কাগজে কিচ্ছুটি নেই
অনিরুদ্ধ সুব্রত
কাগজে কিচ্ছুটি নেই, কোনো দিন ছিল না
কবি মরে গেলে, হাজার গল্পের উদয় হয়
ছাপা মেশিনের বিভৎস ঘর্ঘর, উপরন্তু যার
ক্লেদ-কালির নোংরা আদর ছাড়া, কোথাও
কিচ্ছু নেই— বিস্রস্ত বা সেলাই কাগজের ভিতর।
কবিতা বেঁচে ছিল, কবির স্নায়ুর টেবিলে
ভাঙা কলমদানি আর আঙুলে, নখে ও নিঃশ্বাসে
কাগজে কিচ্ছুটি নেই, হরফে ছাই ফেলে রেখে
কবি পুড়ে গেছে তার কবিতার চিতার আগুনে
নিজেই অনুচ্চার টেনে ঢেকেছে কবিতার কবর।
সম্মানিত কাগজ গুলোর খসখসে ও পেলব
শরীরে, এতো যে গোপন ঘৃণিত আদর ছোঁবে
কোথাও দেহ নেই, মন নেই, নেই চর্ম-ঘর্ম-শ্বেদ—
নিকৃষ্টতম অভাব আর স্যাতসেতে দেয়ালের ভাপ
নেই নগ্ন, ব্যর্থ উত্তাপ আর অশ্রু-বীর্য অভিশাপ ঘর।
কবিতা ছিল, স্বমেহনের মতো অসহায় এককে
চরম দারিদ্রের মতো ভিক্ষায়, প্রতিবাদী থুথুতে
আত্মহত্যার সহস্র পরিকল্পনার নষ্ট ঘন অন্ধকারে
সৌখিন প্রেমের দিকে করুণার দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে
আর হাসপাতালের বিছানায় ও মর্গে শেষতম বার।
কাগজে কিচ্ছুটি নেই, ওই লাল প্রশংসা ঠোঁট
বিবর্ণ মন, বিধ্বংসী ব্যাখ্যায় কবি নেই, ছিল না
যাদের আঙুলে আজ মলাটের ঘ্রাণ, রক্ত স্পর্শে
ভিতরের পাতারা যৌন হয়ে উঠেছে বলে মনেহয়
কিচ্ছুটি নয়, শিরোনামে শুধু উপেক্ষার দায়ভার।
এই কাগজের কারবার পুরোনো, ঢ্যামনামো
কবি যেন কালের জোকার, তার গান্ধারী-জরায়ু
একরাশ যোদ্ধা জন্মে, কুরুক্ষেত্র জমিয়ে দেবে
শেষে চোখে পট্টি বেঁধে, জড়িয়ে বসে থাকবে
এই প্রেমহীন মূল্যায়নের, অন্ধ ধৃতরাষ্ট্র-পাথর।
আমি জানি, তুমি ও তোমরাও জেনে নাও
ঐ শুকনো কাগজে কিচ্ছুটি নেই, থাকবে না
ছিলই না কোনো দিন, উপক্রমণিকা কিছু তার
জীবন ও কবিতার এক তুচ্ছ রসায়ন জন-মন
পরিবার, বন্ধুর, প্রেম-প্রবর, পাঠকের, হৃদি-হার।
কাগজে কিচ্ছুটি নেই, কোনো দিন ছিল না
কাহিনির নিমিত্ত ক্লাইমেক্স, মর্মের প্রয়োজনে
মৃদুভাষ, এঁটো থালা, দয়া গ্রাস, এড়াবার ঘনরাত
শুধু মৃত্যুর ধূ ধূ প্রান্তর— গুছিয়ে দেবে অবকাশ
কেবল প্রহসনে ছাপা হবে কবি, ‘সমগ্র কবিতার’।
বাঃ, চমৎকার।