অণুগল্প নিয়ে দুয়েকটি কথা
অণুগল্পের আগমন অথবা বলা যায় অণুগল্প নামের সাহিত্যের এই ধারা বেশ কিছু বছর ধরেই চর্চার অঙ্গ হয়ে পড়েছে। সাহিত্যের আঙিনায় সত্যিই কি অণুগল্প জায়গা করে নিতে পারবে? এমন প্রশ্ন অনেক লেখক এবং পাঠকের মনে উঁকি দেয়। যখন ছোটগল্প লেখার চল সাহিত্যে এসেছিল তখনও এমন প্রশ্ন উঠেছিল, উপন্যাসের চাহিদার কাছে ছোটগল্প টিকবে তো? কিন্তু সময় মনে হয় সব কিছুর জবাব দেয়, ছোটগল্প সকলের কাছেই গ্রহণযোগ্য হয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছোটগল্পের বৈশিষ্ট্যকে একটা সূত্র আকারে বলে গেছেন, সে তো সকলের জানা। মোটামুটি তাকেই একটা গাইডলাইন মেনে অনেক লেখকই পরবর্তীতে ছোটগল্প লিখেছেন। অণুগল্প নিয়ে তেমন কোন সুস্পষ্ট গাইডলাইন যদিও এখনো কেউ সেভাবে বলেননি কিন্তু সাহিত্য চর্চায় অভ্যস্ত পাঠক ও লেখকের মনে অবশ্যই অণুগল্প নিয়ে একটা ধারণা ইতিমধ্যে তৈরি হয়ে গিয়েছে। আপাত ভাবে আকারে ছোট , মোটামুটি তিনশ শব্দের কাছাকাছি হলে তাকে অণুগল্প বিভাগে ফেলা যায়, এমনটাই দেখি। যেমন ছোট আকারের গল্প মানেই ছোটগল্প হয় না তেমনি, অণু চেহারার গল্পই কিন্তু অণুগল্প নয়। আমাকেও কয়েকজন অণুগল্প সম্পর্কে আমার ধারণা নিয়ে অনেক সময় প্রশ্ন করেছেন, তেমনই কিছু এখানে বলার চেষ্টা করছি । এমন নয় যে আমিই সঠিক। আরও কিছু বলার বা শোনার আছে। যদি আপনাদের মধ্যে কেউ এ নিয়ে আরও কিছু বলেন শুনে সমৃদ্ধ হওয়ার ইচ্ছে রইল।
বলাই বাহুল্য যে অণুগল্পকে সংজ্ঞায়িত করে এক শব্দসীমা যা ছোটগল্পে সেভাবে প্রযোজ্য নয়। একটা গল্পের কাছে প্রত্যাশা থাকে সম্পূর্ণতার সে বড় বা ছোট যাই হোক। হয়ত অণুগল্পের কাছে পাঠকের সে প্রত্যাশা নেই তবে এই নয় যে অনুভূতি যা সাহিত্যের উপজীব্য অসম্পূর্ণতা সেইখানে।
অণুগল্পের কাছে পাঠক প্রত্যাশা করে শব্দের কার্পন্য। কার্পন্যই এর বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্য। যা লিখতে চাওয়ার তা কীভাবে ন্যূনতম শব্দে প্রকাশ করা যায় সেই কৌশল অণুগল্পে আবশ্যিক। যে গল্প একশ শব্দে হতে পারে তা তিনশ শব্দে লিখলেও চলে বলে অকারণ শব্দসংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়া যায় না। তাহলে মোটামুটি এটাই দাঁড়ায় শব্দ নিয়ে যথেষ্ট ভাবনা চিন্তার জায়গা আছে অণুগল্পে।
যদি সাহিত্যগুণ থাকলে এক লাইনেও সার্থক কবিতা হয়ে ওঠা সম্ভব তেমন অত্যন্ত ছোট্ট আকারেরও অণুগল্প হতে পারে তাই আর কোন বিভাগের নাম নতুন করে না গজানোই সুখকর বলে আমার মনে হয়।
অণুগল্পের শেষে একটা চমক থাকতে পারে আবার নাও থাকতে পারে। চমক ছাড়াও সার্থক অণুগল্প হওয়া সম্ভব। কবিতা যেমন কোন অনুভূতিকে প্রকাশ করে, ব্যপ্ত করে, অনুরণন ঘটায় অণুগল্প সেভাবেই কোন মুহূর্তের অনুভবের প্রকাশ ঘটাতে পারে বিন্দুতে সিন্ধু দেখার মতো।
কারো কারো মতে ছোটগল্পকে আরও মেদহীন তন্বী করে অতিরিক্ত শব্দ বাতিল করলে অণুগল্প হতে পারে। বনফুলের লেখা ছোট আকারের গল্পগুলিকে অণুগল্প ধরে নেওয়া যায় । “নিম গাছ” গল্পে লেখক নিমগাছের সঙ্গে তুলনা করে “গৃহকর্মে নিপুনা লক্ষ্মী বউটার এই দশা” বলেছেন। রূপকের সাহায্যে বক্তব্যকে ফুটিয়ে তোলা এমনটায় কবিতার সঙ্গে অনেক মিল পাই অণুগল্পে।
মতানৈক্য রয়েছে আর তা সব বিষয়েই থাকে। তবু, অণুগল্প স্বীয় সাহিত্যমূল্যে পাঠক সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত, এমন বলাই যায়।
লিখছি অবেক্ষণ পত্রিকার জৈষ্ঠ্যমাসের নিয়মিত মাসিক সংখ্যার সম্পাদকীয়। ১১ ই জৈষ্ঠ্য কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন ছিল, পত্রিকার সমস্ত লেখক এবং পাঠকের পক্ষ থেকে কবিকে শ্রদ্ধা জানাই। কবি যতীন্দ্র প্রসাদ ভট্টাচার্যের জন্মদিন ১৪ই জৈষ্ঠ্য। পারিবারিক সূত্রে জেনেছি নজরুল ইসলামের সঙ্গে কবি যতীন্দ্র প্রসাদের সুসম্পর্কের কথা। কাজী নজরুল ইসলাম কবি যতীন্দ্র প্রসাদকে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করতেন। উভয়কেই শ্রদ্ধা জানাতে জৈষ্ঠ্যমাসের এই সংখ্যাটি ‘যতীন্দ্র নজরুল সংখ্যা’ নামে প্রকাশিত করা হল।
আমাদের অনলাইন পত্রিকা সহজেই লিঙ্ক ছুঁয়ে পড়া যায়। সকলের লেখা পড়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত দিন। নিজে পড়ার পাশাপাশি অপরকে পড়ানোর জন্য শেয়ার করুন। সকলে ভালো থাকুন, পত্রিকার সঙ্গে থাকুন। ভালোবেসে পড়ুন ভালোবেসে লিখুন। নমস্কার।

একটা কথা আমার মনে হয়, হয়তো আপনিও একমত হবেন যে অনুগল্প বা ছোট গল্পে শেষের চমক থাকতেই হবে এমন কোনো বাধ্য বাধকতা নেই। অনেক সময়েই আবেগ বা মূল্যবোধ দিয়ে “শেষের চমক”এর অভাব পুরণ করা যায় ।
ধন্যবাদ
অনুগল্প নিয়ে যথাযথ মূল্যায়ন হয়েছে সম্পাদকীয়তে। অভিনন্দন মন্দিরা গাঙ্গুলিকে। যতীন্দ্র নজরুল সংখ্যা আশাকরি সকলের খুব ভাল লাগবে।
ধন্যবাদ
পড়ে সমৃদ্ধ হলাম। এমন সম্পাদকীয়ের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
সম্পাদকীয়তে ‘অনুগল্প’ নিয়ে যে মতামত ব্যক্ত করা হয়েছে তা যথাযথ। আপনার পত্রিকার সমৃদ্ধি কামনা করি। কানাই হালদার।
ধন্যবাদ
খুব সুন্দর সম্পাদকীয়। দারুণ লাগলো। একটি গল্পকে যথাযথ ( একশো-তিনশো) শব্দে পাঠকের কাছে তুলে ধরা অণুগল্প লেখার মান সুন্দর করে তুলতে পারে।
ধন্যবাদ