তিনটি কবিতা
তৈমুর খান
১
অসামঞ্জস্য
যে থালায় ভাত খাই
রোজ দেখি গোপন ছিদ্র আছে থালার তলায়
আয়নার সামনে দাঁড়ালে
নিজেকে নিজেরই কুকুর মনে হয়
কখনো কখনো বাঘ হয়ে তাড়া করি
কখনো ধূসর বক হয়ে মৎস্য শিকারি
সংসার অরণ্য অথবা গভীর জলাশয়
বাঘ-বক-কচ্ছপের লীলায় দিন যায়
রাত্রি এলে চাঁদ দেখি বেহালা বাজায়
আমি তখন নাচ লুকিয়ে রাখি
আমার ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে আবেগি নর্তকী
বিশ্বাস হয় না, নিজেরই আঙুল চিবিয়ে নিজে
আত্মরতি যেন কোনও সামঞ্জস্য খোঁজে….
অথচ ভাষা নেই, শীৎকারের নিরুক্ত হাসি
উপলব্ধির মধু পেয়ে ওড়ে মন-মৌমাছি
হাতখানা হাতে রেখে ছোঁয়ার অভ্যাসে
আমার আমিকে দেখি ভেসে যাচ্ছে একাই জোয়ারে
২
বিদ্বেষ
এত বিদ্বেষ এখন রাস্তাঘাটে তেড়ে আসছে
শিং দেখাচ্ছে
সিংহ হয়ে গর্জন করছে
আমার সারা শরীরে নরম মাংস
কামড় দেবে
কণ্ঠরোধ করবে
তারপর গোগ্রাসে মুছে দেবে সব পরিচয়
এই কদিন ভালো বসবাস
এই কদিন জাবর কেটে মুখস্থ করেছি ইতিহাস
এই কদিন ছেঁড়া ভূগোলে লুকিয়ে রেখেছি সর্বনাশ
মেরুদণ্ড বেঁকে গেছে
ভস্ম হয়েও ভস্ম থেকে জন্মেছি বারবার
রতির কান্নায় পূর্ণ হয়েছে এই ভাঙা সংসার
ঢেউ উঠেছে গঙ্গা ও পদ্মায়
এপারে ওপারে কুহু ও কেকা ভেসে গেছে বন্যায়
বিদ্বেষ জানে রক্তের মানে
বিদ্বেষ জ্বলে তেলে ও বেগুনে
বেড়ে উঠে তার কত দাঁত-নখ
অসহ্য এখন, অসহ্য আমি
চোখে চোখে তার হল্লা আগুনের কেবল ফেটে পড়ে
৩
উঁকি
ব্যক্তিগত দেয়াল ধ্বসে গেছে
অনেক ফোঁকর চারিপাশে
সেরকম শব্দ নেই বলে মেরামত হয়নি বহুদিন
দুর্বল বিশেষণ কেঁপে কেঁপে ওঠে
বাইরের আলো এসে লাগে চোখে মুখে
বেলেল্লা হাওয়ায়
মাঝে মাঝে পর্দা সরে যায়
চারিপাশ থেকে আসে নির্লজ্জ উঁকি
তীব্র চোখ তীব্রতর হয়
তৎসম মরুর শৃগাল
আমার জ্বলন্ত হৃৎপিণ্ড চেটে চেটে খায়
হু হু করা শীতে
রোদের বালক আসে হামাগুড়ি দিতে দিতে
বোধের ছেঁড়া কাঁথায় ঢেকে রাখি আলুথালু জীবন
কে দেবে স্নেহের ওম! কার কাছে চাইব ধার?
পথিকেরা সারারাত যায়
আমার দুঃখের ভোর শুধু উপেক্ষার উঁকি কুড়িয়ে পায়…