একটা বিকেলের গল্প
সুধাংশুরঞ্জন সাহা
অন্যরকম একটা বিকেল আজ। মৌ-দের কামরাঙা গাছের ফাঁক দিয়ে খুব নরম মোলায়েম একটা সূর্য আস্তে আস্তে ডুবে যাচ্ছে। অসম্ভব স্নিগ্ধতায় ভরা সেই বিদায়ের মুহূর্ত। মনে হচ্ছে যেন আমার ধুম জ্বরের কপালে মায়ের শীতল হাতের স্পর্শ !
আমার সাতশো স্কোয়ার ফুট ফ্ল্যাটের দক্ষিণ পশ্চিমমুখী চার বাই আট ফুটের এই এক চিলতে বারান্দা আমার একমাত্র অক্সিজেন। প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যায় এখানে এসে বসি। রাস্তার মানুষের কথোপকথন, গাড়ির মৃদু আওয়াজ ভেসে আসে। ভেসে আসে দু’চারটে পাখির কিচিরমিচির। কোনো কোনো পাখি আবার উড়ে এসে বসে বারন্দার কার্নিসে। চমৎকার তাদের ঠোঁটের ভাষা, ডানার রঙ। আমি একমনে পর্যবেক্ষণ করতে থাকি।
সেদিন ছিল রবিবারের বিকেল। রাস্তা প্রায় জনশূন্য। হঠাৎ দেখি মৌ-দের পাশের বাড়ির ছাদ থেকে একটা সবুজ জামা উড়ে যাচ্ছে। আমি ঝুঁকে পড়ে দেখতে চাই সেই জামাটা…। কিন্তু আচমকা তীব্র আর্তনাদে কেঁপে উঠি আমি। কেঁপে ওঠে জনপদ। ভিড় জমে যায় চারপাশে। কী অদ্ভুত ! পাশের বাড়ির গৃহকর্তা মধ্যবয়সী অশোকবাবু তার একতলার ছাদ থেকে ঝাঁপ দিয়েছে। দ্রুত ডাক্তার.. অ্যাম্বুলেন্স…হাতে হাতে ধরাধরি করে নিয়ে গেল তাকে কাছের সি.এম.আর.আই হাসপাতালে। … অপারেশন থিয়েটারে…
ঘন্টা দুই তিনেকের মধ্যেই গাঢ় অন্ধকার ঢেকে দেয় সব আর্তনাদ, বিষণ্তা! অনেকগুলো দৃশ্যপট, মুহূর্ত জড়াজড়ি করে ঢুকে পড়ে আমার একাকিত্বের ভিতর। আমি কিছুতেই নিজেকে সরিয়ে আনতে পারছি না এই বৃত্তের বাইরে।
তারপর সকাল, বিকেল, রাত যায়। দিনের পর দিন যায়। মাস যায় । ঋতু যায়…
আমার আর বারান্দায় বসা হয় না সেভাবে…।