সাউথ পয়েন্ট এক্স-রে ক্লিনিক
দীপক মান্না
বিভাস ট্রাম থেকে লাফ দিয়ে চোঁ চা মেরে ক্লিনিকের দিকে দৌড়াতে থাকে। আজ আসতে একটু দেরি হয়ে গেল। বোধহয় অনেক পেশেন্ট এসে হাজির। কিন্তু কি করা যাবে। রাস্তাঘাটের যা অবস্থা, বাইরে বের হলে কখন যে গন্তব্যস্তলে পৌঁছান যাবে বলা মুশকিল। কিন্তু মালিকরা কি সে সব বোঝে? কর্মস্থলে ঢোকার সময় আছে, বের হবার সময় নেই। এই না হলে প্রাইভেট কোম্পানি বাবা। রস নিংড়ে বের করে নেবে।
খিদিরপুরের সাউথ পয়েন্ট এক্স-রে ক্লিনিকের একমাত্র টেকনিশিয়ান বিভাস। তবে বিরাট কিছু ডিগ্রিধারী নয়। পিজি হাসপাতাল থেকে কি একটা কোর্স করেছিল। প্র্যাকটিস করতে করতে হাত বেশ পাকিয়ে ফেলেছে। তারপর সহৃদয় এক ডাক্তারের সহযোগিতায় চাকরিটি পায়। ক্লিনিকের মালিকটা মোটামুটি ভালো, আর পাঁচটা খিটখিটে মালিকের মত নয়। কোনো কোনো দিন একটু দেরি হলে খুব একটা কিছু বলে না। কারণ, কাজের ব্যাপারে সে খুব পারফেক্ট, পাংচুয়ালও বটে। তবুও পরের গোলামী বলে কথা।
বিভাস চিরকালই খিটখিটে মেজাজের। তাই অফিস, বাড়ি, বন্ধুবান্ধব কারোর সাথে তার খুব একটা পড়ে না। অফিসের কাজের সময় কেউ টিকটিক করলে ভীষণ চটে যায়। সেখানে মালিক হলেও পার পাবে না। কখনও কখনও মুখের ওপর দু-চারটে ছোটবড় কথা বলতেও পিছপা হয় না। তবে পরোক্ষনেই ঠাণ্ডা হয়ে ক্ষমা চেয়ে নেয়। যখন মেজাজ ভালো থাকে তখন বেশ মজার মজার কথা বলে। তাই শুনতে ক্লিনিকের সবাই ওঁত পেতে থাকে।একবার এক ভদ্রলোক ক্লিনিকে এসে বিভাসকে বলে – “দাদা, ডাক্তার আমায় ইউরিন টেস্ট করতে বলেছেন, এই তার প্রেসক্রিপশন”। বিভাস প্রেসক্রিপশনটা ভালো করে পড়ে নেয় তারপর বলে – ‘আপনি কি ইউরিন এনেছেন’? উত্তরে লোকটি ব্যাগ থেকে দেড় লিটারের একটা বোতল বের করে বলে – ‘এই যে এনেছি’। বিভাস বোতলে ইউরিনের পরিমাণ দেখে খেঁকিয়ে উঠে বলে – ‘এটা কি? আমরা কি আপনার ইউরিনে সাঁতার কাটব’? এই বলে ভিতর থেকে একটা ছোট্ট শিশি এনে হাতে দিয়ে বলে –‘এতে যতটুকু ধরে ভরে বাকিটা ফেলে দিন, কোথা থেকে যে আসেন আপনারা, ভাগ্যিস ডাক্তার আপনাকে স্টুল টেস্ট করতে দেননি’। এই বলে নিজের মনে গজগজ করতে করতে ভিতরে প্রবেশ করে। এমনই সব কথাবার্তায় ক্লিনিকটা বেশ জমিয়ে রাখে।
বিভাস হন্তদন্ত হয়ে ক্লিনিকে প্রবেশ করে। যা ভেবেছিল তাই। বেশ কয়েকজন পেশেন্ট এসে বসে আছে। ওপর থেকে আবার মালিকের স্ত্রী, তিনিও নিচে নেমে এসে বসে আছেন। এ এক যেন জ্বালা, বাড়ির সাথে অফিস বা দোকান হলে মালিকের গিন্নিদের এই উৎপাত সহ্য করতেই হবে। মাঝে মধ্যেই নিচে এসে তদারকি করবে। বিভাস দেখল মুখটা বেশ হাড়ি করে বসে আছে মালকিন। ভাবে এই বুঝি কিছু বলে। বললেই বিভাসের গা-টা জ্বলে উঠবে। এমনিতেই মেয়েদের কথাবার্তা তার খুব একটা পছন্দ নয়। ওরা কাজের থেকে কথা বলে বেশি তাও আবার অকারণে। তাছাড়া, মালিক দুটো কথা বললে হজম করা যায়, কিন্তু তার বউয়ের কথা গায়ে কাঁটার মত বেঁধে।
বিভাস না দেখার ভান করে তড়িঘড়ি পরেশদার কাছে জানতে চায় কারা কারা এক্স-রে করার জন্য এসেছে। পরেশদা মাঝবয়েসী লোক। রোগাটে মার্কা চেহারা। ক্লিনিকে বহুদিন থেকে আছেন। হিসাব সংক্রান্ত কাজের জন্য তাকে রাখা হয়েছে। কানে কালা। বেশিরভাগ সময় কাজে ভুলভ্রান্তি করে।তাকে নিয়ে ক্লিনিকে সবাই প্রায় হাসাহাসি করে। রেগে গেলে নাকের ডগায় চশমা ঝুলিয়ে মনোযোগ সহকারে কাজ করার চেষ্টা করে।
পরেশদা বিভাসের হাতে প্রেসক্রিপশন গুলো তুলে দেয় তারপর বেঞ্চে বসা একটি মেয়েকে দেখিয়ে বলে – ‘উনি আগে এসেছেন’। বিভাস যুবতীটিকে বলে – ‘আপনি ভিতরে চলে আসুন’। মেয়েটি বিভাসের পিছন পিছন যায়। বিভাস একটা সাদা অ্যাফ্রন দিয়ে বলে – ‘তাড়াতাড়ি পরে টেবিলের ওপর শুয়ে পড়ুন’। মেয়েটি কিছু বলতে যাচ্ছিল বিভাস তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে – ‘ভয় পাবার কিছু নেই, তাড়াতাড়ি করুন, আমি ততক্ষণে প্লেটটা রেডি করি’। এই বলে বিভাস বেরিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর প্লেট হাতে ফিরে এসে দ্যাখে মেয়েটি আগের অবস্থাতেই দাঁড়িয়ে আছে, হাতে বিভাসের দেওয়া অ্যাফ্রন। বিভাস অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে
- এখনও রেডি হননি?
- আসলে, আমি এক্স-রে করতে আসিনি।
- মানে! তাহলে কি করতে এসেছেন?
- ইন্টারভিউ দিতে।
- ইন্টারভিউ?
- হ্যাঁ, আপনাদের এখানে একটা মহিলা টেকনিশিয়ান লাগবে। তাই সে ব্যাপারে গতকাল আপনাদের মালিকের সাথে কথা হয়েছে। উনি আজ আসতে বলেছিলেন তাই এসেছি।
- সে কথাটা আগে বলতে কি হয়েছিল?
- আপনি বলার সুযোগ দিলেন কোথায়? খালি এদিক থেকে ওদিক ছুটছেন।
বিভাস কথা না বাড়িয়ে তাকে সোজা মালিকের ঘরে গিয়ে বসতে বলে। তারপর পরেশদাকে গিয়ে একহাত নেয়।
বিভাস গজ গজ করতে করতে চটপট বেশ কয়েকটা এক্সরে করে নেয়। এরই ফাঁকে পরেশদা একবার বিভাসকে ডেকে বলে –‘হ্যাঁগো বিভাস, এই মেয়েটি কি এখানে কাজ করবে’? - কাজ করুক বা না করুক তাতে আপনার কি?
- না বলছিলাম কি, দেখতে শুনতে বেশ ভালো তো তাই। বিভাস দাঁতে দাঁত চেপে বলে – ‘ঘাটের মড়া, আজ বাদে কাল ঘুণ ধরা বাঁশের খাটুলিতে দড়ি বাঁধতে হবে, রস তবু কম নয়। কাজ করছেন না এইসব করছেন। তারপর দিনের শেষে একটাকা মেলাতে গিয়ে ঘাম ছুটে যাবে’।
পরেশদা গম্ভীর হয়ে কাজে মন দিল। এদিকে ক্লিনিকের মধ্যে একটা চাপা হাসির রোল উঠে গেল। কিছুক্ষণ বাদে মালিকের ঘরে বিভাসের ডাক পড়ে। বিভাস মনে মনে বলে – ‘নাও, আর এক বোঝা ঘাড়ে এসে চাপল। একা একা কয়েকটা দিন ভালই কাটছিল। আগেরটা গেছে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিলাম। যদিও কাজে একটু অসুবিধা হচ্ছিল, তবুও বেশ গুছিয়ে নিয়েছিলাম। এখন এ বোঝা যে কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে কে জানে’।
কিছুক্ষণের মধ্যেই বিভাস মালিকের ঘরে প্রবেশ করে। মালিক মেয়েটিকে দেখিয়ে বিভাসকে বলে – ‘এ হল অর্চনা। আজ থেকে আমাদের ক্লিনিকে জয়েন করল। ও সবেমাত্রই কোর্স করে বেরিয়েছে। এটাই প্রথম চাকরি। তুমি ওকে কাজটাজ গুলো একটু শিখিয়ে দিও। এমনিতে ও বুদ্ধিমতী মেয়ে’। বিভাস চাপা স্বরে বলে –‘সে তো বোঝাই যাচ্ছে’ এবং সম্মতি জানিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। মেয়েটিও বিভাসের পিছন পিছন বেরিয়ে আসে।
বিভাস অর্চনাকে একটা প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলে – ‘এই ভদ্রমহিলার চেস্ট এক্সরে হবে। ওনাকে রেডি করে টেবিলে নিয়ে যান’। অর্চনা কথামত তাই করল। বিভাস ততক্ষণে প্লেটটা রেডি করে নিচ্ছিল। অর্চনাকে কাছে ডেকে বোঝাতে থাকে কোন জায়গার এক্সরের জন্য কতটা এক্সপোজার দিতে হয়। কিভাবে দিলে ছবিটা পরিষ্কার হয় এবং এক চান্সে। মহিলাটির এক্সরে হয়ে যাবার পর বিভাস অর্চনাকে বলে – ‘তুমি বলে ডাকলে কিছু মনে করবে’? - না, তবে অভদ্রের মত ডাকলে মনে করব।
- তবে আমারও কিছু করার নেই। আমি অত ভদ্রভাবে কথা বলতে শিখিনি।
- সে তো বোঝাই গেল মালিকের ঘরে। যেভাবে কথা বলার ছিরি আপনার।
বিভাস এক মুহূর্তের জন্য চুপ থেকে আবার বলে- ‘আর একটা কথা, সব সময় কানের কাছে এটা কি, ওটা কি, এটা কিভাবে হয়, ওটা কিভাবে হয়, এসব নিয়ে ঘ্যান ঘ্যান করবে না। যখন যেটা বলার ঠিক সময়েই বলে দেব’।বিভাসের খিটখিটে মার্কা কথাগুলো অর্চনা কোন রকমে হজম করে নিল।
পরদিন সকালে কাজের পর, দুপুরে লাঞ্চের সময় পাশের ঘরের টেবিলে বিভাস টিফিন বক্স খুলে বসে। ভাত, আলু সেদ্ধ, ডিম সেদ্ধ, একটা আস্ত পেঁয়াজ আর একটা কাঁচা লঙ্কা। কিছুক্ষণ পর অর্চনা নিজের টিফিন বক্স নিয়ে বিভাসের পাশে গিয়ে বসল। অর্চনাকে দেখে বিভাস গোগ্রাসে খেয়ে উঠে পড়ে। খাবার টেবিলে এই মেনু দেখে অর্চনা বলে –‘বিভাসদা একটা কথা বলব’? - খাবার পর বেশি কথা না বললেই ভাল, তবু বল।
- আপনি কি রোজ একই খাবার নিয়ে আসেন?
- কেন বলত?
- না, দেখলাম কালও যা খাবার এনেছিলেন আজও তাই।
- মাছ, মাংস কে রেঁধে দেবে?
- কেন বাড়িতে…?
- কেউ নেই। -বিভাস থামিয়ে বলে।
- বাবা-মা?
- ছোটো বেলায় মারা গেছে।
- বাড়িতে তাহলে কে কে আছেন?
- আমরা দু-জন, আমি সারাদিন কাজ করে, বাজার করে বাড়ি ফিরে রান্না করি আর তিনি বসে বসে গেলেন।
- বউদির কথা বলছেন? বিভাস অর্চনার মুখের দিকে তাকিয়ে বিরক্তির সুরে বলে – বউদি নয়, বাড়ির পোষা হুমদো বেড়াল। সারাদিন খায় আর ঘুমায়। অর্চনা কয়েক মুহূর্ত বিভাসের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর উচ্চস্বরে হা হা করে হেসে ওঠে। সেই শুনে ক্লিনিকের সবাই দরজার পাশে ছুটে আসে উঁকি মারতে। তারপর বিভাসের চোখে চোখ পড়তেই পালায়। অর্চনা বলে – ‘সরি, আমি ঠিক বুঝতে পারিনি। তা, যদি কিছু মনে না করেন আমার থেকে মাঝে মাঝে একটু আধটু তরকারি শেয়ার করতে পারেন’। বিভাস বলে – ‘ধন্যবাদ, তার কোন প্রয়োজন নেই, আমি এভাবেই অভ্যস্ত’। এই বলে এঁটো বাসন নিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে।
বেলা গড়িয়ে এসেছে। পেসেন্ট এর সংখ্যাও প্রায় কমে এসেছে। বিভাস এক্স-রে রুমের সরঞ্জামগুলো গুছিয়ে রাখছিল। অর্চনা পিছন থেকে এসে বলে – ‘ আপনি আমার ওপর রাগ করেছেন’? - কেন বলত?
- ওই যে তখন ওভাবে হাসছিলাম বলে!
- আরে না, না। আমার কথায় সবাই হাসে। ওতে মনে করার কি আছে? তুমি বরঞ্চ প্লেটগুলো সাজিয়ে রাখ, আমি রিপোর্টগুলো তৈরি করে ফেলি। ডাক্তারবাবু এসে পড়বেন।
বিকালে ছুটির পর বিভাস বলে – আপনি কোন দিকে? - বাস স্ট্যান্ড।
- আমিও, চলুন তবে এক সঙ্গেই যাওয়া যাক। এই বলে দুজনে একসঙ্গে বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটতে লাগল। অর্চনা বলে – ‘ আপনি বেশ মজা করে কথা বলেন’।
- হ্যাঁ, আমাদের জীবনটাই তো মজার, আর তাই মজা করেই বেঁচে থাকতে চাই। দেখছ না কেমন হাজার হাজার মানুষ ঘুম থেকে উঠে কর্মস্থলের দিকে ছুটে চলেছে আবার বিকেল হলেই উলটো মুখে বাড়ির দিকে ফিরছে। মজা আছে বলেই না এসব হচ্ছে।
- মজা বলছেন কেন? প্রয়োজনের তাগিদে বলুন।
- প্রয়োজন তো বটেই, তবে মজা না থাকলে কোনও প্রয়োজনই মেটাতে পারবেন না। অনেক সময় অপ্রয়োজনেও মানুষ কষ্ট করে। কারণ, সেই কষ্টের মধ্যে মজা থাকে। এই যেমন এতটা রাস্তা তুমি আমার সাথে আমার বকবকানি শুনতে শুনতে চলেছ, এতে মজা পাচ্ছ, তাই হাঁটতে পারছ।
- মজা যা পাচ্ছি বুঝতেই পারছি, যন্ত্রণায় পা-দুটো খুলে যাচ্ছে। অর্চনার কথায় বিভাস মুচকি হাসে, তারপর বাস এলে দু-জনে উঠে পড়ে।
পরদিন, বিভাস ক্লিনিকে ঢোকার মুখে দেখল পুলিন কাকা। তার পাঁচ বছরের নাতিকে নিয়ে বসে আছে। পুলিন কাকা ঠাকুর পুকুরের বাসিন্দা, রিকশা চালায়। একমাত্র নাতি, বাপ মা আগেই মারা গেছে। ছেলেটি কিডনির জটিল অসুখে ভুগছে। বিভাসদের ক্লিনিকে প্রায়ই আসে টেস্ট করার জন্য। সে যতটুকু পারে চেষ্টা করে সাহায্যের জন্য। বিভাস জিজ্ঞেস করে – ‘কিগো কাকা, কি ব্যাপার? পুলিন কাকা বলে – ‘আর বোলো না বাবা, নাতিটার শরীর আবার খারাপ করেছে। ডাক্তার বলছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডানদিকের কিডনিটা পাল্টাতে হবে, বেশি দেরি করলে বাঁ-দিকেরটাও নষ্ট হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে’। বিভাস বলে –‘তা তুমি কি করার কথা ভাবছ’? পুলিন কাকা বলে – ‘এই বুড়ো মানুষটা আর কি করতে পারে বলো, কোথায় পাব কিডনি! কে দেবে! বাপ-মা মরা ছেলেটাকে নিয়ে লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কিছু ব্যবস্থা করার জন্য। কেউ সাড়া দেয়না বাবা এ যুগে। আত্মীয় পরিজনদের কাছে গেলে দুটো পয়সা হাতে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চায়’। পুলিন কাকা নাতিটার মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বলে – ‘নাতিটাকে বোধহয় আর রাখতে পারবনা বাবা’। পুলিন কাকা চোখ মুছতে থাকে। বিভাস বলে – ‘ভেঙে পড়ো না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে একদিন। এখন কি করতে হবে তাই বল’। পুলিন কাকা পকেট থেকে প্রেসক্রিপশনটা বের করে বিভাসের হাতে দেয়। বিভাস প্রেসক্রিপশনটা দেখে বলে- ‘আমি টেস্টগুলো করার ব্যবস্থা করছি, তুমি পয়সার চিন্তা কোরো না’। পুলিন কাকা বলে – ‘তুমি আর কত করবে বাবা, কোনো বারেই তো পরীক্ষার পয়সা নাও না’। বিভাস কিছু না বলে পাশের চা দোকান থেকে একটা কেক কিনে বাচ্চাটার হাতে দেয়। তারপর পরেশদাকে বলে – ‘ আমার নামে পাঁচশ টাকা অ্যাডভান্স করে দিন, এমাসের মাইনে থেকে কেটে নেবেন। আর টেস্টের রিপোর্ট আনতে এলে ওনাকে দিয়ে দেবেন’। এই বলে বিভাস ভিতরে চলে যায়।
আজ ক্লিনিকটা একটু শান্ত। বিভাসের মনটা খুব একটা ভাল নেই। কেমন যেন আনমনা। ডার্ক রুমে কয়েকটা প্লেট নিয়ে ঢুকে গেল। বেরিয়ে আসতে অর্চনা বলে –‘ আজ আমার একটা রিকোয়েস্ট আছে’। - কি বল?
- আগে রাখবেন বলুন।
- ঠিক আছে।
- আজ আমি নিজের হাতে বাড়ি থেকে মাছ রান্না করে এনেছি, খাবেন তো?
- কথা যখন দিয়েই ফেলেছি তখন খাব।
অর্চনা বিভাসকে বাড়ির মত করে থালায় সাজিয়ে খেতে দিয়ে বসে রইল। বিভাস জিজ্ঞেস করল – ‘ তুমি খাবে না’? - আগে আপনি খেয়ে নিন, আমি পরে খাব। সে অর্চনার মুখের দিকে কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে খেতে লাগল। অনেকদিন পর আজ বেশ তৃপ্তি করে খেলো।
বিভাস জিজ্ঞেস করল – ‘বাড়িতে কে কে আছেন’? - আমি আর আমার পিসিমা।
- কেন বাবা, মা?
- দু-জনে এক সঙ্গে সুইসাইড করেছিল। আমার বয়েস তখন আট। তখন থেকেই পিসিমার কাছে মানুষ।
মুহূর্তের মধ্যে বিভাসের মুখটা কেমন যেন পালটে যায়। কয়েক মুহূর্তের জন্য তার খাওয়া থমকে গেল। তড়িঘড়ি করে শেষের গ্রাসটুকু মুখে তুলে অর্চনাকে বলে – এবার তুমি খেয়ে নাও। এই বলে সে উঠে পড়ে। দুপুরের পর বিভাস অর্চনাকে কয়েকটা এক্সরে হাতেনাতে করতে দেয়। তারপর রিপোর্ট কিভাবে করতে হয় শিখিয়ে দেয়। কাজ সেরে আবার দুজনে হাঁটতে হাঁটতে বাসস্ট্যান্ডের দিকে এগোতে থাকে।
বিভাস বাড়ি ফিরে আসে। গেটে শিকলের আওয়াজ পেলেই বিড়ালটা ছুটে আসে। তারপর লেজ খাড়া করে বিভাসের দুই পায়ের মাঝে নিজেকে জড়াতে থাকে। বিভাস তাকে কোলে তুলে নেয়, তারপর আদর করতে করতে ঘরে ঢোকে।
আজ মনটা কেমন যে উদাস। ঘরের জানলা দিয়ে খোলা আকাশের দিকে তাকায়। আজ সারা আকাশ জুড়ে কোটি কোটি তারা হাসছে। তার মাঝে পূর্ণিমার চাঁদ জ্বল জ্বল করছে আর সেই চাঁদের আড়াল থেকে কে যেন উঁকি মারছে। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছে। এই মুখটাই আজ দুদিন ধরে বড় জ্বালাচ্ছে। কোন কাজেই মন বসাতে দিচ্ছে না। রাতে ঘুম আসছে না। মনে মনে ভাবে একি আপদ এসে জুটল তার ভুবনে। বেশ তো ভালই ছিল ডাল-আলুভাতের জীবন। মাছের স্বাদ হঠাৎ তার ঘুম কেড়ে নিল। সারাক্ষণ অর্চনার মুখটা তার সামনে ভেসে উঠছে। আজ খাবার টেবিলে বড় অসহায় দেখাচ্ছিল তাকে। মনে মনে ভাবে আমারই মত অসহায় সে। তারা যেন গাছ থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়া জামরুল। পড়েই থেঁত হয়ে গেছে। এতটুকু মলম লাগানোর কেউ নেই।
রাতের খাওয়া সেরে বিভাস বিছানায় যায়। সারাদিনের কাজ আর যাতায়াতের ধকলে তার চোখে ঘুম নেমে আসে। কিন্তু ঘুম এলে কি হবে? দুচোখ জুড়ে রঙ্গিন স্বপ্নেরা ওড়না উড়িয়ে যায়। আর সেই ওড়না মাথায় দিয়ে অর্চনা সিনেমার হিরোইনের মত মৃদু হেসে আড়চোখে তাকায়। সারা ঘরদোর যেন হায়দ্রাবাদের ফিল্ম সিটি। এই ফিল্ম সিটি যেন অর্চনা দুদিনেই কিনে নিয়েছে। সে যেন চায়ের কাঁপ হাতে এসে দাঁড়িয়েছে, কখনও বাজারের ফর্দ আর থলি হাতে তুলে দেয়, কখনও আবার অভিমান হলে ঠারে ঠরে কথা বলে, কখনও রাগ হলে বেলন নিয়ে তেড়ে আসে। আবার কখনও কিছু চাওয়ার হলে হ্যাঁগো, ওগো বলে গা ঘেঁষে বসে।
হঠাৎ ঠন ঠন শব্দে বিভাসের তন্ময় কেটে যায়। ব্যাটা বিড়াল ইঁদুরের পিছনে দৌড়াতে গিয়ে স্টিলের থালাটা ফেলেছে বোধ হয়। বিভাস মনে মনে বলে – ব্যাটার হিংসা হচ্ছে আদর কমে যাবে বলে। কয়েকটা গালমন্দও করে। তারপর বিছানায় বসে নিজের মনে হাসতে থাকে। ভাবে, পৃথিবীতে দুধরনের গাধা আছে, এক চারপেয়ে আর হল তার মত দু পেয়ে, যারা পুকুরের পাড়ে বসে সমুদ্রের ঢেউ গোনে। তোমাকে নিয়ে বেকারই স্বপ্ন দেখছি অর্চনা। আমার আধা-আধির সংসার। এখানে শিল আছে তো নোড়া নেই, স্টোভ আছে তো তেল নেই, চাল আছে তো ডাল নেই, কলসি আছে তাও আবার ফুটো। বিছানায় পাশ ফিরলে পাশের ঘরের লোকের ঘুম ভেঙে যায় চৌকির আওয়াজে, মশারির যা অবস্থা, রোজ রাতে ভিতরে ঢুকে হাততালি দিতে হয়। কিছুদিন হল কয়েকটা ফুটোয় স্ট্যাপলারের পিন সেঁটে দিয়েছি। রাত্রি নিঝুম হলে দরজা, জানলায় বসবাসকারী উইপোকারা গান ধরে। এখানে তোমায় স্বপ্ন দেখান বৃথা অর্চনা। এ সংসারের দশার কথা শুনলে যে কোন মেয়ে সাতপাক ছেড়ে তিন পাকেই পালাবে। বিভাস মশারির কোণে ফুলে ফেঁপে ওঠা মশাটাকে সজোরে থাপ্পড় লাগিয়ে শুয়ে পড়ে।
বিভাস দেখল অফিসে কেমন যেন একটা কানাঘুষো চলছে। পরেশদার চশমা আর চোখেই থাকে না, নাকের ওপর ঘাপটি মেরে বসে থাকে। পরেশদার চোখদুটো কয়েকদিন অন্য হিসাব কষছে। বিভাসকে ডেকে একদিন বলে- ‘তা ভাই বিভাস সব ঠিক ঠাক চলছে তো’? বিভাস বলে – ‘হঠাৎ এ প্রশ্ন? এত দিন তো করেননি? এখনও পর্যন্ত সবই ঠিক ঠাক চলছে। থেমে গেলে বলব, তা এ বয়েসে এত খোঁজখবর নিচ্ছেন যে! ও বুঝেছি, প্রদীপ নেভার আগে একবার জ্বলে ওঠে, এটা তারই লক্ষণ’। মুখের ওপর এমন জবাব পেয়ে পরেশদা আবার কাজে মন দিল। মনে মনে ভাবল অন্যের পাকা ধানে মই দিয়ে লাভ নেই।
আজ অর্চনা বেশ সেজে-গুজে এসেছে। মনের মধ্যে কোথায় যেন ঘাপটি মেরে বসে থাকা কোকিল ডেকে উঠছে। আর সেই ডাক শুনে ইচ্ছেরা সব মৌমাছি সেজে উড়তে শুরু করেছে। বিভাস বলে – কি ব্যাপার? নিমন্ত্রণ আছে নাকি? – না, আজ অফিস ছুটির পরে এক জায়গায় যাব। আপনি একটু পৌঁছে দেবেন? বিভাস বলে – অসুবিধা কিছু নেই, তবে! – তবে? – না, ঠিক আছে। এই বলে বিভাস বেঞ্চে বসে থাকা এক পেশেণ্টকে ডেকে নেয়।
ছুটির পর দুজনে হাঁটতে থাকে। – কোনদিকে যাবে বললে না তো? – গড়ের মাঠ। – গড়ের মাঠ? কারোর সঙ্গে দেখা করতে বুঝি? – হ্যাঁ, ঠিক তাই। খিদিরপুরের বাসে দুজনে উঠে পড়ে তারপর ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে নেমে কিছুটা এগিয়ে একটা বেঞ্চে গিয়ে দুজনে বসে। – কই তোমার লোককে দেখতে পাচ্ছি নাতো! – কে বলল? আপনি খুঁজতে জানেন না তাই। – কোথায় বলতো? – এইতো আমার পাশেই বসে আছে। বিভাস হঠাৎ ইতস্তত হয়ে উঠে দাঁড়ায়। অর্চনা বিভাসের হাতটা টেনে ধরে। – দোহাই, আপনি যাবেন না। বিভাস কিছু না বলে অন্যদিকে কিছুটা মুখ ফিরিয়ে বসে। মনের মধ্যে গত রাতের স্বপ্নগুলো ভেসে ওঠে। তবে কি অর্চনা এই চালচুলোহীনকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। এও কি সম্ভব? বিভাস বলে – অর্চনা, তুমি বোধহয় ঠিক করছ না, আমার মতো…- অর্চনা থামিয়ে দিয়ে বলে – আমি একদম ঠিক করছি বিভাসদা। আমি যে তোমাকে নিয়ে এই কদিনে অনেক স্বপ্ন দেখেছি। আমাকে ফিরিয়ে দিও না। হঠাৎ আপনি থেকে তুমিতে চলে আসায় বিভাস অর্চনার দিকে তাকায়। অর্চনা মাথা নিচু করে। বিভাস বলে – তুমি কি বলছ তা জানো? আমার একখানা কঙ্কাল বেরিয়ে যাওয়া ঘর ছাড়া আর যে কিছুই নেই। বর্ষাকালে ঘরের ভিতর হাঁড়ি কলসির লাইন পড়ে যায়। দরজা-হীন রান্নাঘর, হুড খোলা বাথরুম, ঘরের মেঝে যেন দাঁত বের করা জাতীয় সড়ক। একখানা ভাঙা সাইকেল। রাস্তায় সতেরো বার চেন পড়ে যায়। এখানে এসো না তুমি। এখানে এলে তুমি পদে পদে হোঁচট খাবে অর্চনা। – অর্চনা বিভাসের হাত দুটো চেপে ধরে – আমি পারব বিভাস, আমাদের দুজনের জীবনে হারিয়ে যাওয়া সুখ-পাখিদের ফিরিয়ে আনব। – কিন্তু তারা যে ডাকলেও আসবে না! দিনের পর দিন না খেতে পেয়ে তাদের ডানায় আর সে শক্তি নেই। অর্চনা আবেগপ্রবন হয়ে বলে – আমার বিশ্বাস ওরা ঠিক ফিরে আসবে একদিন, আমরা ঠিক ফিরিয়ে আনতে পারব ওদের, তুমি দেখো বিভাস। – কেন এসব পাগলামি করছ? এ তো আমার জীবন নয়, যেন এঁদো পুকুরের ঘোলাটে জল। সূর্যের আলো ভুলেও পড়ে না। এখানে এলে খাবি খেতে খেতে মরবে। – না বিভাস, আমি যে অনেক স্বপ্ন দেখেছি, দু-জনে একসাথে চাকরি করব, তোমার ভাঙা সাইকেলে বসে বাড়ি ফিরব, তুমি চালাবে আর আমি বেলের কিড়িং কিড়িং শব্দ তুলে রাস্তার সব বাধা দূর করব। – বাজে না বকে বাড়ি চল। রাত হয়েছে। – তুমি কথা দাও বিভাস। – এখনি দিতে পারলাম না। এই বলে বিভাস বাসস্ট্যান্ডের দিকে পা বাড়ায়। অর্চনাও হাঁটতে শুরু করে।
পরদিন, বিভাস ক্লিনিকে ঢুকছে। কে যেন পিছন থেকে বলল, ওই তো দাদা এসেছে, এবার বউদিও আসবে। বিভাস এক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়ায়। তারপর মাথা নিচু করে ভিতরে প্রবেশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পরেশদা এসে বলে – ‘বিভাস, সেই লোকটা এসেছে, তোমার খোঁজ করছে। বিভাস বেরিয়ে দেখে পুলিন কাকা। বিভাসকে দেখেই পুলিন কাকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে তার পা-দুটো জড়িয়ে ধরে। বলে – আমার নাতিকে বাচাও বাবা। বিভাস হঠাৎ বিচলিত হয়ে বলে – কি করছ কাকা, কি হয়েছে? এই বলে পুলিন কাকার হাত দুটো ধরে দাঁড় করায়। – আজ সকালেই নাতিকে হাসপাতালে ভরতি করেছি। অবস্থা ভালো নয়। তুমি একবার চল বাবা। বিভাস এক মুহূর্ত চিন্তা করে পরেশদাকে বলে – আমি একটু বেরচ্ছি আজ, নাও ফিরতে পারি, দাদাকে(মালিক) একটু বলে দেবেন। এই বলে সে পুলিন কাকার সাথে রওনা দেয়।
হাসপাতালে ঢুকে বিভাস দেখে ছেলেটি প্রায় বিছানায় মিশে আছে। বিভাসের মনটা ভীষণভাবে ভারাক্রান্ত হয়ে পড়ে। আহা, বাপ-মা মরা ছেলে, এইটুকু বয়েস। পেটে একমুঠো ভাত যায় না ঠিক ভাবে। এখন তো দৌড়োদৌড়ি করার কথা। বিভাসের চোখদুটো জলে ভরে আসে। হাসপাতালের গ্রিল ধরে বাইরে মাঠটার দিকে তাকায়। দেখে ছোটো ছোটো ছেলেরা দৌড়ঝাঁপ করে খেলে বেড়াচ্ছে। বিভাস ভাবতে থাকে -আমার ছোটবেলা বলে কিছুই ছিলনা। বাবা-মা, কবেই তা সঙ্গে করে নিয়ে গেছে। দাদুর হাত ধরে কত আত্মীয়স্বজনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। শুধু তাচ্ছিল্য ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষারা কবেই টা টা করে পালিয়েছে। সুখ আমার জীবনে কোনদিন সয় নি। তাই একমাত্র ভরসা সেই দাদুও চাঁদুর দেশে পা বাড়াল। পৃথিবীতে বোধহয় সুখে থাকার অধিকার সবার নেই। তাই আমারও ছিল না। সুতরাং শুধু শুধু অর্চনার আঁচলের খুঁটে টান দিয়ে লাভ নেই।
বিভাস পুলিন কাকাকে বলে – তুমি চিন্তা করো না, আমি ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলছি। এই বলে সে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে এগিয়ে গেল। পরে চেম্বার থেকে বেরিয়ে পুলিন কাকাকে কাছে ডেকে বলে – আমি, ডাক্তারবাবুর সাথে কথা বলেছি, তোমার নাতি ঠিক হয়ে যাবে। – কিন্তু কিডনি? – তার ঠিক ব্যবস্থা হয়ে যাবে। শুধু আমায় কয়েকদিন এখানে থাকতে হবে। পুলিন কাকা অনুমান করতে পারে যে বিভাসই তার শরীরের একটা কিডনি তার নাতিকে দেবে। পুলিন কাকার দুচোখ বেয়ে জলের ধারা নেমে আসে। বিভাসকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে – তুমি বাবা সত্যিই ভগবান। বিভাস বলে – ওসব থাক, এখন কাউকে এসব বলার প্রয়োজন নেই। অপারেশন হয়ে গেলে আমাদের ক্লিনিকে একটা খবর দিয়ে দিও। পুলিন কাকা বলে – বাবা তোমার কোন ক্ষতি হবে না তো? -আমার কিছু হবে না। আর হলেও কাঁদার কেউ নেই, সুতরাং ওসব ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তুমি বরং আমার ঘড়ি, মানিব্যাগ, বেল্ট আর তোবড়ানো মোবাইলটা রেখে দাও। ওটা বন্ধ করাই থাক। এই বলে বিভাস ভরতির জন্য প্রস্তুত হল।
এদিকে, ক্লিনিকের সবাই চিন্তিত। বিভাস আসছি বলে কোথায় চলে গেল। আজ প্রায় দু-দিন গড়িয়ে গেল বিভাসের কোন খবর নেই। মোবাইলটা পর্যন্ত বন্ধ। অর্চনা কান্নায় ভেঙে পড়ে। তাদের বেড়ে ওঠা সম্পর্কের কথা ক্লিনিকের সবাই জেনে গেছে, এমনকি মালিক পর্যন্ত। শেষমেশ, তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পরেশদাকে বিভাসের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। এমন সময় পুলিন কাকা এসে হাজির। পরেশদা লোকটাকে দেখে চিনতে পারে। হ্যাঁ, এই লোকটা মাঝে মাঝে বিভাসের কাছে আসত। সেদিনও এসেছিল। সকলে তার দিকে এগিয়ে যায় – পরেশদা জিজ্ঞেস করে – তুমি বিভাসের খবর জান? সে বলে- হ্যাঁ, সে পিজি হাসপাতালে ভরতি। – কেন? কি হয়েছে তার? সবাই উদগ্রীব হয়ে একসঙ্গে প্রশ্ন করে। – সে আমার নাতিকে একটা কিডনি দান করেছে। বলতে বলতে তার দুচোখ জলে ভরে এলো। সবাই একে অপরের দিকে কিছুক্ষণ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তারপর একটা ট্যাক্সি ধরে পিজি হাসপাতালের দিকে ছুটল। বিভাস তখন হাসপাতালের বেডে ঘুমিয়ে আছে। পাশের বিছানায় ছোট্ট ছেলেটি। কিছুক্ষণ পর বিভাস চোখ মেলে তাকায়। দেখে মাথার কাছে অর্চনা। বিভাস বলে – তুমি? – হ্যাঁ আমি, সেদিন তুমি বলেছিলে না যে তোমার এঁদো পুকুরের ঘোলাটে জলের মত জীবন। এখন বুজেছি কেন তোমার জীবনটা এঁদো পুকুরের মত। তোমার এই এঁদো পুকুরের জল আমি আর ঘোলাটে হতে দেব না। তুমি না চাইলেও আমি সেই ঘোলাটে জলে খাবি খেয়ে খেয়েই মরতে রাজি। বিভাস মুচকি হেসে বলে – তুমি দেখছি পাঁকাল মাছ, অনেক আগেই আমার জীবনের কাদায় মাথা গুঁজে বসে আছো। আমার মনের এক্সরেটা তোমার মনের প্লেটে অনেক আগেই ছবি করে রেখেছ। পরেশদা পিছন থেকে হাসতে হাসতে বলে ওঠে – হ্যাঁ, আর সেই প্লেটটা আমাদের ক্লিনিকে বাঁধিয়ে রেখে দেব।
খুব ভালো লাগলো পড়ে । আবেগ আছে , ছোট গোলাপের প্রাথমিক শর্ত শেষের চমকও আছে । খুব সুন্দর , খুব সুন্দর , এবং খুব সুন্দর ।
জানিনা কিভাবে বানান ভুল হল ! আমার মন্তব্যের এক জায়গাতে “গোলাপের ” বদলে “গল্পের” হবে ।
ধন্যবাদ ।
বেশ ভাল লাগল।
ভালো লাগলো।