তিনটি কবিতাঃ কাজল রায়
তোমারই ভিক্ষুক
এবারের শীতের মরসুমে কোথাও তোমাকে দেখলাম না
শহরের ল্যাম্পপোষ্টগুলোয় লেগে আছে বিষণ্ণ সন্ধ্যা
তুমি আছো কি নেই এই ভাবতে ভাবতে পৌষের হাওয়া এসে শূন্যতা সৃষ্টি করে
কাছেপিঠে শাড়ির দোকানে, শহরের প্রান্তে মখমলী পিঠের উৎসবে খুঁজেছি তোমাকে
জানি তুমি বলেছিলে কবিতা শহর কেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে !
ধানের বীজের উপর রুপোলী বৃষ্টির সকাল, পাহাড়ের কার্নিশ বেয়ে কুয়াশা ঘেরা ঝর্ণা, ভিজে ভিজে অরণ্য-গন্ধ আসে না আর আমার কবিতায়
তবে কি বাণপ্রস্থে যাওয়ার মতন নির্জনতায় গড়ে নিয়েছ তোমার কবিতা আশ্রম !
এ শহরে ধূ ধূ মরুর মতন একাকী পড়ে আছি তোমারই ভিক্ষুক আমি
উদাসী হাওয়ায় ভেসে আসছে তোমার প্রিয় মাইহার ঘরানার ধুন
পরিক্রমা
নির্জন দুপুরে মাছরাঙা পাখি দুটি বসে আছে ঝিলের ধারে
তাদের চোখের তারায় দৃষ্টি স্থির শিকারের সন্ধানে
পাখিরা কি জানে প্রেম ও শিকারের তফাৎ কোথায় !
শিকারী তখনই হবে যদি তুমি ক্ষুধার হাহাকার বোঝো
আর বুঝি প্রেম জাগে নিজ নিজ দর্শন বুঝে
আমরা কবিরা প্রেমের দেবতা হয়ে বিলিয়ে দিই সব
কেউ আসে, কেউ কেউ রেখে দেয় অপেক্ষার বন্ধ জানালায়
অন্ধ বাউল মনে পরিক্রমা কেবল একাকী কবির
বিষন্ন আনমনে পড়ে থাকে নোট প্যাড, কলম আর প্রাণবায়ু ইনহেলার
মাছরাঙা পাখি দুটি কখন ফিরে গেছে ঘরে নির্বাক রাধাচূড়া গাছটি জানে
শীতের শহর
এ শহরে কেউ আর স্যাক্সোফোন বাজায় না
রাস্তায় কাঠকুটোর আগুন জ্বালিয়ে জড়োসড়ো রিক্সার চালকের দল
কারো কারো চুম্বনে আটকে আছে শীতের সংলাপ
উষ্ণতা মেপে নিয়ে মাঝে মাঝে হল্লা ওঠে ‘জয় হো’
ঘন ঘন এ্যাম্বুলেন্স সশব্দে চলে যায় দূরের শহরে
‘এমন শীতেই তো তোর বাবা চলে গেল’
চলে যাওয়ার আগে জলভরা চোখ নিয়ে বলেছিল মা ।
সেই চোখে চোখ রেখে দেখি হু হু ভেসে যাচ্ছে শহর
হাওয়ায় ভেসে আসছে সকরুণ নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়