প্রবন্ধঃ শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সখা মুকুন্দ, পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি ও কয়েকজন – রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সখা মুকুন্দ, পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি ও কয়েকজন
রাধাকৃষ্ণ গোস্বামী (রাধু)

‘ কৃষ্ণের গায়েন ‘ মুকুন্দ দত্ত তাঁর মনে সখা শ্রীগদাধর পণ্ডিতকে এক বিচিত্র বৈষ্ণবজনের সঙ্গে অর্থাৎ পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির সাক্ষাৎ করিয়ে ছিলেন। তাঁর বাহ্যিক দর্শনে ও বিলাসপূর্ণ ব্যবহারে তাঁকে প্রথমটায় শ্রীগদাধর পণ্ডিতের বৈষ্ণব বলে মনে হয় নি। কিন্তু ছয়দিন বয়েসের শ্রীকৃষ্ণের পুতনাবধ লীলার কথা মুকুন্দ দত্তর গানের প্রতিক্রিয়ায় পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির শ্রীকৃষ্ণপ্রেমে উদ্দাম নৃত্যে উপস্থিত সকলের সঙ্গে শ্রীগদাধরের প্রতিতী জন্মালো যে পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি আসলে একজন পরম ভক্ত বৈষ্ণবজন। তাঁকে প্রথম দর্শনে বৈষ্ণব না ভাবাটায় তাঁর তো বৈষ্ণব অপরাধ হয়েছে। এ অপরাধ কী ভাবে মোচন করা যাবে, সে চিন্তায় শ্রীগদাধর যখন ভারাক্রান্ত তখন মুকুন্দ পরামর্শ দিলেন – সখা, তুমি তো এখনও অদীক্ষিত রয়ে গেছ ! শোন শ্রীগদাধর পণ্ডিত, ইচ্ছে করলে তাঁর কাছে শ্রীকৃষ্ণ মন্ত্রে দীক্ষা গ্রহণ করলে অপরাধ মোচন হতে পারে।”
কয়েক দিন পর শ্রীগদাধর পণ্ডিত এই পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির কাছেই দীক্ষা নিয়েছিলেন।
বিদ্যানিধির প্রেমভাব করি দর্শন।
গদাধর করিল তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ।।
(শ্রীচৈ.ভা. মধ্য. ৭ম অ.)
পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি
মুকুন্দর কাহিনী বলার বিরামের আগে এই পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি সম্পর্কে আরও দুএকটি কথা পাঠকদের সুবিধার জন্য বলা উচিৎ বলে মনে হয়। কবি কর্ণপুরের লেখা গৌর গণোদ্দেশ দীপিকা গ্রন্থ ৫৪ শ্লোকে :-
” বৃষভানুতনয়া খ্যাতঃ পুরা যো ব্রজমণ্ডলে।
অধুনা পুণ্ডরীকাক্ষং বিদ্যানিধি মহাশয়ঃ ।।”
পূর্বে বৃষভানু রাজা ছিল যেইজন।
এবে বিদ্যানিধি রূপে কৈল আগমন।।
শ্রীরাধার পিতা বলি যাঁর পূর্ব খ্যাতি।
এবে গদাধর গুরু জগতে প্রসিদ্ধি।।
আগের জন্মে শ্রীমতী রাধার পিতা বৃষভানু এখন এই জন্মে ‘ রাধাই গদাধর ‘ এর গুরু হয়ে এসেছেন । সেই থেকে বৃষভানুই পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি। যিনি গদাধরের গুরু রূপে জগতে প্রসিদ্ধ হয়েছেন।

একদিন শ্রীবাস অঙ্গনে কীর্তন ও নৃত্য থামিয়ে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু হঠাৎ ‘ পুণ্ডরীক বাপ রে ‘ বলে কাঁদতে লাগলেন। তিনি ‘ বাপরে বন্ধুরে ‘ বলে জোড়ে জোড়ে কাঁদতে শুরু করলেন। ভক্তরা বুঝতে পারলেন না কে এই পুণ্ডরীক। তাঁরা মনে করলেন বিষ্ণু সহস্র নামে বিষ্ণু বা শ্রীকৃষ্ণের একটা নাম পুণ্ডরীক আছে। শান্ত হলে ঘনিষ্ঠরা জানতে চাইলে তিনি পুণ্ডরীক বিদ্যানিধির কথা সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। আর সবাইকে আকর্ষণ করতে বললেন, তাহলে তিনি শিগগিরই আসবেন। তাঁর এই হরিনাম সংকীর্তন আন্দোলনে তাঁকেও সাথী হতে হবে। এই পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি সব সময় শ্রীকৃষ্ণপ্রেমের সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছেন।

এই পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি পাদস্পর্শের ভয়ে কখনো গঙ্গায় নেমে স্নান করতেন না। গঙ্গাজল মাথায় নিয়ে নিত্যকর্মের জন্য গঙ্গাজল তুলে আনতেন বা তুলে আনাতেন ।
দেবার্চন পূর্বে করি গঙ্গা জল পান।
পাছে নিত্যকর্ম করে যতেক বিধান।।
(প্রেমবিলাস ২২ বিলাস)
নিজে গঙ্গাজল পান না করে কোন পূজার্চনার কাজ করতেন না।

তিনি কীর্তনের আসরে এলেও নিজেকে আড়ালে রাখতেন। একবার তিনি শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে একলা দর্শন করতে এলেন।
আপনা গোপন করি রহে বিদ্যানিধি।
নিভৃতে হেরিতে চলে গৌর প্রেমনিধি।।
একলে আসিয়া করে প্রভু দরশন।
প্রভু হেরি প্রেমাবেশে পড়িলা তখন।।
প্রভুর শ্রীপদে প্রণাম করিতে নারিল।
আনন্দে মূর্ছিত হই ভূমিতে পড়িল।।
(শ্রীচৈ.ভা.মধ্য.৭ম অ.)
তাঁর চালচলনে সাদা চোখে তাঁকে অবৈষ্ণব বলে মনে হলেও আসলে তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ও পরম বৈষ্ণব। শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু তাঁকে সকল ভক্তদের সঙ্গে মিলন করিয়ে সঙ্কীর্তনের দলে নিয়ে নিলেন।
প্রভু কহে প্রেমভক্তি দানের কারণ।
বিদ্যানিধি জনে বিধি করিল সৃজন।।
আজি হৈতে হৈল বিদ্যানিধি প্রেমনিধি।
ইঁহার গুণের কভু নাহিক অবধি।।
শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভু আরও বলেন –
আজি শুভক্ষণে মোর নিদ্রাভঙ্গ হৈল।
প্রেমনিধি জনে নয়নে হেরিল।।
(ঐ পূর্বোক্ত)
নীলাচল লীলার সময়ে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুই যমেশ্বর নামক স্থানে তাঁর বাসা ঠিক করিয়ে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে আগের সখা স্বরূপ দামোদরকে নিয়ে প্রতিদিন দুজনে শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবের দর্শনের জন্য মন্দিরে যেতে থাকলেন।
এল ওঢ়ন ষষ্ঠীর দিন। শ্রীশ্রীজগন্নাথ সুভদ্রা ও বলরাম বিগ্রহের দিকে তাকিয়ে দেখা গেল, মাণ্ডুয়া বসনে শ্রীশ্রীজগন্নাথ দেবদের সজ্জিত করা হয়েছে। শ্রীচৈতন্যদেব সহ সকল দর্শনার্থীরা আনন্দে বিভোর হয়ে আছেন, এমন সময়ে পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি সঙ্গী স্বরূপ দামোদরকে বললেন – বিগ্রহের পোশাকে মাড় দেখা যাচ্ছে। এই মাড় জল দিয়ে ধুয়ে ফেলতে পারতেন সেবাইতরা, তাহলে শুদ্ধ হয়ে যেত পোশাক গুলি !” স্বরূপ দামোদর বললেন – হয়তো এটাই নিয়ম চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। “
সেদিন রাত্রির শেষে ঘুমের ঘোরে পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি অনুভব করলেন যে স্বয়ং শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীবলরাম তাঁকে মাণ্ডুয়া বস্ত্রের দোষ ধরার জন্য ভ্যৎর্সণা করলেন। এবং তাঁরা অন্তর্হিত হয়ে মন্দিরে চলে গেলে তিনি শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীবলরামের চাপড়ে তাঁর গালে হাত দিয়ে বুঝলেন তা ফুলে গেছে। পুণ্ডরীক এটাতে নিজেকে মহা ভাগ্যবান ভাবলেন, যাক অল্প শাস্তি দিয়ে জগতের পতি শ্রীশ্রীজগন্নাথ ও শ্রীশ্রীবলরামের মহানুভবতা ভেবে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ‘ জয় জগন্নাথ জয় জগন্নাথ ‘ বলতেই থাকলেন। যেহেতু স্বপ্নে দেখা তাই অন্য কারোর না দেখার কথা নয়। এমনকি একসঙ্গে থাকা বন্ধু স্বরূপ দামোদরের ও নয় ।

নীলাচলে শ্রীগদাধর পণ্ডিত একদিন নিজের দীক্ষা মন্ত্র স্মরণ করতে পারছিলেন না। টোটায় শ্রীশ্রীগোপীনাথের সেবায় সব সময় নিয়োজিত শ্রীগদাধর পণ্ডিত ছুটে যান গম্ভীরায় যেখানে শ্রীচৈতন্যদেব থাকতেন। শ্রীগদাধর পণ্ডিতের গম্ভীরায় অবাধ গতি। প্রাণপ্রিয় আবাল্য সখা শ্রীগদাধর পণ্ডিতকে দেখে শ্রীচৈতন্যদেব জিজ্ঞেস করলেন – গদাধর, কি ব্যাপার তুমি এই সময়ে !”
শ্রীগদাধর পণ্ডিত মুখ কাচুমাচু করে বললেন – প্রভু, সর্বনাশ হয়েছে।”

  • কী সর্বনাশ হয়েছে ?” বললেন হাসিমুখে শ্রীচৈতন্যদেব।
  • প্রভু আমি আমার দীক্ষামন্ত্র ঠিক ঠিক মনে করতে পারছি না। ” উত্তরে বললেন শ্রীগদাধর পণ্ডিত।
    ইতিমধ্যে শ্রীচৈতন্যদেবের নির্দেশে শ্রীগদাধর পণ্ডিত অনেককে দীক্ষা দিয়েছেন। সব ই শুদ্ধ বা সিদ্ধ মন্ত্র । তাঁদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন, যেমন বারানসীর আড়াইল গ্রামের শ্রীবল্লভাচার্য, উৎকলের রাজা প্রতাপ রুদ্রর মতন খ্যাতিমানরাও রয়েছেন। নিজের দীক্ষামন্ত্র কাউকে দেয়া এমনকি বলাও যায়না। কখন কাকে দীক্ষা দিতে গিয়ে নিজের মন্ত্র ভুল হয়ে গেছে ! হয়তোবা শব্দ না করে জপ করার সময় ওঁ এর ক্ষেত্রে নমঃ বলায় ভুল হয়ে যাচ্ছে । শ্রীগদাধর পণ্ডিত তাই শ্রীচৈতন্যদেবকে অনুরোধ করলেন – প্রভু, তুমি এর বিহিত করে মন্ত্র শুধরে দাও। তুমি ছাড়া আর কেইবা পারেন এই কাজ করতে ?”
    প্রাণের গদাধরকে তিনি বললেন – আমি কেন? দীক্ষা মন্ত্র শোধন করা তো গুরুর কাজ । নিজের গুরু থাকতে অন্যকেউ ঠিক করে দেবেন কেন ?”
    এবার নম্র স্বভাবের শ্রীগদাধর পণ্ডিত কেঁদেই দিলেন। কাঁদতে কাঁদতে শ্রীগদাধর পণ্ডিত বললেন – মন্ত্র শোধন করে দিতে পারেন বড় কেউ বা গুরুস্থানীয় কেউ একজন। তুমি তাই করে দিতে পার। “
    এবার শ্রীচৈতন্যদেব আরও জোরে হাসলেন আর বললেন – তোমার তো গুরু আছেন।”
    শ্রীগদাধর পণ্ডিত বললেন – জানি তিনি আছেন। কিন্তু এখন তিনি এখানে নেই ।”
    গদাধর বলে – তিহোঁ না আছেন এথা।
    তাঁর পরিবর্ত তুমি করহ সর্বথা।।
    (শ্রীচৈ.ভা.অন্ত্য. ৯ অ.)
    শ্রীচৈতন্যদেব কয়েক মূহুর্ত চুপ করে ভাবলেন, তিনি তো আবার অন্তর্যামী তাই একসময় বললেন – তিনি দিন দশেকের মধ্যে এখানে এসে পৌঁছাবেন।”
    সত্যি সত্যিই বিভিন্ন তীর্থ পর্যটন করে শ্রীগদাধর পণ্ডিতের গুরুদেব পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি দিন দশেকের মধ্যে নীলাচলে ফিরে এলেন নীলাচলচন্দ্র শ্রীশ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভু ও শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুকে দর্শন করার জন্য। এছাড়া শিষ্য শ্রীগদাধর পণ্ডিতের টান তো অস্বীকার করা যায় না। স্বয়ং ভগবানই যাঁর যাঁকে প্রয়োজন তাঁর কাছে তাঁকেই পাঠিয়ে দেন, এ বিশ্বাস শ্রীগদাধর পণ্ডিতের ছিলই।
    পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি নীলাচলে এসেই শ্রীচৈতন্যদেবকে দেখতে পেলেন আর দুজনেই দুজনকে জড়িয়ে ধরে শ্রীকৃষ্ণ প্রেমে কাঁদতে লাগলেন।
    শ্রীভক্ত বৎসল গৌরচন্দ্র নারায়ণ।
    প্রেমনিধি বক্ষে করি করেন ক্রন্দন।।
    (ঐ পূর্বোক্ত)
    তাঁদের কান্না যেন থামতেই চায় না। স্বরূপ দামোদরের ডাকে দুজনের সম্বিৎ ফিরে এল।
    এরপর শ্রীগদাধর পণ্ডিতের অনুরোধে পুণ্ডরীক বিদ্যানিধি তাঁর দীক্ষামন্ত্র শোধন করে দিলেন।
    গদাধর দেব ঈষ্টমন্ত্র পুনর্বার ।
    প্রেমনিধি স্থানে প্রেম কৈলেন স্বীকার।।….
    হেন নাহি বৈষ্ণব যে তানে না বাখানে।
    পুণ্ডরীক সর্ব ভক্ত কায়বাক্য মনে।।
    (ঐ পূর্বোক্ত)
    মুকুন্দ দত্ত আর গদাধর গেছেন শান্তিপুরের শ্রীঅদ্বৈত আচার্যের বাড়িতে। সেখানে এসেছেন ঈশ্বরপুরী।
    কিছুদিন আগে তিনি গিয়েছিলেন নবদ্বীপে আর সেখানে সাক্ষাৎ হয়েছে শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর সঙ্গে, দেখা হয়েছে শ্রীগদাধর পণ্ডিতের সঙ্গেও। শ্রীগদাধরকে তিনি কয়েক দিন নিজের লেখা ‘ ‘ ‘কৃষ্ণলীলামৃত ‘ গ্রন্থ পড়ে শোনান।
    ” …… গদাধর পণ্ডিতেরে আপনার কৃত।
    পুঁথি পড়ায়েন নাম কৃষ্ণলীলামৃত।।..….”
    (শ্রীচৈ.ভা.আদি খ. অধ্যায় ৯)

ঈশ্বর পুরী একজন পরিব্রাজক হিসেবে ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান। তাঁকে এক দেখায় কেউই যাতে চিনতে না পারে সেজন্য তিনি ছদ্মবেশে এসেছিলেন। তিলক আঁকা নেই, গলার তুলসী মালা উত্তরীয় দিয়ে ঢাকা। তাই শ্রীঅদ্বৈত প্রভুরও তাঁকে চেনার কথা নয়। কৃষ্ণ রসে সদা বিভোর শ্রীঅদ্বৈত আচার্য তাঁকে চিনতে পারলেনি না। তবু , তাঁর অনুভবে চেনা চেনা ভাবের স্পন্দন খেলে গেল। সাধারণ সম্ভাষিণে ভাব বিনিময় হলেও কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরলেন না। মুকুন্দ বুঝলেন আর সঙ্গে সঙ্গে সে তাঁর উদাত্ত কণ্ঠে গান গাইতে লাগলেন। শ্রীকৃষ্ণ ভক্তিরসের গান। তাই শ্রীপাদ ঈশ্বরপুরী আর নিজেকে লুকিয়ে রাখার কথা ভাবলেন –
“…….যেই মাত্র শুনিলেন মুকুন্দের গীত।
পড়িলা ঈশ্বরপুরী ঢলি পৃথিবীত ।।…..”
(শ্রীচৈ. ভা, আদি খ. অধ্যায় ৯)
মুকুন্দর গান ও গানের কথা সুরের মূর্ছনায় দুইজন ব্রাহ্মণ ভাবে বিভোর হয়ে মাটিতে ঢলে পড়লেন। জানা গেল দুইজনে এক ই গুরু শ্রীপাদ মানবেন্দ্রপুরীর শিষ্য। দুজনেই দুজনের গলা জড়িয়ে ধরলেন।

মুকুন্দের গানের এটাই বৈশিষ্ট্য।
শ্রীগৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর অসংখ্য বন্ধুবান্ধব বা সখা ছিলেন। ছোটবেলায় যাঁর সঙ্গে বেশি দেখা হতো তিনি ছিলেন শ্রীগদাধর, তাঁর চেয়ে মাত্র দেড় মাসের ছোট। প্রায় প্রতিদিনই শচীমায়ের কোলে চেপে নিমাই আর রত্নামায়ের কোলে চেপে এবাড়ি ও বাড়ি যাতায়াত হতো। সেই থেকে শ্রীগদাধর পণ্ডিতের সঙ্গে নিমাইর বন্ধুত্ব। ছায়া সঙ্গী গদাধর ছাড়া অজস্র বন্ধুদের একজন মুকুন্দ দত্ত।

মুকুন্দ দত্ত

‘ কৃষ্ণের গায়েন ‘ মুকুন্দ দত্ত । “,… একদিন তিনি পথে মুকুন্দকে পেয়ে প্রশ্নবান ছাড়তে উদ্যত হন। মুকুন্দ জানেন, নিমাই পণ্ডিত ব্যাকরণের অধ্যাপক, তাঁকে ব্যাকরণ দিয়ে ঠেকানো যাবেনা। কিন্তু অলঙ্কার শাস্ত্র কীর্তনীয়া মুকুন্দের করায়ত্ত। তা দিয়ে প্রতিরোধ করা যায় –
অলঙ্কার বিচার করিব তোমা সনে।
প্রভু কহে বুঝ তোমার যেবা লয় মনে।।
(শ্রীচৈ. ভা. আদি খ, অধ্যায় ১০)
মুকুন্দ অলঙ্কার শাস্ত্রের নানান দুরূহ প্রশ্ন করেন আর নিমাই পণ্ডিত ব্যাকরণের এই বাঙলার ভবিষ্যৎ মহাসারথি অবলীলায় সব প্রশ্নের ধাঁধার উত্তর দিয়ে দেন – অলঙ্কারের দোষ ধরেন। মুকুন্দ পরাজিত হন। প্রণাম করে ঘরে যেতে যেতে ভাবেন, মানুষের এত পাণ্ডিত্য কখনও হয়! ‘হেন শাস্ত্র নাহিক অভ্যাস নাহি যথা’।”
(বর্তমান লেখক কর্তৃক শ্রীচৈতন্যদেব ও শ্রীগদাধর পৃ. ৩০,
প্রথম প্রকাশ ঝুলনযাত্রা ১৪১৪ বঙ্গাব্দ, ফার্মা কে এল এম, মহেশ ও সংস্কৃত পুস্তক ভাণ্ডার)
মুকুন্দ দত্ত বিষয়ে আরো অনেক লেখা পরে জানানোর চেষ্টা করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *