কবিতাঃ কেমন আছো মেপল – শিখা কর্মকার

কেমন আছো মেপল?
শিখা কর্মকার

কেমন আছো মেপল? এই ঝড়ে ও বাদলে ? বরফের গুঁড়ো চমকে দিলে ত্বক, মন খারাপ করে এখনো ? এই ঘন শীত টুকটুকে লাল করেছে তোমাকে, নাকি তার অবহেলামাখা অনন্ত বিরহ ? তুমি উত্তর না দিলেও চিনি আমি শোক-নিবিড় অসহায়তা। সেসব এখন থাকুক তোমার পাতাতেই । তুমি তার কথা জানতে চাও? সে যোগাযোগ করে কিনা, কষ্ট পায় কিনা? আরে ভাই, তার কথা আর শুধিওনা। তুমি বরং বলো একেবারে চড়ুইয়ের মত দেখতে স্প্যারোগুলি আসে যায় কিনা ? খোঁজ খবর নেয় কি ক্যারোলিনা রেন ও কাঠঠোকরারা ? তীব্র হিম পড়ছে বলে সব গাছ লুকিয়ে রেখেছে তাদের মুকুল, বকুল। রাতের শীতের তীব্রতায় পুড়ছে কাঠের শরীর। বাকলে আশ্রিত প্রজাপতি । ধোঁয়া বাড়ছে চিমনীর । তিলে তিলে শূন্য হয়ে যাচ্ছে বন-বাগান।
হরিণীটি একা একা কেন ঘুরে বেড়ায় এমন হেমন্তের বনে, তুমি জানো ? জানো কি তার উদাসীনতার ও সুদীর্ঘ মনখারাপের কারণ ? তার ডাক শুনে বুঝছি যে বাড়ছে উদ্বেগ, টান । দুটি চোখে তার আঁকা আছে অনন্ত শোক। দলের সবাই চলে গেল উষ্ণতার দেশে, সে কেন রয়ে গেল মেপল? কাকে সে খুঁজে চলেছে দিনরাত এমন রঙে ভরা নির্জনে?
কবিতা? কবিতার কথা বলছ মেপল? তাকে আর ডাকিনা আজকাল। তবু সে এখনো আসে যায়, ঘুমের ঘোরে । আমার গা পুড়ে গেলে ভীষণ জ্বরে, কেমন সঙ্কোচে, অন্ধকারে অতীত গায়ে মেখে দাঁড়িয়ে থাকে দুরে, সারা গায়ে ছেঁড়াখোঁড়া গানের ক্ষত নিয়ে । সব কথা কি আর বলা যায় তাকে? বড় অভিমানী সে। হাজার কষ্ট বুকে নিয়ে, সরে যেতে যেতে, বিষণ্ণতায় ভিজে থাকতে থাকতে, একদিন হয়ত সে মিলিয়ে যাবে আলো না এসে পৌঁছনো তারাটির মত, কোন এক অদৃশ্য হতে থাকা কুয়াসার সাথে। আমার গায়ে আর কাঁটা দেয়না তার আসার আনন্দে, সারা শহর উতল হয়না তার বিহনে, …এই হয়তো মরে যাওয়া …এভাবেই কিছু মানুষ একবুক কবিতা ভালোবেসে হৃদয়ের গহীন দ্বীপের চোরা স্রোতে হারিয়ে যায় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *