গুচ্ছ কবিতাঃ ইন্দ্রাণী দত্ত পান্না

ইন্দ্রাণী দত্ত পান্না


পুনর্জাত

সুর টেনে নিচ্ছে কথার কাছে,
কেন?
সে প্রশ্ন হাতে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ফাল্গুনের হুতাসী বাতাস
কী নেই তোমার? জানি অথবা অজানাই থেকে যায় আর আড়ালে বিষাদ দিয়ে ঘর বাড়ি রঙ করে দেয় কার দুটো অক্লান্ত হাত
পলাশ শিমুল কৃষ্ণচূড়ার লাল এসে ঢেকে দেয় ক্ষরণের রক্ত স্মৃতি
সুরের ওপর কথা বসিয়ে বসিয়ে নক্সা তুলি
সারাদিন এক অপার্থিব বৃন্দবাদনের ইশারায়
শোক দু:খের ডালে কচি পল্লব ফুটে ওঠে।

উপহার

আট বছর আগে হাসপাতালের বাগানে
দেখেছিলাম এক নাম না জানা ফুল,
হাল্কা বেগুনি আভায় ছেয়ে গেছে গাছ।
চলে যাবার জন্য প্রস্তুত এক মানুষের হাত আমার হাতের মধ্যে
তার কোন বসন্ত নেই আর কোন গ্রীষ্মও দেখবে না সে
তার সেই শূন্য দৃষ্টিতে শুধু মৃত্যুর ছবিই আঁকা হচ্ছিল।
মৃদু আওয়াজ করে ট্রলি চলছিল নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
বুঝেছিলাম তার এই যাওয়া না ফেরার জন্য।
মনে মনে তার দুহাতের পাতায় তুলে দিয়েছিলাম আমার সব বসন্ত সব দোল আর এক রাশ নাম না জানা বেগুনি ফুল।

ভাই- বোন

সকাল হলেই ওরা ছুটে যায় হলুদ পলাশ তলায়
প্লাস্টিকের ব্যাগ ভরে কুড়িয়ে নেয় বসন্তের শুভেচ্ছা।
মা ঘরে সাজিয়ে রাখবে আর বাকিটা ইস্কুলে নিয়ে যাবে মায়ের বন্ধুদের জন্য।
ওরা খোঁপায় পরবে, টেবিলের ওপর ছোট্ট প্লেটে সাজানো থাকবে।
মাসিমণিরা হাসে সাজে আর ওদের দুজনের গল্প শোনে। ওরা সেসব শুনবে বলে অপেক্ষা করে।
ওরা কি বসন্তের আপন সন্তান? ওরা কি আমার নিরাময়ের হাত?

এপার থেকে

বসন্তকে দেখি পাতলা কালো পর্দার এপার থেকে।
এখানে ফাল্গুনের বিখ্যাত সব অনুষঙ্গ নেই
শুধু আমের মঞ্জরী আর একটা মাত্র খ্যাপাটে কোকিল, যে রাতে
দু:খের গান গেয়ে গেয়ে একা একা ঘুমিয়ে পড়ে
গোপন ভালবাসার মতো গুরুভার চেপে থাকে বুকে
কাঁঠালের তৈলাক্ত পাতার ওপর রোদের খেলা দেখার সুযোগ হল না এবার।
আমার বসন্ত যা দেয় তার থেকে অনেক বেশি নিয়ে যায়

বসন্তের কথা

শহরের মোহ নিয়ে আলো হাওয়া নিয়ে প্রয়োজন নিয়ে কত কথা।
রোজ যারা শহরের পথে পথিকগিরি করে ঘুমোতে যায় গ্রাম মফস্বলে
তারা জানে কষ্ট করে কী পেয়েছে নিঝুম রাতের শীতল ছোঁয়া ছাড়া
(তার মানে বাকি সব সুখ সাগরে প্রমোদতরী ভাসিয়েছে তাও নয়)

এখন আর অন্য কিছু নয় শহরই জীবন রেখা, শহরই মাই-বাপ।

তবে কৃষ্ণচূড়া আর হলুদ পলাশ অমলতাস নিজেরাই
ফোটে আর বিচিত্র সাজ সজ্জার শহরকে একটু মধু দেয়

ছুটন্ত গাড়ি থেকে কোন কোন “সফল”এর বুকের মধ্যে লাব ডুব করে ওঠে ছেড়ে আসা গ্রাম, ভলি খেলার মাঠ।
আর শহরমুখো পথিক দেখে রেল স্টেশনের কৃষ্ণচূড়া রক্তিম নিশান উড়িয়ে জানিয়ে দিচ্ছে বসন্তের কথা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *