অণুগল্পঃ সম্ভাব্য স্ক্রীপ্ট – বাসব রায়

সম্ভাব্য স্ক্রীপ্ট
বাসব রায়

আজ সাতসকালে কী একটি বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে গিন্নীর তেতো কথায় মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল ৷ ভাবলাম রসাতলে গেলো সারাদিনের ভালো থাকাটা ৷ এমনটি প্রায়ই ঘটে আর সেটা সকাল দুপুর সন্ধ্যা মেনে আসে না ৷ বলাইবাহুল্য এসব খুটখাট না হলে আবার জীবনটাও চলে না ৷ বড় বিচিত্র মন আমাদের আর তারচে’ বড় বিচিত্র এ সংসারজীবন ৷ ওহ্ হ্যাঁ মনে পড়েছে ঘটনাটা -; কথায় কথায় বলছিলাম পাশের বাড়ির মালতী বৌদি দাদার সাথে মারমার-কাটকাট ঝগড়ার পরেও দুজনেই হাসতে হাসতে বাইকে চড়ে অফিসে যায় আর সেটা দেখেও মনপ্রাণ জুড়ে যায় ৷ ব্যাস্ , গিন্নীর দাপুটে এবং সচিৎকার নিয়মিত মুখস্থ সংলাপ ” তা যাও , যাওনা কেনো ঐ সুন্দরী মালতী বউদির কাছে ! কে দিব্যি দিয়েছে এখানে থাকতে , আমি জানিতো এসবই হচ্ছে , আমার মন যেটা বলে সেটাই হয় এবং ঘটে ৷” কী কথায় কি কথা -! আমি একটু আতঙ্কিত হয়ে বলি যে “একটু আস্তে বলো , পাশের ঘরে ছেলেমেয়েরা আছে তো -৷”
কঠোর জবাব ততোধিক চিৎকারে ,” শুনুক তোমার ছেলেমেয়েরাও , ওদেরও শোনার দরকার আছে , ওদেরও জানাটা উচিত ওদের বাপের চরিত্র কেমন —-” ইত্যাদি ইত্যাদি ৷

ভাবলাম আর পারার উপায় নেই ৷ পাশের ঘর থেকে ছোট মেয়ে বলছে ,”কী হয়েছে বাবা ! তুমি সাতসকালে মাকে এভাবে চটাও কেনো -?” সকল দোষে দোষী হয়ে কোনমতে আধময়লা গেঞ্জিটা গায়ে দিয়ে বের হয়ে গেলাম খালেকের চায়ের দোকানের দিকে তবে কানে এলো উনি তখনও বলছেন , ” বুড়ো ঢ্যামনা , আর ক’দিন পর শ্মশানে যাবে তবুও কুদৃষ্টিগুলো গেলো না ৷ এখন আবার বাইরের বাতাস গায়ে লাগাতে খালেকের দোকানে যাওয়া হচ্ছে ৷ বাড়িতে এটদণ্ডও মন টিকে না , টিকবে কী ; ঐ হতচ্ছাড়িগুলো যতো রঙঢঙ করে বেরাচ্ছে তাতে কী আর পুরুষেরা ঠিক থাকতে পারে ? ” যাক বাবা কিছুটা হলেও মোড়টা ঘুরেছে অন্যদিকে ৷ যতোই স্বামীদেরকে দায়ী করুক না কেনো অবশেষে স্বামীরা যে ভালোই হয় এটা জেনে কিছুটা স্বস্তি নিয়ে খালেকের দোকানে গিয়ে এককাপ চায়ের অর্ডার দিয়ে বাইরের বেঞ্চেই বসলাম ৷ তল মাথা হয়ে এসবই ভাবছি ৷ এমন সময় সুললিত কণ্ঠে কোনো একজনের কথা আমার উদ্দেশ্যেই শুনলাম ,” যাক দাদা বেশিদূর যাননি তাহলে , এইতো বাসার কাছেই আছেন দেখছি আর ওদিকে বৌদিতো আপনার চিতা জ্বালালো বলে ৷” দেখলাম, বছরখানেক হবে কালু হারামজাদার বিধবা যুবতী বউটি বছর দুয়েকের বাচ্চা কোলে নিয়ে বেশ জোরেই বলছে , ” দাদা আপনার বাড়িতে গিয়েছিলাম আপনার খোঁজেই , ওর বাবার থেকে আপনার নেয়া ধারের দু’হাজার টাকাটা হিসেবের খাতায় স্পষ্ট লেখা, আজ প্রায় দেড় বছর ফেরত দেননি ৷ আমার খুব টাকার দরকার দাদা —–৷” এই সেরেছে , মনে মনে প্রমাদ গুনলাম ৷ বললাম , “তো বাড়িতে তোমার বৌদিকে গিয়ে কী বলে এলে শুনি ?” “বৌদির রাগ দেখে সত্যিটা আর বলতে পারিনি দাদা , তাই বলে এলাম ক’দিন থেকে একটা দরকারে দাদাকে খুঁজছিলাম ৷ দাদা খুব ভালো মানুষ ৷ সেদিন বটতলী থেকে একসাথেই অটোতে এলাম , দাদা আমার ভাড়ার টাকাটা অটোওয়ালাকে দিতেই দিলেন না ————!” আমি পরিষ্কার আলোকিত সকালবেলা চারপাশেই ঘোর অন্ধকার দেখতে লাগলাম ৷ যাহোক , কালুর বউকে বললাম সামনের মাসে পেয়ে যাবে সমস্যা নেই ৷

অতঃপর , বাসায় ফিরে কী কি সব ঘটনাবলী আমার ওপর ঘটতে পারে এরই একটা সম্ভাব্য স্ক্রীপ্ট নিয়ে ভাবতে লাগলাম ৷

4 thoughts on “অণুগল্পঃ সম্ভাব্য স্ক্রীপ্ট – বাসব রায়

Leave a Reply to Debashis Roy Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *