনে হয় এই না-বলা উচ্চারণটাই তো কবিতা। যে অমোঘ প্রশান্তির কথা বা খোঁজ একজন কবি এবং পাঠক নিরন্তর ভাবে করে থাকেন। ফলত এ কথা বলে ফেলাই যায় যে আমার অনুভূতি আমাকে বলে দেবে কোথায় স্পেস ব্যবহার করতে হবে ( থামতে হবে) আর কোথায় স্পেস ব্যবহার করতে হবে না (থামতে হবে না)। এটা ওই যতো মত ততো পথের মতো। যার অনুভূতি যেমন। এই কথা বলে আমি দায় এড়ানোর চেষ্টা করছি না। বরঞ্চ উল্টো কাজটাই করছি। আমি এইটা বলতে চাইছি যে স্পেসের মাত্রা বা সময় কতোটা স্বল্প বা দীর্ঘ হবে সেটা ব্যক্তি মানুষের বা বলা ভালো পাঠকের অনুভুতির উপর নির্ভর করে (এখানে কবিও পাঠক হয়ে ওঠেন)। তাই বলে কবিতায় একটা কমন স্পেস (common space) অবশ্যই থাকে যেটা কবির দ্বারা সৃষ্ট। সেই স্পেস সকলেই ব্যবহার করবেন বা করতে হবেই কারণ ওই স্পেসটাও কবিতার শরীরের সঙ্গে মিশে থাকে বা কবিতার আত্মায় মিশে থাকে। মানে ওই স্পেসটাও কবিতার ভাষা বা অঙ্গ যাকে কবিতাটি থেকে বাদ দেওয়া যায় না। আমার মূল বক্তব্য হল স্পেসের কোন  বা কবিতায় স্পেসকে কোন নির্দিষ্ট ব্যাকরণে বাঁধা যায় না বলা ভালো যাবে না আর সেটা উচিত নয়। বস্তুত পাঠক কবিতাটি পাঠ করা কালীন তার মন যে ভাবে স্পেসকে ব্যবহার করতে চাইবে সেই ভাবেই করবেন, কারণ প্রত্যেকটা মানুষের মনের গঠন ভিন্ন, তাই সেই একই কবিতায় স্পেসের ব্যবহার ভিন্ন রকমের হবে।

তবে একটা প্রশ্ন অবশ্যই ওঠে বা থেকে যায় যে তাহলে ছন্দ কবিতায় যে স্পেসের ব্যবহার ও কি এই একই রকম না আলাদা? আমি আবারও বলছি স্পেস কবিতার শরীরের একটা অঙ্গ। স্পেস ছাড়া কবিতা প্রায় অসম্ভব। কবিতায় যে না বলা কথা থাকে যা একজন পাঠকের মনকে ভীষণ ভাবে আন্দোলিত করে বা মনেকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় বা চেতনাকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায় সেই না বলা কথা বা অব্যক্ত কথার একটা রূপ হল এই স্পেস। এবার ছন্দের প্রসঙ্গে আসি। ধরা যাক জীবনানন্দ দাশের লেখা কবিতা “ঘোড়া” কবি তাঁর ভাবনায় ছেদ যতি চিহ্নের ব্যবহার করেছেন। সেই অনুযায়ী স্পেস হওয়া উচিত ছিল। আমার দৃঢ় বিশ্বাস কবি পাঠের সময় সেই অনুযায়ী স্পেস দিতেন না বা স্পেস দিলে কবিতাটি তার ওই না বলা উচ্চারণ কে হারিয়ে ফেলত এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে স্পেস হল পাঠক এবং কবির অবচেতন মন যে পজ (pause) বা ফাঁক বা স্পেস তৈরি করে। আমি বারবার কবির সঙ্গে পাঠক কে জুড়ে দিচ্ছি কারণ আমার মনে হয় কবিকে অতি অবশ্যই একজন পাঠক হয়ে উঠতেই হয় তাই। একমাত্র তাহলেই তিনি বুঝতে পারবেন যে পাঠক কি ভাবে তাঁর কবিতায় স্পেসকে ব্যবহার করছেন। আমি এও জানি আমার এই কথার সঙ্গে অনেকেই একমত হবেন না কারণ কবির পাঠক হয়ে ওঠার দায় নেই বলেই অনেকেই তাঁদের অভিমত ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছেন। ঠিক সেই সূত্রেই বলি পাঠকের ও কবির অনুভূতিকে বোঝার দায় নেই আর নেই বলেই তিনি তাঁর মতো করে স্পেসকে তাঁর পাঠের সময় ব্যবহার করতে পারেন। আমার আরও বিশ্বাস যে একটা কবিতাকে কেউ যদি পঞ্চাশবার পড়েন তাহলে হয়তো এটা দেখা যাবে যে একান্নতম বারে সেই একই পাঠকই সেই একই কবিতাটিতে স্পেসের ব্যবহার অন্যরকম ভাবে করবেন, যা তিনি আগের পাঠগুলোতে করেন নি। ফলত স্পেস ও যে কবিতার আরও একটা শরীর তা সহজেই অনুমেয়।

তবে একটা বিষয়ে আমি অভিমত জানাতে চাই যে বাচিকশিল্পীরা যেন (যদি কবি বেঁচে থাকেন) কবিতা পাঠের আগে একবারের জন্য অন্তত কবির সঙ্গে কথা বলেন ওই স্পেস ব্যবহার বা স্পেসকে ব্যবহারের বিষয়ে। নাম করেতে চাইনা আমি এমন অনেক বাচিক শিল্পীকে দেখেছি বা তাঁর পাঠ শুনে বিনীত ভাবে জানাতে বাধ্য হচ্ছি যে উনি স্পেসের ব্যবহার ঠিক মতো করেন নি। যদি করতেন তাহলে সেই কবিতা গুলোকে  মেলো-ড্রামা বলে মনে হত না বা নাটকীয় বা অতিরঞ্জিত বলেও মনে হত না। আমি আবার একটা পূর্বে দেওয়া উদাহরণ কে টেনে বলবো যে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কেউ কথা রাখেনি’ তে – “আজ সে যে কোন নারী” এই জায়গাটা কেউ ঠিক করে পড়েন নি বা পাঠ করেন নি কারণ স্পেসের এই খেলাটাই তাঁরা বঝেননি। আমি জোর গলায় বলতে পারি স্পেস নিয়ে সুনীল বাবুর সঙ্গে কেউ কোন রকম আলোচনাও করেন নি। আলোচনা করলে হয়তো এই অপূর্ণতাকে সঠিক রূপ দেওয়া সম্ভব হত। আসলে কবিতায় বলা আর না-বলার সেতুবন্ধনটাই স্পেস করে থাকে অত্যন্ত সুচারু ভাবে। আসলে লিখতে ও নিজের সেই লেখা পড়তে গিয়ে এই কথাগুলো আমার বারবার মনে হয়েছে তাই এই লিপিবদ্ধ করে যাওয়া যাতে করে লেখার সঠিক রূপ পাঠকের (লেখক যখন পাঠক হয়ে ওঠেন) সামনে ধরা পড়ে। সেই সঙ্গে বাচিক শিল্পীরাও যদি কবিতা লেখক বা কবিদের সঙ্গে কথা বলেন এই স্পেসের বিষয়ে আমার মনে হয় অনেক কবির কবিতাই হয়তো পাঠক বা স্রোতার সম্মুখে অন্য রূপে ধরা দেবে বা আবিষ্কৃত হবে যে লেখাকে সেই পাঠক বা শ্রোতা সেই ভাবে পূর্বে দেখেননি বা উপলব্ধি করেননি বা বোঝা যায়নি বলা ভালো বুঝতে পারেননি। আমার মনে হয় লেখক (কবি)কে এবং একই সঙ্গে বাচিক শিল্পীকেও স্পেস নিয়ে ভাবা উচিত অন্তত আজকের সময় একমনটাই দাবী করছে।

3 thoughts on “মুক্তগদ্যঃ কবিতার বিষয়ে দু চারটে কথা – অরিন্দম মুখোপাধ্যায়

  1. অসম্ভব সমৃদ্ধ লেখা। অনেক কিছু জানলাম লেখাটা পড়ে।

    1. অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।

  2. অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। ভালো থাকুন আনন্দে থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *