শ্মশান-স্নান
অনিরুদ্ধ সুব্রত
চারদিকে আনত মিছিল-মানুষ, ঘন মুখ
উচ্চারণের মতো কোনো শব্দ নেই বলে
আশ্চর্য স্তব্ধ ও স্থির চোখের তারা তাদের
ঘিরে আছে বেদির উপর, দৃষ্টি-গোলোক ।
মৃত্যুর প্রতি জীবনের অনন্ত এ অভিমান
প্রত্যেকে দেখছে, একটি শীতল শরীরের স্নান
যার পায়ের দুটি তল এতো যে করেছে লাল
যেন বসন্তের এই শেষ অলংকৃত রক্তশূন্য ফুল…
নদী থেকে জল তুলে এনে, বড় যত্ন করে
ধুয়ে দেওয়া হচ্ছে যাপনের সমস্ত আশ্লেষ
পৃথিবীর অন্তিম এই ধৌতের ভিতর, কেন যে
মিশে যাচ্ছে ফোঁটা ফোঁটা নোনা অশ্রুজল।
কখনও দেখিনি কেন এই অপার দেহ-বাদ..
চারদিকে নিঃস্ব বোধের মৌন, প্রিয় নির্বাক
শরীরের কোন মহা অভিষেক, আজ আদরে
মধু, ধূপে, এতো স্নেহ মেখে, শ্রেষ্ঠ-আতরে।
যুদ্ধের যেন শেষ, রক্ত মাখা বর্ম-মুক্ত ইন্দ্রিয়
প্রতি প্রিয়জনের চরম সম্মানে— স্নিগ্ধ স্নান
এ উপাখ্যান না দেখে, কেন চোখ আছে বুজে
এই জয়টীকা কখনো যে দেখেনি সে ললাটে।
কতবার এ লুকিয়েছ, গোপন থেকেছে প্রীতি
অস্ফূট প্রতিটি নিজস্ব দাহ ও প্রদাহ, এ দেহে
কেঁদেছ আত্মধিক্কারের চার দেয়ালের ফাঁকে
উপেক্ষিত গৃহে, সমাবেশে আর প্রিয়তম-চোখে।
আগুন ডাকছে, অভিলাষ লাশ পোড়াতে
স্বাদ, মোহ, চিত্ত-চৈতন্য হয়ে গিয়েছিলে কাছে
ক্রোধে ও করুণায়, ছুঁতে চেয়েছিলে প্রিয় করে
পৃথিবী আজ তার মতো করে, সমস্ত ধুচ্ছে।
এই দেহ নিয়ে হেঁটে চলে যেতে পারতে নাকি
আজকের এই শরীরের মিথ্যে অভিষেক, বৃথা
ব্যথিত করছে নাকি— তোমাকে, অদৃশ্য থেকে
লাগছে নাকি আরও অসহ্য শীত, এ স্নান-জলে।
ভালো লাগলো I