ভালোবাসার বাংলা
ভূমিকা গোস্বামী
২১শে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবস। অনেক মানুষের প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া এই দিনটি। আজ যে আমরা বাংলা ভালবেসে লিখছি , পড়ছি তার জন্য কৃতজ্ঞ সেইসব মহান আত্মার প্রতি।
একটা বিষয় বেশ কিছুদিন ধরেই দেখছি ভারতের নানা ভাষা ভাষী মানুষের মধ্যে।
একবার ব্যাঙ্গালোর থেকে ছোটছেলেকে দেখে ট্রেনে ফিরছিলাম। সেখানে অবাঙ্গালী একটি পরিবারের সাথে পরিচয় হয়েছিল। ওরা নিজেদের মধ্যে মাতৃভাষায় কথা বলছিল না। হিন্দিতে কথোপকথন করছিল।
দুদিনের পথ। তাই আমার সাথে ওদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। ওদের বক্তব্য অনুযায়ী- গ্রামের বয়স্ক যারা , তারাই মাতৃভাষায় কথা বলে।
সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম। আজ আর অবাক হই না।
কী বলি, বলুন তো ! খুব কষ্ট হয়, যখন প্রায়ই শুনি,আজকাল বাচ্চাদের মায়েদের হাসি হাসি মুখে অহংকার মেশান একটা কথা ,– আমার বাচ্চার বাংলাটা ঠিক আসে না। ছেলেমেয়েদের বাংলা পরীক্ষার আগের দিন মায়েরা বলে – কাল তো ওর সবচেয়ে বিরক্তিকর সাবজেক্ট।
একবারও লজ্জিত হয় না, এসব বলার সময়। অথচ ভাষা দিবস নিয়ে ফেসবুকে বড় বড় পোস্ট করে লাইক কুড়োয় এরা।
মাতৃভাষার প্রতি দরদ। বানানের প্রতি যত্নবান।মাতৃভাষা শেখার জন্য যে ভালবাসা প্রয়োজন সেটা হারিয়ে যাচ্ছে ।আসলে মাকেই তো ভালবাসে না কিনা।
হাত পা গজিয়ে গেলে মায়ের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায়। নিশুল্ক আত্মত্যাগের মূল্য দেয় না মাতৃভাষারও দেয় না।
সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হল , অনেক মা বাবা তাদের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়া সন্তানদের দ্বিতীয় ভাষা নির্বাচন করেন হিন্দি। বাংলা নয়। তাদের মতে জীবনে উন্নতি করতে ইংরেজীর পাশাপাশি হিন্দি শেখা জরুরী।
এরকম এক বাবা মা-কে বলতে গিয়েছিলাম – বাঙালি হয়ে বাংলা লিখতে পড়তে জানবে না ! রবীন্দ্রনাথ , সুকুমার রায় পড়বে না !
তার উত্তরে তারা বলেছিল — কী হবে ওসব ছাইপাশ পড়ে ? চাকরি বাকরি হবে ?
আমি সেদিন কোন কথা বলতে পারি নি । সত্যি বলতে , রুচি হয় নি। মনে মনে বলেছিলাম আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম শুধুমাত্র চাকরি করবে , টাকা রোজগার করবে, এটাই উন্নতির মাপকাঠি ? এটাই লক্ষ্য ?
এখন প্রশ্ন হল, জীবনের জন্য জীবিকা, না জীবিকার জন্য জীবন। যদি দ্বিতীয়টি হয়, তাহলে পশু, পাখিরাও তাই করে। মানুষ জন্ম কি ব্যাংকে টাকার অঙ্ক বাড়ানোর জন্য ?
মনের ভাব, বিচার , বিশ্লেষণ, অনুভূতি প্রকাশ করার নাম ভাষা। মাতৃভাষায় আমরা সাবলীল তাই সেই ভাষায় সূক্ষ্ম অনুভূতির প্রকাশ করতে পারি বা ভাবতে পারি। আজকের প্রজন্ম মাতৃভাষাকে অবহেলা করে, ততটা সাবলীল অন্য ভাষায় হচ্ছে তো ? না হলে কিন্তু চিন্তার বিষয়।
সুকুমার বৃত্তির অনুশীলনের পাঠ আজকের বাচ্চারা পাচ্ছে কি ? ছবি আঁকা, গান শেখা , নাচ শেখা, এমনকি খেলা- এগুলোও ভাললেগে ভালবেসে করছে তো ? নাকি এতেও প্রতিযোগিতা ? সকলের থেকে সেরা হওয়ার চাপ ওদের শৈশব কেড়ে নিচ্ছে না তো।
ভাষা দিবসের পূণ্য লগ্নে ভেবে দেখা প্রয়োজন।
যুগোপযোগী লেখা। ধন্যবাদ।
একদম সময়োপযোগী লেখা …..ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতটা বাংলা শিখবে….সেটা সত্যিই চিন্তার বিষয়। খুব ভালো লাগলো ।
বাহ্, একদম ঠিক বলেছেন।