কবিতাঃ হাফ ভিখিরি – জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

হাফ ভিখিরি
জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়

বটতলার চায়ের আড্ডায় বাসুদা টি-শার্ট খুলে পেসমেকার বসানোর
কাটা দাগ দেখিয়ে গর্বিত গলায় বলে,দ্যাখ,এইখান টা কেটে যন্তরটা বসিয়েছে।
এক লাখ আশি হাজার গ্যাছে।সে যে জমিদারের নাতি তা হাসিতে প্রকাশ।

বিমলদা চশমা খুলে সগর্বে বললো, দ্যাখ আমার ডান চোখে অ্যালকন বসানো।
তার হাসিতে সবজান্তা জাগে,আমার ভজহরি মার্কা মুখ দেখে খুশি,
অ্যালকন জানিস না তো? ফেকো জানিস? চল্লিশ বছরেই আমার ডান চোখে
ফেকো হয়েছে,পাক্কা পঁয়ত্রিশ হাজার এখন বাঁ চোখেও ইলিশের আঁশ…..
সে যে সিরাজের নাতি বুঝতে অসুবিধা হয় না।

জগাদা বলে বসে,আর আমার দুবছরে একটা করোনারি অ্যাটাক,
প্রস্টেট আর গলব্লাডার দুটোই আউট,ছেলের মিলিটারি হসপিটালে
রাজার মতো ব্যবস্থা সব ফ্রিতে নইলে কমসে কম পাঁচলাখ যেত।
বুঝি সে খোদ রাজার মক্কেল।

আমি এক হাফ ভিখিরি পঞ্চাশ পেরিয়েও চায়ে ফুল চিনি দেখে চা-দোকানিরা
অবজ্ঞার বাঁকা চাউনিতে তাকায়,নেমন্তন্ন বাড়িতে টেবিল বয়েরা হাঁ করে
থমকে যায় পুরো দুটো মিষ্টি,একটা সন্দেশ আর আইসক্রিম
কোনো হাত নাড়া বা আর্তচিৎকার নেই। আমার কোনোও ক্লাসই নেই।
সুগার প্রেসার অদ্ভুতভাবে নর্মাল। স্বাস্থ্যসাথি বা স্বাস্থ্যবিমা কোনো কার্ডের বালাই নেই
হার্ট এখনো ঠিকঠাক চলে, সাপোর্ট লাগে না,ইলিশ তো দূর
চোখে সিলভার কার্পের আঁশও নেই।
পেসমেকার, অ্যালকন,ফেকো শব্দগুলো কখনো শুনেছি কি ?
সেরিব্রাল বা কার্ডিয়াক কোনো অ্যাটাক নেই।কেবল বিবেক জাতীয় কিছু একটা
আমাকে অ্যাটাক করে, বলে,জীবনে কিছুই তো পারলে না হে !
তুমি চাষিবাড়ির ছেলে,চাষের চালের ভাত মুড়ি খেয়েছিলে,শাকসবজি দুধ….
হাফ ভিখিরি হলেও পুরো ভিখিরি হলেও পুরো ভিখিরি হয়ে যেন মোরো না,
মধ্যবিত্ত চাষির নাতি হয়েই বৈতরণির ঘাটে নেমো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *