কবিতাঃ ভিড় সরাও – অনিন্দ্য গোস্বামী

রাস্তার ধারে কাল থেকে রঙিন ভিজে মাটি।
গলির রাস্তায় কোথাওবা মানচিত্র আবিরের।
উজ্জ্বল সে রঙিন ধুলো, কোনো অপরিচিতের
মুঠোয় উঠেছিল, তার ও কোনো পরিচিতের
হাতে মুখে, গলায় মাখামাখি হবে বলে।
সমস্ত প্রয়াসের শেষে, এখন তো শুধু
শিথিল অপেক্ষা মুছে যাওয়ার আর কিছুদিনে।

ঝুঁকে দেখি, প্রতিটি ধুলোর তহবিলে
জমা আছে বিনিময়ের স্মৃতি। এই দেখো,
কত শত সহস্র বিনিময় হয়ে গেছে
প্রতিটি মুঠোতে। আর তার কত লক্ষ স্মৃতি
চেয়ে দেখো পড়ে আছে অলিতে গলিতে।

বিনিময় হয়েছে কত শব্দের, আর ইঙ্গিতের,
কত উপেক্ষার, কত ঈর্ষার, কত কুণ্ঠার,
কত মিথ্যের, কত ভালোবাসার। কত গর্ব,
কত বিভেদ, কত দায়, আর কত ভয় ঐ দেখ
জমা আছে পড়ে থাকা ধুলোর তহবিলে।

সেই সব স্মৃতি, ভরা সন্ধেয়, জ্যোৎস্নার ভাপে-
ধূপের ধোঁয়ার মতো প্রতি কণা থেকে জেগে
প্রেতের মতো ভিড় জমিয়েছে চলার পথ গুলোয়।
পূর্ব দিগন্তে মাথা তুলে চাঁদ, বলছে “ভিড় সরাও”।

তার নিজের সকাল, দুপুর, আর মাত্র সন্ধের
এক চিলতে রেখা নিয়ে, আকাশের গায়ে
হাজির হওয়া চাঁদ, বলছে “ভিড় সরাও”।
বলছে “চলার পথ থেকে সরিয়ে রাখো স্মৃতি”।

বলছে –
“শেখনি কি বিস্মৃতির মূল্য, হে পৃথিবীর ধুলো?
আমার না মেটা সব সংঘাতকে আঙুল তুলে
বলোনি কি, সে সব কলঙ্ক আমার? বোঝোনি,
তোমার আনন্দ, তোমার জীবন, এমনকি জন্ম,
এক অনন্ত সত্যের ক্রমাগত বিস্মরণ?”

আমি জ্যোৎস্নায় আপ্লুত হয়ে শুনছি ঐ কৃষ্ণ
পক্ষের চাঁদের গম্ভীর নির্দেশ “ভিড় সরাও”।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *