
একটা দরকারে আজ দুপুরে বেরোতেই হল, আপাদমস্তক পোশাক আর মাথা গায়ে সুতির চাদর জড়িয়ে। মেট্রোরেল স্টেশনে ঢোকার মুখে ভিড় দেখে এগিয়ে দেখলাম একজন প্রবীণ ভদ্রলোক মাথাঘুরে পড়ে গিয়েছেন। কয়েকজন ছায়ায় টেনে এনে দেওয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে চোখে মুখে জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করছে। পশ্চিমবঙ্গে এখন যে দাবদাহ চলছে তাতে এমন ঘটনা অনেকের সঙ্গেই ঘটা অসম্ভব নয়। সাবধানতার কারণে স্কুল কলেজে সরকার থেকে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। প্রত্যেকে সচেতন ভাবে দাবদাহ থেকে রক্ষা পাবার চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছি। প্রচুর জল, ফলের রস, সরবত খেয়ে শরীরে জলের ঘাটতি রোধ করা যায়। খুব দরকার ছাড়া রোদে বাইরে না বেরোনোই উচিত। বেরোতেই হলে সুতির পোশাক পরে ছাতা নিয়ে।এসব ঢাল গরমের আক্রমণ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে পারে। আগে দেখেছি বৈশাখে দিনের অস্বস্তিকর গরমের পর বিকেলে কালবৈশাখী এসে ঠান্ডা করে দিত প্রকৃতি। কিন্তু, এইকদিনের টানা তাপপ্রবাহে কোন কালবৈশাখীর দেখা নেই। বৈশাখের শুরুতেই পশ্চিমবঙ্গের তাপমাত্রা ৪৩° ফারেনহাইট ছুঁয়েছে।
আজ ১৯ শে এপ্রিল,২০২৩, বিবৃতি জারি করে হাওয়া অফিস জানিয়েছে, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার তীব্র তাপপ্রবাহের জেরে আরও পুড়বে দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা। আরও বৃদ্ধি পাবে দাবদাহ। তাপপ্রবাহ নিয়ে লাল সতর্কতাও জারি করেছে হাওয়া অফিস। আলিপুর হাওয়া অফিসের তরফে, দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম বর্ধমান এবং বীরভূম— এই পাঁচ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তাপপ্রবাহ নিয়ে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের বাকি জেলাগুলিতে।
বুধবার উত্তরবঙ্গের দুই দিনাজপুর এবং মালদহেও তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে লাল সতর্কতা জারি করেছেন আবহবিদেরা। এই জেলাগুলির জন্য বৃহস্পতিবার তাপপ্রবাহের কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, তাপপ্রবাহের কারণে নাজেহাল অবস্থা হতে পারে জলপাইগুড়ি, কোচবিহার এবং আলিপুরদুয়ারের বাসিন্দাদেরও।
কিন্তু, তারপরও প্রশ্ন তো থেকেই যায় কেন এই অসহ্য তাপমাত্রা বৃদ্ধি?
পূথিবীর উত্তরের অংশ ক্রমশ সূর্যের দিকে সরছে। সেই পরিস্থিতিতে মহারাষ্ট্র থেকে ওড়িশার বিস্তীর্ণ এলাকায় তাপ বাড়ে। মার্চের শুরুতে আবহাওয়া দফতরের তরফে বলা হয়েছে মার্চ থেকে মে-র মধ্যে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি থাকবে। পশ্চিম এবং মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ এলাকার এর মধ্যে পড়ছে। সেই কারণইে তাপপ্রবাহের পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে পশ্চিমে দক্ষিণ গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্র এবং সেখান থেকে ওড়িশা পর্যন্ত। এই পরিস্থিতির কারণ সম্পর্কে আবহাওয়া দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল মৃত্যুঞ্জয় মহাপাত্র সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, এইসব এলাকায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি কারণ এই জায়গার বায়ু বওয়ার পরিস্থিতি।
ভারতের বেশ কয়েকটি এলাকায় তাপমাত্রা সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়েছে। দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বাসিন্দারা তাপপ্রবাহে ভুগছে। সূর্য ডুবে যাওয়ার পরে সাধারণত রাতে তাপমাত্রা কমে, এবার আবার রাতেও তাপমাত্রা বেশি থাকছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্রমবর্ধমান তাপপ্রবাহের প্রভাবগুলির মধ্যে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি একটি।
গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর ফলে দিনকে দিন বেড়ে চলেছে সমুদ্রের উপরিভাগের জলের তাপমাত্রা। যে পরিমাণ কার্বন তারা টেনে নিত, তা হ্রাস পাওয়াতেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে বৈজ্ঞানিকদের অভিমত। সোমবার প্রকাশ পাওয়া গবেষণায় পরিবেশ বিজ্ঞানীরা সমুদ্রের তাপমাত্রা বৃদ্ধির এই পরিস্থিতিকে বিপজ্জনক বলে আখ্যা দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘নাসা’য় গডার্ড ইনস্টিটিউট নামে একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা তাপ বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধান করেন। তাদের গবেষণায় জানা গেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রতিবছর তার পূর্ববর্তী বছরের রেকর্ড ভেঙে বেড়েই চলেছে।
১৮৮০ সালে তাপমাত্রা সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকে দেখা গেছে যে, প্রতি বছরই কিছু না কিছু মাত্রায় তাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে, ২০০০ সালের পর থেকে প্রতিবছরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার চরমভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি ‘গভীর আশঙ্কাজনক’ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানীরা আরও দেখেছেন যে, ১৯৯২ সাল থেকে ২০১৪ সাল সময়কালে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৩ ইঞ্চি পর্যন্ত বেড়েছে।
একদিকে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং আরেক দিকে বরফ গলে যাওয়ার দ্বৈত চাপ পুরো পৃথিবীর ওপর পড়ছে এই তাপ বৃদ্ধির কারণে, যা মোকাবেলা করা মানুষ ও প্রকৃতির জন্য সত্যিই কঠিন। ’
মানুষকে সচেতন এবং দায়িত্বশীল হতে হবে নিজের চারদিকের পরিবেশ রক্ষায়। প্রাকৃতিক শক্তির অপচয় বন্ধ করা, সবুজায়ন করার কথা বারবার শুনলেও মানুষ উদাসীন। যার ফলে ভুগতে হচ্ছে মানুষ এবং সমস্ত জীবকুলকে।
এই অসম্ভব তাপপ্রবাহের মধ্যেই প্রকাশিত হল অবেক্ষণ পত্রিকার বৈশাখ, ১৪৩০ সংখ্যা। প্রত্যেক সংখ্যার মতো এই সংখ্যাটিও সাহিত্য অনুরাগী পাঠকের মনের মতো হবে বলেই আশাকরি। পাঠকের মতামতের অপেক্ষায় থাকবে অবেক্ষণ পরিবার। অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী রিষিতা সেন অবেক্ষণ পত্রিকার দপ্তরে একটি বৈশাখের গ্রাম বাংলার ছবি এঁকে পাঠিয়েছে। এখানে সেই ছবিটাই দিলাম। কেমন হয়েছে ছবিটি অবশ্যই জানাবেন।
সকলকে শুভ নববর্ষের আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা জানাই। ভালোবেসে লিখুন, ভালোবেসে পড়ুন। নমস্কার।
খুব ভালো সম্পাদকীয়…..নববর্ষের আনন্দের সাথে তাপপ্রবাহের জের মানুষকে অস্বস্তি দিলেও এই পরিস্থিতিও ঠিক কাটিয়ে উঠবে সকলে…..শুভ কামনা রইলো….
অনেক ধন্যবাদ
ছোট্ট ঋষিতার ছবি কিন্তু বড়দের মতো । পরিণত, পরিপক্ক আঁকা।
সম্পাদকীয় সময়োপযোগী, চেতনা জাগানো এবং অবশ্যই আন্তরিক। মানবিকও বটে। সম্পাদিকাকে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়েছে। অবশ্য একা কারুর পক্ষে কিছু করা সম্ভব নয়।
অনেক ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ
সহজ সরল কিন্তু বেশ সারগর্ভ সম্পাদকীয়। শুধু গাছ লাগালেই হবে না জলাভূমি নষ্ট করে আবাসন বা ঐজাতীয় প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। জন সংখ্যা কমানোর ব্যাপারে এইদিন থেকেই পদক্ষেপ করতে হবে।
অনেক ধন্যবাদ
ছবিটা খুব ভালো। সম্পাদকীয় সুন্দর।