অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের কবিতা
১
সবকিছু কি তবে অনুমান করা সম্ভব? সবকিছু কি অনুভূত?
সবকিছু ইন্দ্রিয় স্পর্শ করে না। আঙুলে ছুঁতে পারে না
কিন্তু সব সময় ইন্দ্রিয়কে সজাগ রাখি
আমার সামনে থেকে পালিয়ে যায়
বীভৎস
অন্ধকার
বিস্তৃত নিকশ নিশাময় তরল কালি
সকল ইদ্রিয় গ্রাহ্য অথচ প্রবাহমান জল, বায়ু
হাওয়ায় ভেসে উড়ে যায়; হাওয়ায় জ্বলে উঠতে পারে না
দেখি একটা দৃষ্টি, যা ইন্দ্রিয় গ্রাহ্য দৃষ্টিতে স্থির নয়, এমন দৃষ্টি।
২
আমি তোমাকে অনেকদিন ধরে ভক্ষণ করে চলেছি
আমাকে তোমার স্বাদ নিতে দাও
তার এক একটা পৃষ্ঠা হুঙ্কার দেয় কিংবা গর্জন করে
অন্য কিছুর নয়
তার পোষাকের মধ্যে খুঁজে দেখো
রোজ রোজ সে আমার সঙ্গে জেগে থাকে
আমার আত্মা, সঙ্গে উপযুক্ত চালু শব্দ
আর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অনুভূতি
সে পিয়ানোর ঢাকনা তুলেছে বা সরিয়ে নিয়েছে
বসন্ত যেমন ইতিমধ্যেই অন্য কিছুর মতো
যদি কখনো কথাগুলোর মধ্যে শব্দগুলো ফিরে আসে
বলতে গেলে তারা যদি আপস করে নেয়
নাকি আবার শপথ করে মারা যাওয়ার ছুতোয়,
তার মধ্যে কোন খবর নেই, আমি উত্তর দিই,
প্রতিটা শব্দ কিন্তু অর্থ বিমুক্ত নয় এক একটি সঙ্গীত
অথবা এই অর্থ বিযুক্ত অর্থই, এখন প্রকৃতি
৩
আবার ক্ষেতে ফসলের গন্ধ অনুভূত হবে, আবার ফিরে আসার গান গাইবে সকলে
যেদিন তোমার কথা মানে আমাদের জন্য তোমার ভালবাসার কথা, গান হবে
সকলের মুখে মুখে, হাটে বাটে মাঠে ময়দানে গুনগুন করবে দিনে রাতে
যদিও সকলের চোখে প্রগাঢ় ঘুম নেমে আসে অন্ধকার রাত্রি জুড়ে
যে অন্ধকারের এক ক্ষীণ অতি ক্ষীণ আলোর সৌন্দর্য আছে। অন্তরে;
যেখানে হৃদয়ের বাগান বাড়ি আলোকে ঝলমল করে ওঠে
অথচ আপনারা সেই অন্ধকারেরও আলো নিভিয়ে দিয়েছেন
অথচ আপনারা সেই ছোট্ট বসত বাড়িটাকে ভেঙে চুরে গুড়িয়ে দিয়েছেন
এই সব কিছুকে হৃদয় দিয়ে অনুভব করার মত এক আলোকোজ্জ্বল প্রাণ
ঝাঁঝরা করে নিভিয়ে দিয়েছেন তাঁর আলোকময় দ্যুতি। গলার স্বর রক্তে ভিজে স্নান
তারপর প্রতিবার, তাঁর উচ্চারিত প্রথম লাইনটা প্রতিটি সীমানার স্তম্ভে
বাসায় ফিরতে থাকা পাখিদের ডাকে নেমে আসা বেলার হৃদয়-অন্তরে
আবার ক্ষেতে ফসলের গন্ধ অনুভূত হবে, আবার ফিরে আসার গান গাইবে সকলে
পাখিরা তলোয়ারগুলিতে আবার তাদের গানের কথা ও সুর খোদাই করে দেবে
তোমার প্রতি ভালবাসাই পারে প্রতিটি প্রাণের হৃদয়ে ভালবাসার বিপ্লব ঘটিয়ে দিতে
একমাত্র তোমার প্রতি ভালবাসার জন্য আজ আমাদের কণ্ঠস্বর, কান্না চাপা ঝরনার মত।