বাসস্থান
সোমা চক্রবর্তী
মানুষ সহ একটি অতি আধুনিক স্পেসশিপ এসে নামল ‘ট্র্যাপিস্ট ওয়ান’ সিস্টেমের সিগমা থ্রী গ্রহের ‘ট্যুইলাইট যোন’টিতে নতুন বসতি স্থাপনের জন্য। পৃথিবী ধ্বংসের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে, তাই যারা পেরেছে পৃথিবী ছেড়ে চলে এসেছে, মহাকাশে নতুন উপনিবেশ গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে।
গ্রহটির আকার পৃথিবীর থেকে একটু ছোট এবং গ্রহটি সম্পূর্ণ ভাবে টাইডালি লকড। মাঝখানের কিছুটা জায়গা তাই দিনরাত সবসময় সন্ধ্যার মতো আবছা অন্ধকার হয়ে থাকে। না আলো না অন্ধকার। বসবাসের জন্য মাঝখানের এই জায়গাটুকুই কেবলমাত্র প্রশস্ত। কারণ, এই স্থানটি ছাড়া বাকি গ্রহের একটা দিক সম্পূর্ণ বরফাবৃত। সেখানে অপরিসীম ঠান্ডা। আর একদিকে ধূধূ মরুভূমির প্রচন্ড উষ্ণতা। মানুষের বসবাসের উপযোগী তো দূরের কথা, গাছপালা, পশুপাখি এমনকি পোকামাকড় পর্যন্ত থাকতে পারবে না সেখানে।
দলের মধ্যের সর্বাপেক্ষা তরুণ দুজন বিজ্ঞানী নীচে নেমে গেলো চূড়ান্ত পর্যায়ের পর্যবেক্ষণের জন্য। ভেতরে বাকি দলটি অনিশ্চিত অপেক্ষায় মুহূর্ত গুনছে। স্পেসশিপের ভেতর থেকে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে দলের দুজন বয়স্ক বিজ্ঞানী। গভীর উদ্বেগের সঙ্গে তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে,
- বাড়িঘর গড়ে তুলতে হবে।
- চাষের উপযোগী করে তুলতে হবে মাটি।
- চিকিৎসাকেন্দ্র, কল-কারখানা, গবেষণাগার সব নতুন করে তৈরী করতে হবে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রেডিও কন্ট্রোলের সিগন্যাল শোনা গেলো। পরক্ষণেই শোনা গেল দুটি উৎকন্ঠিত গলার স্বর, - চৌম্বকক্ষেত্র অতিরিক্ত শক্তিশালী।
- বাতাসে পৃথিবীর চেয়ে অক্সিজেন অনেক কম।
- অভিকর্ষ বল পৃথিবীর চেয়ে কম।
- দিনের তাপমাত্রা পৃথিবীর চেয়ে বেশী।
- বায়ুমন্ডলের ওপরে ওজোন স্তর নেই। ইউ-ভি রশ্মি অত্যন্ত বেশী।
কিছুক্ষণের নীরবতা। অতঃপর দলের স্পিয়ারহেড কে ‘সেকেন্ড ইন কম্যান্ড’ জিজ্ঞেস করল, - তাহলে নামার প্রস্তুতি কি শুরু করবো ?
- অবশ্যই।
- এত অসুবিধা নিয়ে পৃথিবীর মানুষ কি পারবে এখানে থাকতে?
- এখানেই পারবে। আর এইবার নিজের বাসস্থানকে যত্ন করতে শিখবে!