অণুগল্পঃ ভাঙন – শংখ ভট্টাচার্য (বরাহনগর, কলকাতা)

ভাঙন
শংখ ভট্টাচার্য

রাতের খাবার খেয়ে উঠে রমা বাসন মেজে এসে ঘর মুছ্ছেন। ছেলে সুমন শুয়ে পড়েছে আগেই। ও আবার শুলেই ঘুমিয়ে পড়ে। সারাদিন পড়াশোনা আর খেলাধুলো করে শরীরটা ক্লান্তই থাকে। ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকা চুলটা নখ দিয়ে তোলবার চেষ্টা করে রমা।
— নাঃ, এতো চুল নয়! তবে? ফাটল! চমকে উঠে, ছুটে ঘর থেকে বেড়িয়ে গিয়ে চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে থাকে। ভাঙ..ন, ভা..ঙ..ন।
রমা তাড়াতাড়ি করে একটা বাক্সে যা নিতে পারা যায় নিয়ে নিতে থাকেন, আর সমানে ডাকতে থাকেন ..
— সুমন উঠে পড়, উঠে পড় বাবা, বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে।
সবার অলক্ষে ফাটল চওড়া হতে থাকে। হঠাৎ ঘুমন্ত সুমন সহ বাড়ির দক্ষিণ অংশ তলিয়ে গেল। রমা হতবাক!
অন্ধকার, নিকশ কালো রজনীতে বাঁধ ভেঙে ধেয়ে আসা জলের গর্জন। হাজার হাজার মানুষের সব হারানোর যন্ত্রণার সাথে মিশেছে স্বজন হারানোর করুণ কান্না। বাঁচার তাগিদে দিশেহারা হ’য়ে ছুটছে মানুষ বিপুল জলস্রোতের মধ্যে দিয়ে। ওপর থেকে বৃষ্টি ধারারও বিরাম নেই। গবাদি পশুরা যে যেদিকে পেরেছে ছুটতে গিয়ে জলের তোরে ভেসে গিয়েছে।
— চলুন বৌদি, চলুন… পাশের বাড়ির কমল আর তার বৌ কেয়া রমার হাত ধরে টানতে টানতে বেড়িয়ে গেল। চারিদিকে আর্তনাদ। কোমর সমান জল ভেঙে রাস্তায় উঠল ওরা। রাস্তায় হাজার হাজার লোক। দামোদরের জলে ভাসিয়ে নিয়ে গিয়েছে ঘর-বাড়ি, জমি-জমা, গবাদি পশু-পাখি সব। সাত বছর আগে এমনই এক প্লাবনে সুবল দাস জলের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল। তখন সুমনের বয়স মাত্র দশ। রমা সেবারও ছেলের হাত ধরে রাস্তায় উঠে এসেছিল সাঁতরে। সুবল গরুটাকে নিয়ে আসতে পারে নি। ছেলেকে বাঁচাতে স্বামীকে হারানোর ব্যাথা ভুলেছে রমা। কিন্তু আজ…
— হঠাৎ রমা চিৎকার করে ছুটতে থাকে, সু..ম..ন, সুমন রররে, আমি যাচ্ছি বাবা….
— যাবেন না রমা বৌদি, বিপদ হবে।
— দেখ, রমা বৌদি যে চলে যাচ্ছে ….
— চলে এস কেয়া, কিছু করার নেই, আমাদের তো বাঁচতে হবে না কি!
বাঁধভাঙা জলের তোরে ভাসিয়ে নিয়ে গেল রমাকে।

5 thoughts on “অণুগল্পঃ ভাঙন – শংখ ভট্টাচার্য (বরাহনগর, কলকাতা)

  1. এমন ঘটনা মর্মান্তিক। তবু ঘটে চলেছে আজও….

Leave a Reply to ভূমিকা গোস্বামী Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *