গুচ্ছ কবিতা : অলক জানা

গুচ্ছ কবিতা : অলক জানা

অনুষঙ্গ

লিখতেই চারাগাছ গজিয়ে উঠলো পাতা,
লিখলাম শান্ত জল, সহস্র ঢেউ বন্ধনী,
মাথার ভেতর গভীর এক ক্ষতের যা তা
আলো লিখতেই হেঁটে এলো সুরের শঙ্খিনী
বুকের সেই পুরনো ব্যথা অজান্তে আঘাত
দিন যাপনের গায়ে অগভীর এক দ্রোহ
প্রেমের পাশে গুটিমেরে বসেছে অন্তর্ঘাত
সুইসাইডের নিকট সকাল সমারোহ।
লিখবো না কোন অস্ত্র, একটি যুদ্ধ ও দ্বেষ
রুচি মতো বেড়ে যায় তবু নখের বিলাস
যুধিষ্ঠির লিখতেই কুরুক্ষেত্র শেষমেশ
বাঁচার অনুষঙ্গে মরণ হাঁটে বারোমাস
তুমি তোমারই মতো, আমার প্রসঙ্গ বাদ?
এক পৃথিবী অর্থে, গলদঘর্ম অনুবাদ।

আশ্চর্য

ব্যর্থতা চূড়ান্ত হলে নিয়তির দিকে ঠেলে সবাই কেমন ঝাড়া হাত-পা, তবু হা-হুতাশ আর্তিটুকু ফুঁপিয়ে ওঠে দগ্ধ সময়। একে একে দলছুট সবাই, বস্তুত উচণ্ড্যা ঘূর্ণিপাকে নিরাহীর কেমন থেঁতলে যায় মাথা ? পরবর্তী সূর্যোদয়ের জন্য বাগানে জলসেচ, সকালের ব্রহ্মসংগীত অথবা ঘা শুকাতে ওষুধ সেবন, কতকিছু থেকে অব্যাহতি চায় মানুষের মন। সকলের একটিই মাত্র ব্যথা ঠিক পাঁজরের নীচে, হৃৎপিণ্ডের নিকট, এভাবেই একটি ভিড়ের ভেতর আঁকা রেখা সুরের ধ্যানে আশ্চর্য পালটে যাচ্ছে শিবির ও মানুষের পরিচিত আকার।

দুঃশাসনের বিপরীতে

ফেরানো মুখের উপেক্ষা খেবড়ো পাথরের চেয়ে কম কিছু নয়, বুকে চেপে বসলে থেঁথলে যায় পরিচর্যার বিশ্বস্ত পাতাবাহার, ধমনী-শিরা বন্দরে তখন নোঙর করে বিশুদ্ধ সব দহন, তোমার সঙ্গে যা সমান্তরাল অথবা নিশ্চিত প্রতিবিম্ব, নেহাত তুমি ওখানেই থাকো তাই আমিও ভালোবেসে ফেলেছি সদ্য গ্রাম ভেঙে গড়ে ওঠা তোমার নাবালক শহর, ভূমধ্যসাগর ঘেরা তোমার মহাদেশ। একটি প্রিয় পছন্দ জিইয়ে রাখতে আলোকবর্ষ অধিক যুদ্ধ বিরতি চাই, লিখে যেতে চাই—কবিতার চেয়ে চিরকাল অনুবাদহীন মানুষের দুর্বোদ্ধ মন, তোলা জল, মাথার ছাদ যাদের নেই, একমাত্র তারাই রচনা করে, অনিন্দ্য পৃথিবীর স্বর্গীয় আর্যাবর্ত।

পেছন দরজা

আইনের ফাঁকের মতো, হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক
আইনের ফাঁকের মতো বাড়ির পেছনের দরজাও ভালোবাসে অনুৎপাত নির্জনতা, কদাচিৎ সদোর বৈঠকখানা পাওনাদারে
অসহ্য বিরূপ কিংবা জাঁতাকল ঠেকলে সহজভাবে পেছনের দরজা ব্যবহার, এই অক্টোপাস টোপের বাইরে এক বার
এসে গেলেই আইন ফাঁকের দৌলতে সাতখুন মাপ, বিজয়ীর মুখে খই ফোটা হাসি —
পেছন দরজার মহিমা ! তবুও অটুট বিশ্বাস সংবিধানে বন্ধক রেখে, হেরে যাওয়া
নাহ্য বিচার অদৃষ্টবাদ নামে প্রচারিত।

ব্যালেন্স

বটঝুরির মতো নেমে আসে
দশ আঙুলের উম সরীসৃপতা,
সপ্রস্তুত একত্র চারহাত এখন
শরীরের জীবন্ত ময়না-তদন্ত চায়,
রহস্য অতল অসমানেরও
এক নিজস্ব উপমাহীন সৌন্দর্য থাকে,
তার জন্য সময়োচিত
নিপাতন আগ্রহী ভালোলাগা,
শ্রাবণ ধারায় চাঁদের
অনিচ্ছে পলেস্তারা ধুয়ে গেলে
মধ্যরাতের পৃথিবী জন্মগত
দারুণ এক দৈব মিথুনে নিরাময়।

লিভ-ইন্ অদৃশ্যবাদ

সেই কবে বেচারা জন্ম ! যাকে ভুল বলে
ডাকি, মাত্র একটিবার বাঁশপাতা গ্রামে
আমাকে পৌঁছে দিয়ে সেই যে গেছে
আর দেখা নেই, কেবল মৃত্যু নামক অপেক্ষা আমার সঙ্গেই হাঁটে, আমার সঙ্গেই লিভ-ইন্। প্রিয় নির্ভরতা ছেড়ে যাওয়ার পর
আরো কাছ থেকে ওর সঙ্গে চোখাচোখি, ভাগাভাগির দুঃখসুখ, প্রেমালাপ, ক্ষয়ে যাচ্ছে চন্দ্রকলা-শব, প্রতিটি জন্ম লিখে যায়
মৃত্যুর টিকা, ঘড়ির কাঁটার মতো বারোমাস অংক নিয়ে বসে থাকে অদৃশ্যবাদ ললাট।

বৃষ্টির জন্য দুকলম

একটি নেশার সমার্থক প্রিয়ংবদা বৃষ্টি
তার গায়েপড়া স্বভাব,
উদাস আক্রান্ত আমি, গায়ে তখন
আমার ছেলেবেলার দারুণ সুখের জ্বর—-
জড়ায়,জড়িয়ে ধরে আমার
সমগ্র বাড়ি-ঘর! স্পর্শের অনিবার্য
কোলাহলে, অসময়ে ভিজে যাওয়া
একটি নিপাতন সন্ধির নাম।
বৃষ্টি বোঝেনা লাভক্ষতির অঙ্কশাস্ত্র
আসলে বৃষ্টিতে ভেজার কোন বয়স হয় না।

2 thoughts on “গুচ্ছ কবিতা : অলক জানা

  1. “মৃত্যুর টিকা নিয়ে বসে থাকা ঘড়ির কাটার মতো অদৃশ্য ললাট” জীবনের গতি থেকেই কিছু তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়েছে শব্দে। বাস্তবের কাছেই ফিরে এসেছেন কবি।

  2. তাড়াতাড়ি পড়লাম। আবার পড়ব। খুব ভালো লাগল বলে, ফিরব আবার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *