দুটি কবিতাঃ পুলিন রায়

দুটি কবিতা – পুলিন রায়



সময়ের করতাল

দূরে কোথাও গান বাজে
দূরে কোথাও কান্নারও ধ্বনি
অবেলায় কাক ডাকলো বুঝি,
সন্ধ্যাপ্রদীপ জ্বালালে আলোকিত হয় মন…
আরতির সুরে বেদনা ঝাড়লে
তৃপ্তি পায় ওপাড়ার যুবতী;
করতলে আগুন নিয়ে
ঘুরছি পৃথিবীর কক্ষপথে
চোখের কোণায় নোনতা জলে
বুক ভাসালেও জুটে না আহ্লাদ

এ পারের বন্ধু-সুজন দেখা দিলেই
সুখ সুখ অনুভূতির দেখা মিলে,
জোয়ারে ভেসে যায় নোঙর করা জাহাজ
দূরে কোথাও বাজে দুঃখগান

বেহিসাবি জীবনের তন্ত্রমন্ত্র ফুরালে
আগ্রাসী হয়ে ওঠে ক্রান্তিকাল
এবার ফিরে চলো ঘরে
পথ বাড়িয়েছে হাত
এসো তবে বুকের অতলান্তে
বাজুক সময়ের করতাল…

২.
ধুপইন বিল

ধুপইন বিলের গভীরে প্রেম পুতে রাখা আছে। ননীর পুতুলেরা খেলা জুড়ে দিলে আকাশে রঙ ছড়ায় পূবালী হাওয়া। বনসাই আশা নিয়ে বসে থেকো না। ও বালিকাদল উঠে দাঁড়াও। দৌঁড়াও। নদী যাবে সমুদ্রে। তুমি যাবে কোন্ সন্ন্যাসে? উতলা মন মানে না কিছুই। ধুপইন বিল, পাখিঝাঁক, মাছেদের খেলা, ঘাসফড়িংএর ওড়াওড়ি, বাঁশের পাতাদের অবিরল কান্না–আমি ভূলতে পারি না। আর ভুলতে পারি না মায়ের কুয়াশাভেজা হাতে মুছিয়ে দেয়া আমার চোখে-মুখের কান্না। শস্যেরা তাকায় চোখ তুলে। নদীরা আরো ক্ষীণকায় হলেও দুর্বঘাসের হাসি ক্রমশ; বেড়েই চলে। ডাউকি-শিলংএর ঠাণ্ডা বাতাসের হলকায় গা জুড়ালেও আমার গাছেরা দেয় না ইশারা। পাতাকুড়ানির দল হাত পেতে বসে থাকেই…
আর দেখা কি হবে ধুপইন বিলের মাছেদের রঙিন চোখ? জীবনের পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় লেখা থাকুক মাছ-শস্য-ঘন সবু্জ আর পাতাঝরার গুপ্ত ইতিহাস…বেঁচে থাকো নদীমালা, বেঁচে থাকো ধুপইনবিল…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *