অনু গল্পঃ ব্রেকিং নিউজ – দেবাশিস রায়

ব্রেকিং নিউজ
দেবাশিস রায়

হাতে সময় ছিল। কি করি কি করি ভাবতে ভাবতে শেষে মোবাইলটা অন করলাম। এটা সেটা দেখতে দেখতে
একটা বাংলা নিউজ পোর্টালে চোখ আটকাল। ব্রেকিং নিউজ। আগামী ২১শে এপ্রিল নাকি ধ্বংস হতে চলেছে
মানব সভ্যতা। বলে কি? হেডলাইন দেখে পিলে চমকে যাওয়ার মত অবস্থা। দেখতে হয় ভালো করে, কি
বলেছে!
আগামী ২১শে এপ্রিল প্রবল বেগে ছুটে আসা একটি গ্রহাণুর পৃথিবীতে আছড়ে পড়বার সম্ভাবনা রয়েছে।
গ্রহাণুটি আয়তনে চার কিলোমিটার ব্যাসের। প্রতি ঘণ্টায় সে ৩১,৩২০ কিমি গতিতে ছুটে আসছে পৃথিবীর
দিকে। এমন গ্রহাণু ছুটে আসবার ঘটনা প্রতি একশো বছরে পঞ্চাশ হাজার বার ঘটে থাকে। তবে পৃথিবীর
বুকে আছড়ে পড়বার সম্ভাবনা এই পঞ্চাশ হাজার বারের মধ্যে একবারই নাকি দ্যাখা দেয়। বিগত ২০১৮
সালেও একবার এমন সম্ভাবনা দ্যাখা দিয়েছিলো। তবে সেসময় গ্রহাণুটি পৃথিবীর কান ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়।
এবারে তেমন হবে না বলেই নাকি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীদের মত। অতএব ধরে
নেওয়া যায়, আগামী ২১শে এপ্রিল ধংস হতে চলেছে এই পৃথিবী। আর সাথে বর্তমান মানব সভ্যতা। খবরটা
নিসন্দেহে চমকে দেওয়ার মত।
কিন্তু আসল চমক অপেক্ষা করছিলো আরও নীচে। খবর যেখানে শেষ হয়েছে, ঠিক তার পরেই দেওয়া
রয়েছে কয়েকটা বিজ্ঞাপন। পরপর যেমন ছিল, তেমন তুলে ধরলাম। বিজ্ঞাপনগুলো ছিল এইরকম।
১। অত্যন্ত স্বল্প মূল্যে ২/৩ কামরার ফ্ল্যাট বুক করুন। দু বছরে পজেশন। ই এম আই শুরু হবে পজেসন
পাওয়ার পরে।
২। স্পোর্টস বাইক। ই এম আই মাত্র ২৭৯৫ টাকা প্রতি মাসে।
৩। তিন হাজার টাকার স্মার্ট হাতঘড়ি মাত্র ৪৪০ টাকায়।
৪। জুতো কিনবেন? আমাদের স্টোরে আসুন। পদশোভা। বামুনপাড়া মোড়ে। ৩০-৭০ শতাংশ ছাড়ে কেনাকাটা
করুন।
বুঝলাম না যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছেন, তাঁরা কি খবরটা পড়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছেন? পৃথিবী যদি না থাকে, কি
প্রয়োজন থাকবে এসবের? ক্রেতা বা বিক্রেতা, কারো কোন প্রয়োজন কি আদৌ থাকবে ২১শে এপ্রিলের
পরে? বুঝলাম না। আরও যেটা মাথায় আসছে না, খবরের গুরুত্ব কি এই বিজ্ঞাপনগুলো টেনে এনেছে? না কি
এই বিজ্ঞাপনগুলো পড়াবার জন্য এই খবর? কিছুই বুঝতে পারছি না। কেবল এটুকু মাথায় এলো। যা বুঝতে
পারলাম। যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ।

3 thoughts on “অনু গল্পঃ ব্রেকিং নিউজ – দেবাশিস রায়

  1. ব্রেকিং নিউজ অনু গল্পটি ভাল লাগল।

Leave a Reply to ভূমিকা গোস্বামী। Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *