রম্য রচনাঃ কার্পেট – বিশ্বজিৎ রায়

কার্পেট
বিশ্বজিৎ রায়

উল্টোডাঙা থেকে বড় মেসোকে নিয়ে রওনা হয়েছি শিয়ালদহ স্টেশনে রাজধানী এক্সপ্রেস ধরবো বলে। বড় মেসো কেদারনাথ দর্শনে যাবেন, তাই দিল্লিতে কিছু formalities পূরণ করতে হবে। যাইহোক, বাড়ি থেকে বেরিয়েই একটি ট্যাক্সিও পেয়ে গেলাম। ট্যাক্সিতে ওঠার পর থেকেই আমি লক্ষ্য করলাম – ট্যাক্সিচালক কোনও সমস্যায় রয়েছে- ঘন ঘন শুধু ফোন আসছে । ওপারের কন্ঠস্বর বারেবারে তাগাদা দিচ্ছেন আর ট্যাক্সিচালক বলছেন- “ ঠিক সময় পৌচ্ছে যাব , চিন্তা করবেন না,পৌচ্ছে যাব, আর ত্রিশ- পয়ত্রিশ মিনিটের মধ্যেই পৌচ্ছে যাব।” ট্যাক্সিচালক কখনও তিক্তবিরক্ত হয়ে ফোন ধরছেন , আবার কখনও বা ফোনও কেটে দিচ্ছেন।
যখন আমরা শিশির মার্কেটের কাছে এসেছি ওমনি মেসো হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে বসলেন- “এই ড্রাইভার ভাই ….গাড়ি থামাও, গাড়ি থামাও , আর পারছি না ।” কিন্তু ট্যাক্সিচালক গাড়ি থামাতে রাজি নয়, । একদিকে ফোনে বারেবারে তাগাদা, বাজারের ভীড়, আর সেই সঙ্গে নতুন সংযোজন- বিপরীত দিক থেকে এক রাজনৈতিক দলের মিছিল এগিয়ে আসছে। মেসো বলছেন -“গাড়ি থামাও ” আর ট্যাক্সিচালক বলছেন – “ না, এখানে থামানো যাবে না। “ – এই নিয়ে দুজনের মধ্যে লেগে গেল চরম বাঁকবিতন্ডা। আমি মেসোকে বললাম- “ আপনি ট্যাক্সি থামাতে বলছেন কেন ? “
কানগুলো লাল হয়ে যাওয়া ঘেমেনেয়ে একাকার মেসো আমার কানে কানে বললেন- “ Washroomএ যেতে হবে “।
আমি জানতে চাইলাম –“ক্ষণিকের জন্য, না কি সময় লাগবে ?”
মেসো বললেন- “দ্বিতীয় অপশনের সম্ভাবনাই বেশি।“

যাইহোক, মেসোর করুন অবস্থা দেখে অবশেষে ট্যাক্সিচালক গাড়ি দাঁড় করলেন ।
গাড়ি থামাবার সঙ্গে সঙ্গে মেসো গাড়ি থেকে ঝড়ের বেগে নেমে খবরের কাগজ বিক্রি করা ছোট ছোট বাচ্চাগুলি যেমন গাড়ির পাশ দিয়ে দৌঁড়ে দৌঁড়ে খবরের কাগজ বিক্রি করে সেই রকম এঁকেবেঁকে দৌঁড়ে গাড়িগুলি, ভীড়ের মধ্যেকার মানুষজন কাটিয়ে কাটিয়ে এক কার্পেটের দোকানে গেলেন ঢুকে। প্রায় মিনিট চল্লিশেক পরে মেসো সেই দোকান থেকে বেরিয়ে এলেন। কিন্তু বেরিয়ে আসার দৃশ্য দেখে আমি স্তম্ভিত! দেখি মেসো দোকান থেকে বেরিয়ে আসছেন মোট বহনকারী কুলিদের মত ডান কাঁধে মস্ত বড় লাল রঙের একটি কার্পেট নিয়ে। আমি কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললাম-
“ এখন আবার কাপের্ট কিনতে গেলেন কেন ? “
মেসো ঘাড় থেকে কার্পেট নামিয়ে এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন – “ কী আর বলবো, এমন শহরে বাস করি – এখানে কিছু দিতে গেলে কিছু নিতে হয় “।
আমি বললাম- “কিছু দিতে গেলে কিছু নিতে হয় – মানে ? “
মেসো বললেন – “ মানে আর কিছুই নয়- ব্যাটা দোকানদার পাক্কা ব্যবসায়ী । আমার দূর্বলতা দেখে আমার সামনে এক শর্ত দিল রেখে । আমায় বললো Washroom ব্যবহার করতে দিব, কিন্তু একটা কার্পেট কিনতে হবে। আমি বলছি কাজটা আগে সেরে আসি, আর দোকানদার বলছে আগে পেমেন্ট করতে হবে । এবার বোঝো ! – অবশেষে মানসম্মান বাঁচাবার জন্য ৩০০০টাকা খরচ করে এই কার্পেট কিনতে হোলো, দরদাম করবার আর সুযোগ দিল না ! “

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *