উৎসব ২০২১
শিখা কর্মকার
যে মুহূর্তে কবিতার শরীর মিশে যায় সত্তায়, তার গহন জাদুমন্ত্রে আমি পরিযায়ী পাখীদের মত শাখাপ্রশাখা চিনে, কুটোর গন্ধ শুঁকে ফিরে আসি তোমার সান্নিধ্যে। স্বপ্নের নদীতে জাগে ঢেউ। শুধু দেখা হবে বলে চলে যায়না কেউ, সে হাজার মহালোকের বৃত্ত সরিয়ে, ফিরে আসে প্রাণবায়ু হয়ে মিশে যেতে । কানায় কানায় টলমল করে ওঠে হৃদয়, একটার পরে একটা অমুল্য জন্মান্তর ভেসে আসে চেনা মগ্নতার স্বাদ পেয়ে।
ঘন অন্ধকারের আভা সরিয়ে ফুটে ওঠে শিউলি ও গন্ধরাজের গুচ্ছ, ফিরে আসে শরতের আঘ্রাণ । অসীম এক স্নিগ্ধতায় মম করে ওঠা সকাল, তবু নীরবতার বৃত্ত ছুঁয়ে তুমি উদাসীন। চৌকাঠে মায়ের দেওয়া আল্পনা স্পর্শ করে আমি একবার আকাশ দেখি আর দেখি গ্রামের নদীটির পাড় ভরে দেওয়া কাশফুলের মগ্নতা । জানি এই মুহূর্তে দুজনেই দুজনের কাছে আছি, আবার নেইও। যা দেখা যায়না তার অস্তিত্ব যেন আরও সরব, তাকে ছাড়া চলেনা এক পলও । যেমন নিঃশ্বাসের জন্য বাতাস, যেমন আত্মা, যেমন আকুল করা ভালোবাসা, যেমন বৃক্ষের শরীর জুড়ে থাকা সেবাভাব, দূরে থাকা সন্তানের জন্য টান। তাই আজকাল মিলেমিশে যায় আপনপর । সবাই প্রাণের কাছের সুজন হয়ে থেকে যায় মায়ার সংসারে। এত সব দেখেশুনেও শ্মশানে বা সমাধিক্ষেত্রে গেলেই উদাস হয় মন। সে জানে আমাদের সারাটা শরীর আশিভাগের বেশি জল দিয়ে তৈরি তবু নিত্যদিনের অষ্টপ্রহর জুড়ে তার ভেতর কি যে এক তৃষ্ণার খাক, কি অসম্ভব এক দহন জীবন জুড়ে ।
বুলডোজারে করে উপড়ে, ছিঁড়ে ফেলতে থাকা প্রিয় গৃহটির মত প্রায় সর্বস্বান্ত আজ চেনা পৃথিবী। যতবার দেখি ঝড়ে পিষে যাওয়া শহর, জলে ভেসে যাওয়া জনপদ, আগুনে ধ্বংস হতে থাকা রাজ্য, এক পথভ্রষ্টের পেটে বাঁধা বোমায় প্রাণ হারায় শত শত মানুষ ততবার পড়ে দীর্ঘশ্বাস । অসাবধানি ও এলোমেলো হাওয়ার ভেতরে, উড়ে যায় বেঁচে থাকার উদগ্র কামনা, ধরে রাখতে চাওয়া স্মৃতি; কিছু চিরন্তন ও গোপনতম স্বপ্ন বরফের উপর মিসফিট পেঙ্গুইনদের মত পিছলে বেরিয়ে যায় । অদৃশ্য সাধেরা কথা বলে নশ্বর আলোয় । জিতে যায় সংসারের ঠুনকো রূপোলী পরত কিছুকালের জন্য, তবু সময় হলে ফিরে আসে আতাক্ষীর হয়ে জমে থাকা চিরন্তন সত্য ।
খুব সুন্দর
ভীষণ ভালো লাগলো