আকাশের চাঁদ তুমি পূর্ণ ইন্দু (পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য স্মরণে ) – চন্দন আচার্য

আকাশের চাঁদ তুমি পূর্ণ ইন্দু (পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য স্মরণে )
লেখক : চন্দন আচার্য

পূর্ণেন্দু । এই নামটির অর্থ অনেকেরই জানা । পূর্ণ ইন্দু । অর্থাৎ পূর্ণচাঁদ । আরেকটু বললে পূর্ণিমার চাঁদ ।
হ‍্যাঁ । আমার জীবনে পূর্ণ চাদেঁর প্রভাব কতখানি তার একমাত্র সাক্ষী আমি স্বয়ং । মনের অমাবস্যাকে দূর করে ধীরে ধীরে আলোর বর্তিকা জ্বেলে পূর্ণচন্দ্র রূপে তিনি বিরাজমান ।
তিনি হলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী । গবেষক । প্রাবন্ধিক । কবি ও কথা সাহিত্যিক পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য । পিতা কবি যতীন্দ্র প্রসাদ ভট্টাচার্য । মা হেমপ্রভা দেবী ।
পূর্ণেন্দু প্রসাদের প্রসাদ লাভ করি বালক বয়সে । যখন আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র । নানা গল্পকথায় ধীরে ধীরে এক বালকের মনে প্রবেশ করালেন মহাকালের রস । সাহিত্যস্পৃহা । কাঁচা হাতের কবিতার বাহবা কুড়োনো সেই বালক সদ‍্য কৈশোরে গ্রন্থপ্রকাশের ছাড়পত্র পায় । উৎসাহিত করলেন আমাকে । সেই সুবাদে সর্বভারতীয় সাহিত্য সম্মেলনে ডাক পাই । পূর্ণেন্দু প্রসাদের সর্বভারতীয় সাহিত্য সভায়(১৯৮৫) সভাপতিত্ব চোখের সামনে ছায়াছবির মতো দেখতে থাকলাম । ভারতীয় সাহিত‍্যে তাঁর অমিত জ্ঞান সেদিন বর্ষিত হয়েছিল তিন শতাধিক সাহিত্য রসপিপাসুর মধ্যে । হায়দ্রাবাদে । এরপর ১৯৮৯ সালে বেঙ্গলুরু সর্বভারতীয় সাহিত্য সম্মেলনেও দেখেছি তাঁর সভাপতিত্বের পারদর্শিতা । এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের হাতের স্পর্শছোঁয়া বঙ্গসাহিত‍্য সম্মেলনেরও কার্যনির্বাহী সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন ।
লক ডাউনের কিছু আগে সম্ভবত ২০১৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ(প্রাক্তনী) আয়োজিত এক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় পৌরোহিত‍্য করেন পূর্ণেন্দু প্রসাদ । এই অনুষ্ঠানে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও কবি শঙ্খ ঘোষের হাতে তুলে দেন সাম্মানিক মানপত্র ।

শুনেছি বিভূতিভূষণ , তারাশঙ্কর ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ছিল পূর্ণেন্দুর যোগাযোগ । তাঁরা স্নেহ করতেন পূর্ণেন্দুকে ।

একসময়ের বন্ধু কবি বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজ খরচে পূর্ণেন্দুর প্রথম কবিতার বই প্রকাশ করেন চারের দশকে ১৯৪৬ সালে । যে বইয়ের ভূমিকা লেখেন বিনয় ঘোষ ।
‘জীবনানন্দ স্মৃতি’ , ‘সুকান্ত স্মৃতি’ প্রভৃতি গ্রন্থে প্রাবন্ধিকের নির্মোহ দৃষ্টিতে স্মৃতি রোমন্থন করতে দেখেছি পূর্ণেন্দু প্রসাদকে । পূর্ণেন্দু প্রসাদ জীবনানন্দকে কাছ থেকে দেখেছেন । কবিতার ব‍্যাখ‍্যা করেছেন নিজস্ব আলোকে । আর সুকান্ত ভট্টাচার্য , যাঁকে নিজের ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন । সেই সুকান্তের কাব্য প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেছিলেন । জনান্তিকে কবি সুকান্তের সঙ্গে কথোপকথন , কবিতাপাঠ , কিংবা সমালোচনা ইত্যাদি বিষয় ‘সুকান্ত স্মৃতি’র পাতায় ছায়াছবির মতো মুদ্রিত ।

আমার ছড়ার বই “১০১ ভূতুরে ছড়া” তুলে দিলাম ১০১ বর্ষীয় শ্রী পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্যের হাতে। মার্চ, ২০২১।

সম্প্রতি আমার একটি ছড়ার বই প্রকাশ পায় । ওঁকে উপহার দিই । আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করেন । আর আশীর্বাদ করে বললেন , বড় হও । অবুঝের মতো প্রশ্ন করে বসলাম । বললাম কীভাবে ?
১০১ বর্ষীয় স্মিত হেসে বললেন , ‘প্রথমার চাঁদ যেমন দ্বিতীয়ায় পৌঁছয় । তারপর তৃতীয়া । এভাবেই পরপর ষোলোকলায় … ঠিক সেভাবেই পূর্ণচন্দ্র হয়ে বিরাজ কর ।’

গায়ে কাঁটা দেয় । মানুষটি নেই । কিন্তু তাঁর স্মৃতির ভার আজীবন আমার চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকুক । অধমের এইটুকু আশা ।

4 thoughts on “আকাশের চাঁদ তুমি পূর্ণ ইন্দু (পূর্ণেন্দু প্রসাদ ভট্টাচার্য স্মরণে ) – চন্দন আচার্য

  1. প্রিয় চন্দন আচার্য, তোমার আন্তরিক বিশ্লেষণ আমায় মুগ্ধ করেছে। বুঝলাম একাধিক উ্ল্লিখিত অনুষ্ঠানে আমরা উপস্থিত থেকেও কেউ কাউকে চিনতে পারিনি। ভালো থেকো।

Leave a Reply to Anindya Goswami Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *