সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

সাহিত্য পত্রিকার অফলাইন-অনলাইন

লিপি আবিষ্কার হবার কারণই ছিল লিখে রাখার প্রয়োজন অনুভব করা। দেশ শাসনের জন্য রাজার সৃষ্ট অনুশাসন হোক কিংবা ধর্মীয় মতবাদের প্রচার, সবই লিখিত রূপে রাখা প্রয়োজন ছিল বরাবর। তাছাড়া আত্মজীবনী মূলক লেখারও প্রয়োজন ছিল। প্রয়োজন ছাড়াও পৃথিবীর অনেক সৃষ্টিশীল মানুষ সাহিত্য রচনা করে আসছেন বহু যুগ ধরে। পাশাপাশি লিখিত যা কিছু তার স্থায়িত্ব এবং প্রচার নিয়ে মানুষ ভেবে এসেছে। প্রাচীন মানুষ পাহাড়ের গায়ে, গুহার দেওয়ালে খোদাই করে লিখেছেন সামাজিক অনুশাসনের কথা, ধর্মীয় মতবাদ এবং তার ব্যাখ্যা। পাথরের ফলকে খোদাই করে লেখা হতো। মাটির ফলকে শক্ত কিছুর আঁচড়ে লিখে রোদে পুড়িয়ে রাখা হত। আমরা শুনেছি তালপাতার পুঁথির কথা। কলম কালিতে ডুবিয়ে লেখা হতো তালপাতার ওপর। তারপর আসে কাগজ, কলম, ছাপাখানা। আধুনিক যুগে বই বলতে ছাপাখানায় কাগজের ওপর কালিতে ছাপানো বই আর অন্তর্জালে প্রকাশিত বই প্রকাশিত হয়। অতি আধুনিক কালে কিনডল বইও জনপ্রিয় হচ্ছে। যেকোন বই কেনা এবং সঞ্চিত রাখা যায় কিনডলে। কম্পিউটার, ল্যাপটপ অথবা মোবাইলের স্ক্রিনের থেকে অনেক বেশি বই পড়ার আনন্দ পাওয়া যায় এখানে। তবে একথা ঠিক লিখিত মাধ্যমের থেকেও জরুরি হল লেখার বিষয়বস্তু। মানুষ যা জানতে চাইছে তা কিছুদিন আগে লাইব্রেরিতে অনেক বই ঘেঁটে জানতে পারত, আজকাল ইচ্ছে হলে অন্তর্জালে হাতের ফোন অথবা কম্পিউটার থেকে পেতে পারে।
এবার আসি সাহিত্য পত্রিকার বিষয়ে। সাহিত্য পত্রিকা ছাপার হরফে নাকি ওয়েবে, কোনটা বেশি ভালো, এ নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেন। প্রত্যেক সাহিত্যিক এবং পাঠকের নিজস্ব পছন্দ ভিন্ন হতেই পারে। আমার মতে দুই মাধ্যমই সমান গুরুত্বপূর্ণ। যে পাঠক সাহিত্য পাঠ করতে চান তিনি ভালো সাহিত্য খুঁজে পড়েন। মাধ্যম যাই হোক না কেন। অনলাইন পত্রিকা দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে তার অনেকগুলো পজিটিভ কারণ তো আছেই। তবে এখানে আজ সে প্রসঙ্গ আনব না। সাহিত্য পত্রিকা যে মাধ্যমেই হোক তা পাঠকের কাছে সাহিত্য সম্ভার পৌঁছে দেবার উদ্দেশ্যেই প্রকাশিত হয়।
সব মাধ্যমের পত্রিকারই কিছু নিয়ম থাকে। ছাপা পত্রিকার নিয়ম সেই পত্রিকা কিনে অথবা কোনভাবে যোগাড় করে হাতে নিয়ে পাঠ করা। এখন বহু লেখক আছেন পত্রিকায় লেখা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে নিজের লেখাটি সোশাল মিডিয়ায় সবার পড়ার জন্য দিয়ে দেন। অনেক পাঠক আছেন যাঁরা এমন আবদারও করেন। পত্রিকা কিনে পড়ার কথা চিন্তাও করেন না। আবার অনলাইন পত্রিকাতে যেখানে ওয়েবসাইটের লিঙ্ক শেয়ার করার কথা এবং ওয়েবসাইটে গিয়ে সাহিত্য পাঠ করার কথা আর অত্যন্ত সহজ সেই পাঠ পদ্ধতি তবু অনেকেই নিজের লেখা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই পুরো লেখাটি উন্মুক্ত করে সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে দেন। ওয়েবসাইটে গিয়ে পড়াই যেখানে নিয়ম, তা পালন হয় না। সাহিত্যের প্রতি, সাহিত্য পত্রিকার প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা তো সমস্ত লেখক এবং পাঠকের থেকেই যায়। অবেক্ষণ পত্রিকার পক্ষ থেকে সকলকে এই বিষয়গুলো মেনে চলার অনুরোধ করব।
আজ ৭ই জুলাই, ২০২২, প্রকাশিত হল আষাঢ়, ১৪২৯ সংখ্যা। ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জন্মমাস আষাঢ়। সাহিত্য সম্রাটকে শ্রদ্ধা জানাতে এই সংখ্যাটি বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সংখ্যা হিসেবে নামাঙ্কিত করা হলো। যাঁদের সৃষ্টিতে এই সংখ্যার পাতা ভরে উঠেছে সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন জানাই। সকলে ভালো থাকুন, ভালোবেসে লিখুন ভালোবেসে পড়ুন। নমস্কার।

4 thoughts on “সম্পাদকীয়ঃ মন্দিরা গাঙ্গুলী

  1. অত্যন্ত প্রয়োজনীয় মূল্যবান সাবলীল সম্পাদকীয়। আশীর্বাদ অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।

  2. বাস্তবভিত্তিক আলোচনা।ভালো লাগলো।

  3. অসাধারণ সম্পাদনা। সকলকে শুভেচ্ছা , অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাই।

Leave a Reply to Soma Mukherjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *