অণুগল্পঃ বর্ণময় – মলয় চৌধুরী

বর্ণময়
মলয় চৌধুরী

আজ দোল । মানসবাবু সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পড়ে আবির আর মিষ্টির প্যাকেট নিয়ে সকাল বেলা আবাসনের গেটে বসে আছেন । প্রতি বছরই তিনি এমনটা করেন , সবাই জানে । যে লোকই সামনে দিয়ে যাচ্ছে – কাজের লোক, মাছওলা,কাগজওলা, প্রতিবেশী- সবাইকে তিনি আবির মাখিয়ে হাতে মিষ্টি ধরিয়ে দিচ্ছেন । কেউ কেউ রঙ মেখে ওনার সাথে সেলফিও তুলছে ।
একটু বেলা বাড়লে আবাসনের বাচ্চারা এসে মানসবাবুকে ঘিরে ধরলো। আবিরের রঙে আর কচি কচি গলার কলতানে রঙীন , প্রাণবন্ত হয়ে উঠলো আবাসন।এই টুকুই তো পরম পাওয়া ।
একদম শেষে ভীড় জমলো সিনিয়র সিটিজেনদের। হই হই করে চললো রঙের উৎসব । আজ আর কারুর সুগার, প্রেসারের সমস্যা মাথায় থাকবে না । সবাই ফিরে যাবেন তারুণ্যের উচ্ছল দিনগুলোতে ।
একটা দুই কামরার ফ্ল্যাটে মানসবাবু আপাতত একাই থাকেন । সরকারি চাকরি থেকে বছর দুই হল অবসর গ্রহণ করেছেন । ছেলের ডাক্তারির পোস্টগ্র্যাজুয়েট চলছে । মেয়েরও ডাক্তারি পড়ার সেকেন্ড ইয়ার । বছর আষ্টেক আগে ওনার স্ত্রী চলে গেছেন। সেই থেকে ছেলেমেয়ে দুটিকে একাই দেখভাল করেছেন । নিজের প্রাণ শক্তিকে কখনো দুর্বল হতে দেন নি। সবাইকে বলেন – আমার দুটি রঙীন স্বপ্ন আছে ,ওরাই আমার জীবন ।
মানসবাবু অত্যন্ত বন্ধু বৎসল মিশুকে মানুষ ।
আবাসনের প্রতিবেশীরা তাঁকে কখনো নিঃসঙ্গতার যন্ত্রণা বুঝতে দেয়নি । ছেলে মেয়ে দুটিকে তারা আবাসনের সম্পদ বলে মনে করে ।
এবার দোলে ছেলে মেয়ে কেউই আসতে পারেনি । তবে ফোনে বার বার তারা বলেছে তিনি যেন প্রতিবেশী বন্ধুদের নিয়ে রঙের উৎসবে প্রতি বছরের মতো আনন্দ করেন ।
রঙ মেখে এক বুক আনন্দ নিয়ে মানসবাবু ঘরে ঢুকলেন । প্রস্তুত হতে হবে। দুপুরে সুবীরবাবুর ঘরে নিমন্ত্রণ । রাতে আবার আবাসনের সব সিনিয়রদের তাঁর ঘরে নিমন্ত্রণ করেছেন । রান্নার মেয়েটি সব ব্যবস্থা করে দেবে । ছেলে মেয়েকে রঙ খেলা থেকে শুরু করে রাতে খাওয়ার অনুষ্ঠানের সব ছবি পাঠাতে হবে।
নিমন্ত্রণে বেরনোর আগে মানসবাবু তাঁর অদৃশ্য দেবতার উদ্দেশ্যে প্রণাম জানালেন এত সুন্দর বর্ণময় জীবন দেবার জন্য ।

5 thoughts on “অণুগল্পঃ বর্ণময় – মলয় চৌধুরী

  1. বাহ্,অসম্ভব প্রাণবন্ত লেখা। ধন্যবাদ লেখককে।

    1. প্রানবন্ত লেখা 🙏 শ্রদ্ধা জানাই 🙏

  2. বাঃ। আনন্দকে সব বয়সে সবসময় জীবনে ধরে রাখার আর্ট জানতে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *