গ্রন্থ সমালোচনাঃ ছোট্ট ছোট্ট পায়ে (রচনা – চিত্রাভানু সেনগুপ্ত ) – রাধাকৃষ্ণ (রাধু) গোস্বামী

ছোট্ট ছোট্ট পায়ে হেঁটে চলে বেড়ায় ছোট্ট ছোট্ট সাদা মোজা বা সাজদা রূপোয় তৈরী নূপুর বা খালি পায়ে চলা আজকের ছোটরা। তাদের মনে অদম্য কৌতূহল আর দুর্দান্ত সাহস তবে ক্ষমতা বয়েসের কারণে অনেকটাই কম। এরা কোমল মনে পৃথিবীর ভালোমন্দের মধ্যে বেড়ে ওঠে আর সঙ্গে কখনো সখনো পায় দাদু দিদা মা বাবার আদর। লেখিকা বলেছেন – শৈশব, কৈশোর স্বপ্ন দেখার বয়স। “…
সর্বমোট ১০(দশ) টি গল্পের সংকলন এই বইয়ের প্রথম গল্পটি হল – ‘প্রিয় বান্ধব’ যা কোন এক পোষ্য নিয়ে যে মনিবের ইচ্ছেকে নিজের কর্তব্য মনে করে। এক কথায় এটি এক অনুপম গল্প।
পরের গল্প ‘ চার সেপাই ‘ প্ল্যানচেটে আত্মা আনিয়ে জিজ্ঞেস করা ও জমিবাড়ি দখল করা নিয়ে গল্প। ভালো লাগলেও কোনো ভাবেই ছোট্টদের জন্য নয় বরং বড়দের হিংসা মারামারির ঘটনায় গল্পটি জমে উঠেছে।
তারপরে ‘ ডিঙ্কু পালোয়ান ‘ গল্পটি পোষ্য পালনের গল্প। সত্যিই অনেক সময় পোষ্য উপকারী বন্ধু হয় । ভালো লাগলো।
এরপর ‘ উত্তর সূরি ‘ গল্পে অপত্যস্নেহ নিজের মা ও পালক নিঃসন্তান জমিদারের মধ্যে এক নিদারুণ মিলনের গল্প। ভালো লাগবে সকলের।
এরপরেই ‘ পান্তা পাখি ‘ গল্পে পাখিপ্রেমের গল্পটি সুন্দর হয়ে উঠেছে।
তারপর ‘ তারক দাদা ‘ বড্ড করুণ রসের গল্প। একটু উদ্ধার করি, “…মাম বুড়ির মন বসে না কোনো কিছুতেই। ঠাকুমার কথাই কি তাহলে সত্যি হল ? জানালার শিক ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে মামবুড়ি। ওই আকাশের পশ্চিম পানে মেঘের আঁকিবুকি র মধ্যে তারক দাদার সাইকেলের হ্যাণ্ডেলটা যেন ঠিক দেখা যাচ্ছে। আর বিশেষ কিছু দেখা না গেলেও মামবুড়ি বেশ বুঝতে পারে ওইখানেই কোথাও সাইকেল চেপে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারকদাদা। ক্ষীণ স্বরে বলে ওঠে মামবুড়ি, – তালকদাদা, তুমি তো জানতেই পাল্লে না আমি রবিন্দ নগরে এছেছি। তুমি যে আমায় মিঠু পাখি এনে দেবে বলেছিলে? আল তিনটে বিগুণী ফুল? এত দূলে একা একা বেলাতে যেতে আছে বুঝি?
গলা কাঁপছে মামবুড়ির। চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। বেশ অনেকটা দূর থেকে ক্ষীণ আওয়াজ ভেসে আসছে কানে….ক্রিং ক্রিং ক্রিং…” এত করুণ রসের গল্প লিখতে সাহস পেলেন লেখিকা ! ধন্যবাদ লেখিকা চিত্রাভানু সেনগুপ্ত এটা প্রাপ্য আপনার।
‘ ছিপ ‘ কিশোরদের জন্য সুন্দর গল্প।
এর পরের ‘ মাধব মনোরথ ‘ গল্প যথাযথ। সঙ্গে যুক্ত রয়েছে মানব সেবার আদর্শ।
এর পরের গল্প ‘ টাঙার সঙ্গে টানাটানি ‘ একটি ছোট্ট বেলার ভ্রমণস্মৃতি খুব ভালো লাগলো।
শেষ গল্প ‘ ফলাহার ‘ বা ফলহার (?) গল্পটি ব্যারাকপুরের লাট বাগানে সাহেবের বাগানের গাছের ফল খাবার গল্পটি মন্দ নয়। ধন্যবাদ লেখিকা।

২৭/৪/২০২৪ সোদপুর।

প্রথম সংস্করণ, প্রথম মুদ্রণ জানুয়ারি ২০২৪
প্রচ্ছদ ভাবনা, বিন্যাস, অলংকরণ অঙ্কন মাইতি
রা প্রকাশন, বৈশাখী, প্লট ৭, আর কে পল্লী, নরেন্দ্রপুর, কলকাতা – ৭০০ ১৪৯
মূল্য – ২৩৯/-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *