অসম চতুর্ভুজ (২য় পর্ব)
অনিরুদ্ধ সুব্রত
সুনন্দা এগিয়ে সামনের দরজার ছিটকিনি খুলল। পরিচিত গাড়ির হর্ন শুনতে না পেয়ে একটা চাপা কৌতুহল ছিলই তার। নির্মাল্য বা ওর বন্ধুরা যাই বলুক, সুনন্দা কিছুটা আলাদা চোখে দেখে রণজয়কে। যে কারণে অপরিচিত গাড়ির হর্ন শুনে সুনন্দা মৃদু চিন্তিতও।
নির্মাল্যদের চার বন্ধুর সম্পর্ক একটা সময় কিছুটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। বিশেষতঃ রণজয়কে ওরা বাকি তিনজন সরিয়ে রাখতে চেয়েছিল। সেটা রণজয়ের জীবনের অসাফল্য।
যতই পারস্পরিক বাল্য বন্ধুত্বের সম্পর্ক দীর্ঘ ও ওতোপ্রোত থাক। সুনন্দা বুঝতে পেরেছে, সমাজে তথাকথিত সভ্য রীতি হলো স্বীকৃত পথে শিরোনাম ওয়ালা একটা কাজ। সেটাই তার গ্রহণযোগ্যতার শ্রেণিতে নাম লেখায়।
দীর্ঘ দিন রণজয় বেকার, ভবঘুরে, সরল হয়ে থেকেছে। বাকি তিন বন্ধু রণজয়ের এই সাফল্যকে ব্যাখ্যা করেছে তাদের নিজেদের মতো করে। নির্মাল্যর ধারণা ছিল, রণজয় অলস আর দীপ্তরূপ বলত, ” পড়াশোনা কবেই বা ঠিক মতো করেছে ও !” অরিন্দম অবশ্য রণজয়কে কেবল একটাই বিশেষণ দিত, “হোপলেস”।
দীর্ঘ দিন এই সব কথা শুনে সুনন্দা নিজে থেকেই একদিন রণজয়কে বলেছিল,–” তোমার মধ্যে ব্যক্তিত্বের একটা অভাব আছে রণজয়।”
সুনন্দার মুখে এমন কথা শুনে সেদিন চুপসে গিয়েছিল রণজয়। নির্মাল্যর স্ত্রী হলেও এক পাড়ার মেয়ে সুনন্দা। রণজয়ের থেকে বয়সে সামান্য ছোটো সুনন্দা। পাড়ার মেয়ে, সুন্দর দেখতে, ছাত্রী ভালো — এসব কিশোর মনে যাই প্রতিক্রিয়া সৃজন করুক, রণজয় চির ভোলাভালা।
কিন্তু প্রিয় বন্ধু নির্মাল্য হাইস্কুলে চাকরি পাওয়ার পর সুনন্দার সঙ্গে একই পেশার জন্য পরস্পর পরিচিত হলো। সুনন্দাও কাছের একটা গার্লস স্কুলে চাকরি পেয়েছিল, সম্ভবত নির্মাল্যর আগেই। ওদের পরিচয় বছর দুয়ের মধ্যে বিয়েতে পর্যবসিত হলো।
সুনন্দা রণজয়কে চিনত পাড়ার সহজ সরল একটা ছেলে হিসেবেই। ভালো ছাত্র হিসেবে কখনোই নয়। আর রণজয় সাদামাটা শ্যামলা রঙের দেহাতি ধরণের চেহারার। পারিবারিক ভাবে আহামরি বলবার মতো তেমন কিছু ছিল না। বরং রণজয়ের মা ওদের তিন ভাই বোন যখন কৌশোর পেরোয়নি, তেমন সময়ে হঠাৎ করে সংসার ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়। ছ’মাস না যেতে রণজয়ের বাবা নতুন বৌ নিয়ে আসে । ফলে কিছুটা হলেও রণজয় আর ওর ছোটো বোন আর ভাই সৎ মায়ের সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে উঠতে পারে না বেশ কিছুদিন। পরে অবশ্য সে দূরত্ব দূর করে নেয় রণজয়ের সরলতা।
অথচ রণজয় নিজের মাকে একদিন আবিস্কার করে পাশের পাড়ায় । তারপর সে সব নিয়ে বেশ কিছু দিন ক্যাচাল চলে। মাতৃ মায়ায় রণজয় আর ওর ছোটো ভাই বোন দুটো ব্যাকুল হয়ে ওঠে মাকে পেতে। কিন্তু একটা সময় ভাই বোনদের মধ্যে বড় হিসেবে রণজয় নিজেই সে মায়া ত্যাগ করে। মা বোঝাতে চেষ্টা করে, ছেঁড়া সম্পর্ক তো আর জোড়া দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা তাদের বাবা আবার বিয়ে করেছে। পাশাপাশি রণজয়ের মা এটাও বোঝায় যে, তিনি নিজেই এখন অন্যের স্ত্রী। রণজয় সেই থেকে ছোটো দুটি ভাই ও বোনের দায়িত্বশীল দাদা হয়ে ওঠে। কিন্তু লেখা পড়ার ছাত্র জীবনে প্রতিটি মুহূর্তেই আংশিক পর হয়ে যাওয়া বাবার দিকে প্রত্যাশা নিয়ে থাকতে হতো।
রণজয় নিজে তেমন ভালো ছাত্র হতে পারে নি। কিন্তু তার সেই ছোটো ভাইটি পরবর্তীতে ইঞ্জিনিয়ার হয়ে নামী কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে কলকাতাতে সেটেল্ড। বোনটিও একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে কর্মরতা। কেবল রণজয়ের বলার মতো কিছুই ছিল না।
এক পাড়ায় থাকার সুবাদে সুনন্দা রণজয়কে শুধু চিনত। নির্মাল্যর সঙ্গে বিয়ের পর সুনন্দা জানল, পাশের পাড়ার হলেও দীপ্তরূপ, নির্মাল্য এবং অরিন্দমের সঙ্গে রীতিমতো গভীর বন্ধুত্ব রণজয়ের। এবং সেই বন্ধুত্ব নাকি সুদূর বাল্য বয়স থেকে।
ওদের চার বন্ধুর মিলন-সন্ধ্যার পার্টি অনেক দিন বাদে হলেও, চার বন্ধু কিন্তু পরস্পরকে এক জায়গায় ঠিক ডেকে নেয়। নির্মাল্য শিক্ষকতা করে, দীপ্তরূপ প্রশাসনিক কর্তা আর অরিন্দম প্রতিষ্ঠিত স্থপতি। আর্থিক আয়ের আলাদা আলাদা পথ তাদের। এবং তার মাত্রাও আলাদা। এক জায়গায় হলে, এই তিন জনের কর্ম জীবনের আলোচনা সবচেয়ে বেশি হয়। অবশ্য দাপটে এক নম্বরে পৌঁছে যায় অরিন্দম। নির্মাল্য বা দীপ্তরূপের বার্ষিক আয়ের প্রায় সমতুল অরিন্দমের মাসিক আয়। যদিও তারা জানে চাকরির সঙ্গে ব্যবসার তুলনা টানা বোকামি। ওদের আলোচনায় আসে কার কোথায় কতটা পরিচিতি। রাজ্যের কোন কোন বড় নেতা, হোতাকে অরিন্দম খুব চেনে অথবা দাদা বলে ডাকে ; দীপ্তরূপ বেশ তীক্ষ্ণ ও সতর্ক ভঙ্গিতে জানায়— প্রশাসনের কোন কোন বড়কর্তা তাকে চেনে বা কখন কবে কী কারণে সে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রশংসিত হয়েছে। শেষে নির্মাল্য স্কুলের এক ঘেঁয়ে মাস্টারির কিছু কথা বলেই শুরু করে তার কাব্য রচনার কিছু কিছু ছোটো ছোটো অহংকার। কবে কখন কোথায় কোন তাবড় কবি সাহিত্যিকের বাহবা পেয়েছে ইত্যাদি।
কিন্তু তিন জনের এতো আলোচনার ফাঁকে যে কেবল গ্লাসে মদ আর জল ঢেলে গেছে, সে এই রণজয়। দীর্ঘদিন এই অসহায় দৃশ্যটি ফাঁকে ফোকরে দেখেছে সুনন্দা। তারপর একদিন বাকি তিন জন যখন খুব করে খিস্তি করছিল রণজয়কে, ” তুই শ্লা বেঢপ আটত্রিশ পেরিয়ে গেল, তবু কোনো কম্মের নয় !”
সে কথা ফ্যাল ফ্যাল করে শুনছিল রণজয়। আর অরিন্দমের কাছে সিগারেট চাইছিল। সে দৃশ্য সুনন্দাকে কী যেন রাগ ধরিয়ে দিয়েছিল। ওদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সবাই যখন নির্মাল্যদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল, তখন সুনন্দা আলাদা করে ডেকে রণজয়কে বলেছিল, ” মানুষের কিন্তু একটা নিজস্ব লজ্জাবোধ থাকতেই হয়। ইদানিং সকাল সন্ধে রাজনৈতিক নেতাদের পিছনে ঘুরতে দেখেছি তোমাকে। সামনে পৌঁছানোর মুরোদ থাকলেও বুঝতাম। বন্ধুরা যে তোমাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, সেটুকুও তোমাকে আঘাত করে না রণজয় ? কিছু একটা করতে পারো না কেন ? ব্যক্তিত্ব না তৈরি করতে পারলে এই আড্ডায় এসো না। তোমার ভালো চাই, একজন মানুষের ভালো চাই। অপমান নয়। তোমার কি অপমান বোধ থাকা উচিত নয় ! দুঃখ না পেয়ে ভেবে দেখো রণজয়।”
সেই ঘটনার প্রায় ছ’মাস পরে পৌরসভার ইলেকশন । সুনন্দার বাপের বাড়ির পাড়ার ওয়ার্ডে কে ভোটে দাঁড়িয়ে জিতেছে সুনন্দা সে সব খেয়াল করে নি। বরং একটা জিনিস সে খেয়াল করেছে, রণজয়কে আতে ঘা দিয়ে সেদিন ওসব কথা বলার পর থেকে একদিনও রণজয়কে সে সামনাসামনি দেখেনি। এমনকি এর মধ্যে নির্মাল্যর বাড়িতে বাকি তিন বন্ধু দুই দুইবার মিলিত হয়েছে। হয়েছে সন্ধ্যার পানাহার। অথচ কোনো না কোনো অজুহাতে রণজয় কিন্তু সেই মিলনে থেকেছে অনুপস্থিত।
তারপর একদিন পৌর ইলেকশন শেষ হয়ে নতুন কর্মসমিতির কাজ শুরু হয়ে গেছে। একদিন সন্ধেবেলা একটা স্কুটি চালিয়ে বাড়ির দরজায় হর্ন দিয়েছিল রণজয়। সেদিন নির্মাল্যর কোথায় যেন কবি সম্মেলন ছিল। সুনন্দা এগিয়ে দরজা খুলে দেখল, রণজয়। বাড়ির ভিতরে রণজয়কে আসতে বলল সুনন্দা। সেদিন রণজয় যেন আবেগে প্রায় সুনন্দার পা ছুঁয়ে দেয়। সুনন্দা অবাক হয়ে রণজয়কে দেখল। এমন ভাবান্তর সুনন্দা আশা করেনি। রণজয় বলল, ” তুমি আমাকে বদলে দিয়েছ সুনন্দা। সতেরো নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েছি ভোটে জিতে। এখন আমার অনেক কাজ। পার্টি আমাকে ভরসা করেছে। আমিও হোল টাইমার হতে চাই। পাশাপাশি অবশ্য একটা কসমেটিকস প্রোডাক্টের ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিচ্ছি। যদিও ত্রিভূবনে আমার কোনো আর্থিক দায় নেই। তবু ব্যক্তিগত আয়ের ব্যাপারটা তো থাকা চাই। তাছাড়া তুমি তো একদিন বলবে নিশ্চয়ই, আমার ব্যক্তিত্ব আছে। “
সেদিন চরম আশ্চর্যান্বিত হয়েও সুনন্দা মুখে খুব কিছু বলেনি। শুধু বলল, ” একটু চা করি তোমার জন্য ? ” রণজয় বলল, ” নির্মাল্য থাকবে এমন দিনে এসে বসে চা খেয়ে যাবো। এখন চলি। একটা ওয়ার্ড মিটিং আছে।”
সুনন্দা সেই সন্ধ্যায় নিজেকে সবচেয়ে বেশি ধন্যবাদ দিয়েছিল। একজন মানুষকে চরম আঘাত দিয়ে ফেরানো যায়। যদিও রণজয়ের সরলতার প্রতি ছিল তার সম্পূর্ণ সমবেদনা।
তারপর দীর্ঘ দশ বছর। রণজয়ের এক দশকের রাজনৈতিক জীবন । এখন সে জেলা স্তরের নেতা। পার্টির প্রথম শ্রেণির কর্মী। তাবড় তাবড় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার ওঠাবসা। চাঁদপুরের পাশের পাড়ায়, রণজয়দের নিজেদের পারিবারিক বাড়িতে এখন সে নিয়মিত থাকে না। কলকাতায় নিজস্ব বিশাল ফ্ল্যাট কিনেছে শোনা যায়। তবে রাজনৈতিক মানুষ বলেই বিভিন্ন কারণে ব্যস্ত থাকে সে। বনমালীপুর পৌর এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ক্ষতিয়ান তার কাছে। রাস্তার মোড়ে রণজয়ের ঝাঁ চকচকে স্করপিও এসে দাঁড়ালে চার দিক থেকে ছুটে আসে মানুষ। রণজয় এখন তার দীর্ঘ লড়াইয়ের সাফল্য অনুভব করে । ধীর স্থির হয়ে সেই সাফল্যের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে বদ্ধপরিকর সে।
অনেক বার পরিচিত কেউ কেউ বলেছে, –” বয়স যাই হোক রণজয়, এবার অন্তত বিয়ে করো একটা ।”
রণজয় বলে, –” এখন যেমন মেয়েকে পছন্দ করব, তেমন মেয়েটি নেই। মানে আমার বয়সের সঙ্গে মানাবে এমন কেউ। বিয়েটা তাই এই জন্মের জন্য বাদ দিলাম।”
কিন্তু সে চার বন্ধুর আড্ডায় আবার আসতে শুরু করেছে কয়েক বছর হলো। এখন আর তাকে পুরনো অবস্থার অবজ্ঞা শুনতে হয় না। যেন তেমন কথা বলার সাহস কেউ রাখে না। বরং অরিন্দম নিয়মিত ফোন করে খোঁজ নেয়। সেবার শহরতলীতে একটা হাউজিং এস্টেটের কাজ পাওয়া নিয়ে বেশ কম্পিটিশনে পড়ে গিয়েছিল। শেষে উপায় না পেয়ে অরিন্দম তৎক্ষণাৎ ফোন করে বিষয়টা বলেছিল রণজয়কে। এবং সত্যি সত্যি কাজটা শেষ অবধি অরিন্দমই পায়। এখনও অরিন্দমের মনে সেই কৃতজ্ঞতাটা রয়ে গেছে রণজয়ের প্রতি। কিন্তু আড্ডার মেজাজে তারা এখনও পরস্পর ইয়ার্কি, খিস্তি করতে বিন্দুমাত্র ছাড়ে না।
দীপ্তরূপ এই তো গত সপ্তাহে রণজয়কে ফোন করে ওর লোকালে ট্রান্সফারের প্রয়োজনের কথা জানাল। রণজয় শুধু বলেছে ‘দেখছি’। দীপ্ত যেন তাতেই আশ্বস্ত। মনেমনে সেও রণজয়ের প্রতি কৃতজ্ঞ হবে বলে বসে আছে।
নির্মাল্য তো গত প্রায় তিন বছর ধরে দেখছে, বনমালীপুরে একটা বিরাট সাহিত্য উৎসবের আয়োজন হচ্ছে টাউন হলের মাঠে। নির্মাল্য তার অন্যতম কনভেনর। যদিও এই সাহিত্য সভার কনভেনর পদটিতে রণজয়ই নির্মাল্যকে বসিয়েছে। রাজ্যের নানা প্রান্ত থেকে কবি সাহিত্যিকদের নিয়ে দুই দিন ধরে টানা সাহিত্যের অনুষ্ঠান এর আগে এমন ভাবে কখনোই হয়নি। নির্মাল্য তাই পিছন থেকে রণজয়ের এই সাহিত্য সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা দেখে রীতিমত আশ্চর্য। রণজয়ের প্রশংসা করে এই নির্মাল্যই প্রায় আধঘন্টা বক্তৃতা করল এবারের কবিতা- উৎসবে।
কেবল সুনন্দা এই সব এক দশকের দৃশ্যাবলী এবং পরিবর্তিত দৃশ্যাবলী যেন নীরবে দেখে চলেছে। আগে নির্মাল্যদের আড্ডা বসলে বাড়িতে সুনন্দা সানন্দে এগিয়ে দুপাঁচটা কথা বলত। এখন সেই উৎসাহ তার আসে না। সে-ই এমন একজন নিঃশব্দ দর্শক, যে কেবল পরিণত চারটি পুরুষের পারস্পরিক টান, মোহ, ভালবাসা, কৌতুক, ঘৃণা, নিন্দা ও উল্লাস দেখতে থাকে পাশ থেকে। শুধু মাঝখান থেকে ফুরিয়ে যায় সময় বছর বছর করে দশক।
সুনন্দা দরজার ছিটকিনি খুলে ভালো করে তাকিয়ে বলে , ” আরে, এতো রণজয় নয়।” তাহলে হর্ন দিচ্ছে কে ? সে আরও কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে দেখে, অন্য একটা অপরিচিত গাড়ি। রণজয়ের তো স্করপিও। সুনন্দা গাড়ির কাছে এগিয়ে যায়। গাড়ির জানলা দিয়ে কে যেন একজন ডাকছে ততক্ষণে। সুনন্দা এগিয়ে শোনে, লোকটা বলছে,
” এই মাত্র হাইরোডে, রণজয়দার গাড়িটার পিছনে একটা লরি এসে ধাক্কা মারে। রণজয়দার গাড়িটা পাশের শুকনো নয়ানজুলিতে আছড়ে পড়েছে। দাদাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় উনি শুধু আপনাদের বাড়িতে একটা খবর দিতে বললেন। তারপরই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা তেমনই জানিয়েছে। সেই খবরটাই লোকাল পার্টি অফিস থেকে ফোনে জেনে আপনাদের বলতে এলাম। “
আকস্মিক এমন সংবাদে সুনন্দা কয়েক মুহূর্তর জন্য যেন বোবা হয়ে গেল। তার পর নিজস্ব শক্তিতে পুনরায় শক্ত হয়ে বলল, ” ওকে কোন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে ? কেমন ভাবে লেগেছে ওর ?” ইত্যিদি বেশ কিছু প্রশ্ন টানা করে যায় সুনন্দা। ঐ গাড়ি থেকে জানায়, ” আমরা সঠিক সংবাদ জানি না। আপনার ফোন নম্বর দিন, খবর পাওয়া মাত্র জানাব। শুধু খবরটা দিতে এলাম। “
ওদেরকে নিজের ফোন নম্বরটা কোনোমতে বলেই সুনন্দা রণজয়ের দুর্ঘটনার খবরটা ঘরের ভিতরের তিন বন্ধুকে দিতে ছুটল।
(এরপর আগামী সংখ্যায়)