বাইশে সেপ্টেম্বর দুপুরে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন কবি পার্থ বসু। তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন, ভর্তি ছিলেন হাসপাতালে; তাই চিন্তা ছিলোই ক’দিন ধরে, কিন্তু এই প্রাণবন্ত মানুষটি আবার আমাদের মাঝে ফিরে আসবেন, এই বিশ্বাস সবারই ছিল প্রবল। পার্থদাকে কবি হিসেবেই আমরা জানতাম, কিন্তু তিনি আমাদের কাছে সেই সঙ্গে হয়ে উঠেছিলেন একজন সুবক্তা। ভাষা-সংস্কৃতি স্বাধিকার মঞ্চের সব অনুষ্ঠানেই ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্হিতি। বয়স সত্তর অতিক্রান্ত হলেও, তরুণদের কাছেই তিনি ছিলেন বড় আপনজন।বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর পড়াশোনা ছিল যথেষ্ট, স্মৃতিশক্তিও ছিল প্রবল।সবার সঙ্গে মিশতেন সহজ সরলভাবে, অথচ কর্মসূত্রে তিনি একটি ব্যাঙ্কে উচ্চপদে ছিলেন।সেকারণে ঘুরতে হয়েছে ভারতের নানা রাজ্যে, মিশেছেন নানা রকমের মানুষের সঙ্গে, ভরেছেন অভিজ্ঞতার ঝুলি। বিভিন্ন বিষয়ে লিখেছেন পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আসাম ও বাংলাদেশের পত্রিকাতে। বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষায় যে কোন সভা সমাবেশে তিনি উপস্হিত থাকতেনই। বাংলার মুখ পত্রিকা, হাওড়ার সাহিত্য প্রয়াসী-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।অখিল ভারতীয় ভাষা সাহিত্য সম্মেলন, পশ্চিমবঙ্গ শাখার তিনি ছিলেন আজীবন সদস্য। এই সংস্হা তাঁকে “সাহিত্যশ্রী” উপাধিতে ভূষিত করেছে বেশ কয়েক বছর আগে। গত উনিশে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বিশ্ব বাঙালি সংঘ তাঁকে সম্মানিত করে বিশ্ব বাঙালি পুরস্কারে।সম্প্রতি দিলীপন ভট্টাচার্যের সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়েছে কালপুরুষের কবিতা (প্রকাশক:এবং জলার্ক) এই বইটিতেও রয়েছে সত্তর দশকে প্রকাশিত পার্থদার কিছু কবিতা।অসুস্হ হয়ে পড়ার কয়েকদিন আগেই ফোনে জানালেন আমাকে সেইকথা। কবি পার্থ বসু ছিলেন আমাদের বন্ধু ও পথ প্রদর্শক।তাঁর এই চলে যাওয়া বাংলা সংস্কৃতি জগতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। প্রথম জীবনে তিনি ছিলেন হাওড়ার বাগনানে, পরে চলে আসেন হাওড়ারই শিবপুরে। তিনি রেখে গেছেন স্ত্রী, দুই পুত্র, কন্যা, পৌত্র-পৌত্রি ও অগণিত বন্ধুদের।
কবি পার্থ বসুর প্রকাশিত কবিতার বই :
-ব্যাঙ প্রথামত জিভটাকে উল্টে নেয় (1965)
নারী বশীকরণ জানে না (1988)
কবিতা স্বাস্হ্যের পক্ষে ক্ষতিকর ( 1993)
শূকর পরাস্ত হোক (1995)
স্মৃতির সঙ্গে সহবাস – কাব্য উপন্যাস (2005)
ওনার লেখা, আপনাদের স্মতিচারণা বারবার ওনাকে মনে করিয়ে দেবে।
কবি কে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
মানুষ তার কাজ আর ব্যবহারে অমর হয়। পার্থবাবু তাঁর কাজ আর তাঁর আত্মীয় পরিজন বন্ধুদের হৃদয়ে চিরকাল থাকবেন। অবেক্ষণ ও তাঁকে কখনও ভুলতে পারবে না।
কৌস্তভ, ঠিক ঠাক মূল্যায়ন করেছ। তোমায় ধন্যবাদ। পার্থ বসু অমর থাকুন।