মুক্তগদ্যঃ পয়লা বৈশাখ;সৌজন্য ও ভালোবাসার প্রকাশ – সোমা মুখোপাধ্যায়

পৃথিবী তার মেরুরেখার ওপর একবার ঘুরপাক খেলে সম্পূর্ণ হয় একটি দিন-রাত। এমনি দিন-রাতের মালা গেঁথে গ্রীষ্ম-বর্ষা-শরৎ ইত্যাদি ঋতু পরিক্রমা শেষ করে ঘুরে আসে এক একটি বছর।
আসে নতুন বছর— নববর্ষ। আসে বৈশাখ।
উৎসব মানুষকে বেঁধে রাখে সংস্কৃতির প্রতীক হয়ে । ‘বৈশাখ’ শব্দটি এসেছে বিশাখা নামক নক্ষত্র থেকে । বৈশাখ মাসের প্রথম দিনটি হলো বাংলা নববর্ষ। পয়লা বৈশাখ এক উদযাপনের দিন। পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ, উড়িষ্যা, কেরালা প্রভৃতি জায়গায় বিভিন্ন নামে বৈশাখের প্রথম দিনটি বিভিন্ন নামে উদযাপন করা হয় । শিখরা ওই দিন পালন করেন বৈশাখী উৎসব। পশ্চিমবঙ্গে চৈত্রের শেষ দিনে হয় চড়ক। ওই সময় মেলা বসে, বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামে এর দেখা মেলে বেশি। শহরাঞ্চলে ইতস্তত মেলা দেখা যায়। পয়লা বৈশাখ সৌজন্য ও ভালোবাসার দিন। বৈশাখের প্রথম দিন ব্যবসায়ীদের কাছে যেমন জনপ্রিয় হালখাতার জন্য, তেমনই কৃষকদের কাছে এই দিনটা চাষবাসের নতুন প্রস্তুতির দিন। বিভিন্ন রাজ্যে এই দিনটার উদযাপনের একটা নিজস্ব রীতি আছে যা আমাদের সংস্কৃতিকে প্রতিফলিত করে। পয়লা বৈশাখ বাংলাতে হালখাতার দিন, প্রভাতফেরীর দিন, বৈঠকী আড্ডা, মেলা, সাবেকী সাজ আর বাঙালি খাওয়া দাওয়া ও সৌজন্য বিনিময়ের দিন। সংস্কৃতি সভ্যতাকে ধারণ করে ও বয়ে নিয়ে চলে। সকাল সকাল নতুন জামাকাপড় পড়ে পুজো সেরে বড়দের আশীর্বাদ নিয়ে শুরু হয় উৎসব। যারা সাংস্কৃতিক চর্চা করেন তারা এই দিনে গান, নাচ, কবিতা পাঠ ও অভিনয় নিয়ে মেতে ওঠেন উৎসবে। চলতে থাকে বৈঠকী আনন্দ দিনভর। যৌথ পরিবারে এই দিনগুলো সকলের সমাগমে গম গম করতে থাকে…….বিশেষ করে পরিবারের যে সকল ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা বা কাজের সুত্রে বাইরে থাকেন তারাও এই দিনের উৎসবে সামিল হয়ে আনন্দে মেতে ওঠেন পরিবারের সাথে।
বাঙালির সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের ইতিহাসে উৎসবরূপে পালিত হতে থাকে বাংলা নববর্ষ আর রচিত হতে থাকে অসংখ্য গল্প, কবিতা, গান— এই বৈশাখ আর নববর্ষকে নিয়ে। নৃ-তাত্ত্বিক, সামাজিক অনন্যবৈশিষ্ট্য মিলে নববর্ষ উৎসব এখন বাঙালির এক প্রাণের উৎসব— প্রাণবন্ত এক মিলনমেলা।
বাংলা নববর্ষ এ দেশের একটা প্রাচীনতম ঐতিহ্য। পহেলা বৈশাখের উৎসবের মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে। সংগীত, নৃত্য, আমোদ-প্রমোদ, প্রভৃতি পৃথিবীর যেকোনো প্রাচীন ও নবীন উৎসবের একটি অতিসাধারণ অঙ্গ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *