বলো তাকে
ইন্দ্রাণী দত্ত পান্না
“তুমি ডালে আমি খালে/ দেখা হবে মরণ কালে”
নোটবুকে লাইন দুটো লিখতে লিখতে পিয়াল মনে মনে হাসল। এই ছ সাত মাসে এই নোটবুকে লেখা হয়েছে দুশো ছিয়াশিটা এমন সব কথা বার্তা। ব্যাপারটা শুরু হয়েছিল পাণিহাটি অটোস্ট্যান্ডে। কোন্নগর থেকে ফেরার পথে অটোর জন্য দাঁড়িয়ে ছিল সে। গঙ্গার ধারে বিকেলটা বেশ মনোরম। তখনই চলে যেতে ইচ্ছে করছিল না। সিগারেটে সুখটান দিতে দিতে হঠাৎ নজরে পড়ল একটা অটোর পেছনে লেখা “যে বোঝে সেই জানে জ্বালাটা”। বেশ অবাক হল পিয়াল। কীসের জ্বালা? এবার সে মন দিল কয়েকটা অটোতে। লিখে নেবার সেই শুরু। কত জায়গার অটো স্ট্যান্ডে সে দাঁড়িয়ে থেকেছে আর সাধারণ থেকে চমকপ্রদ সব রকমই লেখা টুকে নিয়েছে। “দেখবি আর লুচির মতো ফুলবি”, “দেখলে হবে খরচা আছে”, “সুখ স্বপনে শান্তি শ্মশানে” ইত্যাদি।
তার এই টৈ টৈ করাটা বাড়ির লোকের কাছে সময় আর পয়সা নষ্ট। আর যা দিনকাল কোথায় কী অঘটন হতে পারে। আজকাল লোকাল ট্রেনে গ্রামের দিকেও যাচ্ছে মাঝে মাঝে। বেশ কাটে সময়টা। ছুটির দিনে ওর এইটাই নেশা।
আজ এসেছে সোনারপুর মোড়ে অটোস্ট্যান্ডে এক এক করে অটো দেখতে দেখতে হঠাৎ লক্ষ্য করল লাইনে তনুশ্রী দাঁড়িয়ে আছে। খুব সেজেছে। চেহারাটা সামান্য রুক্ষ। পিয়ালের হাত কাঁপছে উত্তেজনায়। তাদের বিয়ের ঠিক চোদ্দ মাস পরে তনুশ্রী চলে গেছিল বিশ্বজিতের সাথে। কেন যে তাকে বিয়ে করেছিল সেটা আজও রহস্য। ওকে দেখে পিয়ালের বুকে মোচড় দিল। তা কি ভালবাসায় না কি আহত মনের বেদনায়? বিশ্বজিতের সাথেই যদি সম্পর্ক তাহলে পিয়ালকে বিয়েটা করেছিল কেন? পিয়ালের ভাবনার সুযোগে অটোটা ভরে গেছে, তনুশ্রী পিয়ালকে দেখতে পেয়েছে। কয়েক সেকেন্ড দেখলও। অটোটা ছেড়ে দিল। অভ্যাস বশত পিয়াল দেখল পেছনে লেখা “দেখা হলে বলে দিও আজও সে বেঁচে আছে।”
বাঃ বাঃ। চমৎকার ! সুন্দর গল্প।
লেখাটি পড়ে ভালো লাগল এবং একচোট হেসে ও নিলাম।
লেখককে ধন্যবাদ।