এপিটাফ
সোমা বন্দ্যোপাধ্যায়
দ্বাদশীর রাত বেসামাল
বাঁকাচোরা ভিজে চাঁদ ডাকে আমায়
অকিঞ্চিৎকর সব সাজানো
শুধু আমার আর ঘরে ফেরা হয় নি
নুড়িপাথরের মত ছড়ানোছিটানো স্মৃতির ফাঁকে আজ বিলুপ্তির ধুলো
আমার দুহাত ভর্তি অঢেল সময় —
জ্যৈষ্ঠোর প্রখর রোদে
শুকানো খটখটে কান্নাগুলো
নদীর জলে চাঁদের ছায়ার মত বিষণ্ণ ইচ্ছেগুলো
ইস্পাতের ছুরির মত চকচকে তীক্ষ্ণ কষ্টের ফলা
খাঁচায় পোষা কাঠবিড়ালির মত বাধ্য হৃদয় অবলা
সবই তো দিয়েছি আর কি চাও?
আমি একা আগাছায় ঘেরা ছায়ায়
আমার কোলের উপর টপটপ কান্না ঝরে পরে অনর্গল আকাশের
চারিদিকে পূর্ব পুরুষের মত দৃঢ় গাছেরা পাহারায় —
আমায় ছায়ায় ছায়ায় ঘিরে রাখে
প্রজাপতি ভিজে নীল ডানা ঝাপটে কথা বলে
সরসর বাতাস ছুটে এসে ঘুমপাড়ানিয়া গান শোনায়
তবু আমার বুকজ্বলা পাথর ঠেলে উঁকি দেয় চারাগাছ
ওপড়ানো শিকড়
ভাঙা ফলকে ঢাকা ছায়াপথ–
আমি শুয়ে আছি অনড় সরীসৃপের মত
আমার বুকে জংলা ফুলের ঝাড়বাতি
সন্ধ্যায় জোনাকিরা বাতি জ্বেলে যায়
আমার বুকে
সোনালী ড্যাফোডিল ফুলের আহ্বান
এখানে মৃত্যু প্রেম প্রতীক্ষা একাকিত্ব অন্ধকার —
সব মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সহজে
বৃত্তের বাইরে আরো এক বৃত্ত এঁকেছি আমার চারপাশে
সে বৃত্তকে অতিক্রম করে আমাকে ছুঁয়ে যেও
হিমশীতল পাথরের বুকে রেখো তোমার শেষ চুম্বন
আমার বুকে
তোমায় লেখা শেষ চিঠির
” এপিটাফ “