সম্পাদকীয়ঃ শারদ সংখ্যা ১৪২৮ – মন্দিরা গাঙ্গুলী

সারা বছরের অপেক্ষার পর চলে এসেছে শারদ উৎসব। নীল আকাশে দুধসাদা মেঘ, সোনালী রোদ্দুর, ভোরের শিশির যদিও এসেছে নিয়ম মেনে সঙ্গে তেমনই আছে নিম্নচাপ, অতিবৃষ্টি, বন্যা। মারণ ভাইরাসের দৌরাত্ম এখনও শেষ হয়নি। বিপর্যস্ত মানুষ। খেটে খাওয়া মানুষের রুটি রুজিতে টান। এমন সংকটময় পরিস্থিতিতে পৃথিবী এখন, যা অত্যাধুনিক যুগের মানুষ কল্পনাতেও রাখেনি। পরিচিত জনের মৃত্যুর বেদনা, রোগ ভোগের আশঙ্কায় জর্জরিত মানুষ। প্রায় দুবছর ধরে স্বজন বন্ধুকে করমর্দনে উষ্ণ অভিনন্দন জানাতে বাধা, বিজয়ার কোলাকুলি ঈদের আলিঙ্গনে বাধা। আর কি ফিরে আসবে তেমন দিন, বন্ধুরা সবাই মিলে একটি পাত্র থেকেই কাড়াকাড়ি করে খাবে, পথে অচেনা নিষ্পাপ শিশু মুখে চুমু দেওয়া যাবে! এমন অনেক কিছু মনে হয়, যা হয়ত আর কখনোই পারব না। মনের মধ্যে হয়ত তৈরি হয়ে যাচ্ছে এমন অনেক পাঁচিল। অত্যন্ত সংকটময় পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা, তবুও যখন, বনষ্পতির সম্ভাবনাকে বুকে নিয়ে অঙ্কুরিত হতে দেখি নরম লালচে কচি দুটো পাতা, আশা জাগে। এই যে অপার নীল আকাশে ভেসে আসা সাদা মেঘ, কত রঙের ফুল, এতো সুন্দর সব কিছু চোখে দেখে, ছুঁয়ে দেখে আনন্দকে বেঁধে রাখা যায় না। মনে হয়, প্রকৃতি যে ক্রমাগত আনন্দের জোগান দিয়ে চলেছে সে তো আমারই জন্য, একান্তই। এভাবেই সমস্ত সংকটের মাঝেও আনন্দ কে সঙ্গে রাখি। সৃজনশীল মানুষ এমন আনন্দেই সৃষ্টিতে ডুবে থাকেন। সৃজন করে চলেন একের পর এক।
অবেক্ষণ পত্রিকার শারদ সংখ্যা ১৪২৮, এমনই অমূল্য সব সৃষ্টিতে সেজে উঠেছে। মুক্তগদ্য, গল্প, অণুগল্প, কল্পবিজ্ঞানের গল্প, স্মৃতিকথা, প্রবন্ধ, দীর্ঘ কবিতা, কবিতা, অনুবাদ কবিতা, চিত্রাঙ্কন এবং কার্টুনে সেজে উঠেছে শারদ সংখ্যা। অংশ নিয়েছেন ভারতের বিভিন্ন প্রান্তের, ওপার বাংলার, বিদেশের লেখক, কবি এবং শিল্পীগণ। বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার টানেই একত্রিত হয়েছে সবাই। অবেক্ষণ পত্রিকার পক্ষ থেকে সকলকে অনুরোধ জানাই সকলের লেখা লিঙ্ক থেকে পড়ুন এবং ওখানেই মতামত দিন। নিজের লেখার লিঙ্ক শেয়ার করুন, পাঠক লিঙ্ক ছুঁয়েই পড়তে পারবেন। নিজের লেখা ছাড়াও বাকিদের লেখাও পড়ুন। সম্পূর্ণ পত্রিকা শেয়ার করুন, অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিন।
আয়তনে বিশাল শারদ সংখ্যা সঠিক সময়ে প্রকাশ করতে পেরে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমাদের সম্পাদক মণ্ডলীর সকলের প্রয়াসে সম্ভব হয়েছে এ যেমন সত্যি, তেমনই ধন্যবাদ জানাতে চাই আরও কিছু মানুষকে, তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া এই বিশাল কাজ সহজ হতো না। প্রথমেই জানাই যাঁরা সঠিক সময়ে তাঁদের সৃষ্টি আমাদের পাঠিয়েছেন সেই কবি, লেখক এবং শিল্পীদের। আপনারা প্রত্যেকে সময় মতো আপনাদের লেখা,ছবি পাঠিয়েছেন বলে পড়ে বাছাই করতে আমরা যথেষ্ট সময় পেয়েছি। সাজাতে পেরেছি। যাঁদের লেখা মনোনীত হয়নি, আগামীতে আপনার সেরা অপ্রকাশিত লেখা নিশ্চয়ই প্রকাশিত হবে শুভেচ্ছা রইল। এবার ধন্যবাদ জানাই এমন একজনকে যিনি পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকে সঙ্গে আছেন। যখন যেমন প্রয়োজন সেভাবেই তিনি সঙ্গে থাকেন। অবেক্ষণ পত্রিকার পরম বন্ধু, শ্রদ্ধেয়, দুই বাংলায় সমান ভাবে সুপরিচিত কবি জয়ন্ত বাগচী। প্রণাম এবং শুভেচ্ছা জানাই জয়ন্ত বাগচী দাদাকে।
আজ মহালয়া, এমন বিশেষ দিনই পত্রিকা প্রকাশের জন্য উপযুক্ত মনে হয়েছে আমাদের। সেই কথামতো বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও আজ প্রকাশিত হল অবেক্ষণ পত্রিকার শারদ সংখ্যা ১৪২৮।
শেষে, সবাইকে আগামী শারদ উৎসবের অনেক শুভেচ্ছা এবং ভালোবাসা জানাই। ভালো থাকুন, পত্রিকার সঙ্গে থাকুন। ভালোবেসে পড়ুন ভালোবেসে লিখুন। নমস্কার।

13 thoughts on “সম্পাদকীয়ঃ শারদ সংখ্যা ১৪২৮ – মন্দিরা গাঙ্গুলী

  1. খুব সুন্দর ঝরঝরে পেঁজা তুলো ওড়ানো মেঘের মতো সম্পাদকীয়। শারদীয়ার শুভেচ্ছা জানাই…. 🌱🙂

  2. দারুণ সম্পাদনা । অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা জানাই ।

  3. খুব ভালো লেখা। ভীষণ ভালো লাগল পড়ে। শারদ শুভেচ্ছা জানাই 🙏

  4. অসাধারণ পরিচালনা, দুর্দান্ত সম্পাদকীয়। অবেক্ষণর জন্য রইল অনেক অনেক শুভ কামনা।

  5. খুব ভালো লাগলো সম্পাদকীয় পড়ে। চমৎকার লিখেছেন। আসলে আমাদের সবারই উচিত একে অন্যের লেখা পড়া। তাহলেই আমরা সমৃদ্ধ হব। অবেক্ষণ- শারদ সংখ্যা ১৪২৮ এত সুন্দর ভাবে উপস্থাপনের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাই। দেশ বিদেশের অনেক গুণিদের লেখায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে সংখ্যাটি। এভাবেই এগিয়ে চলুক অবেক্ষণ আপনার সম্পাদনায় নব-নতুন পথের সন্ধানে। ভালো থাকবেন।

  6. একটি মননশীল সম্পাদকীয় নিবন্ধ।

  7. সম্পাদকীয় যথাযথ। চারপাশের সর্বনাশকে উপেক্ষা করেও কিন্তু নবজন্ম সক্রিয় থাকেই। কচি পাতায় যেমন লেখা থাকে মহীরুহের স্বপ্ন, সৃষ্টিশীলতাই শোনায় বেঁচে থাকার, জেগে থাকার অমল গল্প। ‘অবেক্ষণ’-এর শারদ অর্ঘ্যে যে বিশাল আয়োজন তার জন্য সম্পাদক ও সংশ্লিষ্ট সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই আয়োজনের নেপথ্যে যে ভালোবাসা, যে শ্রম থাকে, তাকে শুধু ধন্যবাদ শব্দে ব্যক্ত করা বাতুলতা। আপনাদের এ প্রয়াস পাঠকনন্দিত হোক, ‘অবেক্ষণ’ প্রিয়তর হয়ে উঠুক — কামনা করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *